এলএনজি গ্যাস। ছবি: সংগৃহীত
৬ নভেম্বর ২০১৮, মঙ্গলবার, ২:১৯

চট্টগ্রামে এলএনজি সরবরাহ বন্ধ, তীব্র গ্যাস সংকট

মহেশখালীতে এলএনজি সরবরাহ ব্যবস্থায় ত্রুটি দেখা দেয়ায় শনিবার সন্ধ্যা থেকে চট্টগ্রামে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ফলে দেখা দিয়েছে তীব্র গ্যাস সংকট।
২ দিন ধরে চট্টগ্রামের সব ধরনের গ্রাহক চাহিদামতো গ্যাস পাচ্ছেন না। সংকট সৃষ্টি হওয়ায় গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) কর্তৃপক্ষ।
এতে কমে গেছে স্থানীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন। বন্ধ হয়ে গেছে চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার সার কারখানা (সিইউএফএল)। একই সঙ্গে নতুন গ্যাস সংযোগ পাওয়া ২শ’র বেশি শিল্প কারখানা ও সিএনজি স্টেশনে গ্যাসের চাপ কমে গেছে।

ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে ৩৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পেয়ে আসছিল কেজিডিসিএল। তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আগের মতো জাতীয় গ্রিডনির্ভর হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এখন শুধু গ্রিড থেকে পাওয়া গ্যাসই সরবরাহ করা হচ্ছে গ্রাহকের কাছে।
গ্যাস সরবরাহ প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট থেকে ২০০ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে এসেছে।
চট্টগ্রামের এ সংকট মেটাতে জ্বালানি বিভাগ জাতীয় গ্রিড থেকে ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস চট্টগ্রামে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, এমনিতেই ঢাকায় গ্যাস সংকট তীব্র। তারপর জাতীয় গ্রিড থেকে ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস চট্টগ্রাম চলে গেলে ঢাকায় শিল্প-কারখানাগুলোতে আরও বেশি সংকট দেখা দিতে পারে।

এলএনজি সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল)। প্রতিষ্ঠানটি সরবরাহ ব্যবস্থায় দেখা দেয়া ত্রুটি সারানোর চেষ্টা করলেও কবে নাগাদ এলএনজি সরবরাহ দেয়া সম্ভব হবে নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না এর কর্মকর্তারা।
আরপিজিসিএল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যে ভাসমান জাহাজ থেকে (ফ্লোটিং স্টোরেজ রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট) এলএনজি সরবরাহ দেয়া হচ্ছিল তার নিচে থাকা ইমার্জেন্সি শাটডাউন ভাল্বে ত্রুটি দেখা দিয়েছে। ভাল্বটির অবস্থান সাগরের নিচে হওয়ায় ত্রুটি সারাতে আরও কয়েক দিন সময় লাগতে পারে।
কেজিডিসিএলের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী খায়েজ আহমেদ মজুমদার সোমবার যুগান্তরকে বলেন, জাতীয় গ্রিড ও এলএনজি টার্মিনাল থেকে আমরা ৩৮০-৩৯০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পেতাম। এর মধ্যে এলএনজি টার্মিনাল থেকে পাওয়া যেত ৩২০-৩৩০ মিলিয়ন ঘনফুট।
শনিবার সন্ধ্যা থেকে এলএনজি সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এখন আমরা জাতীয় গ্রিড থেকে পাওয়া ২০০-২২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস গ্রাহকদের কাছে সরবরাহ করছি। এলএনজি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংকট দেখা দিয়েছে।

তিনি জানান, সংকটের কারণে চট্টগ্রামের গ্যাসনির্ভর সব বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া সিইউএফএলকেও গ্যাস দেয়া যাচ্ছে না। এ কেন্দ্রটি উৎপাদনে ছিল। গ্যাসের অভাবে এটা এখন বন্ধ হয়ে গেছে। সার কারখানার মধ্যে শুধু কর্ণফুলী ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানিকে (কাফকো) গ্যাস দেয়া হচ্ছে।

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর চলতি বছরের আগস্টের মাঝামাঝি মহশেখালীতে স্থাপিত ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে আমদানিকৃত গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়। কেজিডিসিএলের পাইপলাইনে নতুন গ্যাস যুক্ত হওয়ায় চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন চলা গ্যাস সংকট কিছুটা কমে আসে।
এখন আবার এলএনজি সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ায় সংকট তীব্র হয়েছে। আরপিজিসিএলের জিএম (এলএনজি) মো. রফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘যে জাহাজ থেকে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছিল তার নিচে সাগরে পানির মধ্যে ভাল্বসহ কিছু যন্ত্রপাতি রয়েছে।
এর মধ্যে একটি ইমার্জেন্সি শাটডাউন ভাল্বে সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেখানে পানির গভীরতা ৩০-৩৫ মিটার। মেরামতের চেষ্টা চলছে। পানির নিচে হওয়ায় এখানে যেতে ডুবুরি প্রয়োজন হবে। তাই মেরামতে কিছুটা সময় লাগবে। সমস্যার কারণে পাইপলাইনে এলএনজি সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।’
এদিকে কেজিডিসিএলের পাইপলাইনে সরবরাহ কমে যাওয়ায় শিল্প-কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আবাসিক গ্রাহকরাও গ্যাস সংকটে পড়েছেন। গত ২ দিন ধরে চুলা জ্বলছে না নগরীর অনেক এলাকায়। ফলে নগরবাসী পড়েছেন চরম দুর্ভোগে।

এলএনজি সরবরাহের পর রাউজান তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিট ও শিকলবাহা ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ দেয়া হয়েছিল। এ দুটি কারখানায় এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। এখান থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছিল।
এখন এ বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। উৎপাদন কমে যাওয়ায় নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের লোডশেডিং বেড়েছে। এদিকে চলতি মাসের মাঝামাঝি জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ শুরু করার কথা। পেট্রোবাংলা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে পাইপলাইন নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে।
চলতি মাসের মাঝামাঝি ২০০ থেকে ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি ঢাকার লাইনে (জাতীয় গ্রিড) সরবরাহ শুরু করবে। এক্ষেত্রে নতুন সংযোগ পাওয়া ৫০০ শিল্প-কারখানায় গ্যাস সংযোগ দেয়া যেতে পারে। এজন্য কাজ শুরু করছে পেট্রোবাংলা কর্তৃপক্ষ।
পাশাপাশি যেসব শিল্প-কারখানায় গ্যাস বিতরণ নেটওয়ার্ক নেই সেসব শিল্প-কারখানাকে গ্যাস বিতরণ নেটওয়ার্ক নির্মাণের জন্য শিগগিরই অনুমোদন দেয়া হবে। বর্তমানে এ সংক্রান্ত ফাইলটি প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরীর টেবিলে আছে। আজকালের মধ্যেই ফাইলটি পেট্রোবাংলায় পাঠানোর কথা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

 

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/108738