৬ নভেম্বর ২০১৮, মঙ্গলবার, ২:১৭

বিনিয়োগের শর্তে করছাড় পেলেন ডিএসই ব্রোকারেরা

২২ মাসে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন অবস্থানে ডিএসই সূচক

পতন থামছে না পুঁজিবাজার সূচকের। গতকাল নিয়ে টানা তিন দিন সূচক হারাল দেশের দুই পুঁজিবাজার। আর এতে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গতকাল নেমে আসে ৫ হাজার ২২৪ দশমিক ৯৪ পয়েন্টে। এটি গত ২২ মাসের মধ্যে ডিএসই সূচকের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। এর আগে গত মাসে একবার ৫ হাজার ২১২ পয়েন্টে নেমেছিল সূচকটি। পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যে আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে তা বাজার সূচকের পতন ঘটাচ্ছে।
অন্যান্য দিনের মতো গতকালও সূচকের উন্নতি দিয়ে দিন শুরু করা পুঁজিবাজারগুলো মাত্র পৌনে এক ঘণ্টার মাথায় বিক্রয়চাপের শিকার হয়। দিনের শুরুতে বেশির ভাগ কোম্পানি মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় থাকলেও বিক্রয়চাপের ফলে তা ধরে রাখতে পারেনি কোম্পানিগুলো। বেলা বাড়ার সাথে সাথে এ চাপ আরো বৃদ্ধি পাওয়ায় দিনের বাকি সময় আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। দিনশেষে লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ কোম্পানিই দরপতনের শিকার হয়।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গতকাল ১৪ দশমিক ০৪ পয়েন্ট হ্রাস পায়। ৫ হাজার ২৩৮ দশমিক ৯৮ পয়েন্ট থেকে দিন শুরু করা সূচকটি সোমবার দিনশেষে নেমে আসে ৫ হাজার ২২৪ দশমিক ৯৪ পয়েন্টে। একই সময় ডিএসই ৩০ ও ডিএসই শরিয়াহ সূচকের অবনতি ঘটে যথাক্রমে ৪ দশমিক ৪১ ও ৬ দশমিক ৬৬ পয়েন্ট। দেশের দ্বিতীয় পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক ও সিএসসিএক্স সূচকের অবনতি ঘটে যথাক্রমে ৫৭ দশমিক ৭১ ও ৩৫ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট। এখানে সিএসই ৫০ ও সিএসই শরিয়াহ সূচক হারায় যথাক্রমে ৪ দশমিক ৮২ ও ৭ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট।

এ দিকে ছয়টি শর্ত পরিপালন সাপেক্ষে চীনা কনসোর্টিয়ামের কাছে কৌশলগত শেয়ার বিক্রির মূলধনী মুনাফায় ১০ শতাংশ করছাড় পেয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো (ব্রোকার হাউজ)। শর্তানুসারে, সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে সমুদয় অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে তাদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায় ১ নভেম্বরের গেজেটে বলা হয়েছে, ১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে চীনা কনসোর্টিয়ামের কাছে ডিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে এর শেয়ারহোল্ডারদের (ডিএসইর সদস্য ব্রোকারেজ হাউজগুলোর) পাওয়া মূলধনী মুনাফার ওপর আরোপযোগ্য করহার ৫ শতাংশ নির্ধারণ করল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে এজন্য তাদের নি¤œলিখিত শর্তগুলো মানতে হবে।

প্রথম শর্তে বলা হয়েছে, ডিএসইর শেয়ারহোল্ডার ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে অবশ্যই এ মূলধনী মুনাফার পুরো অর্থ দেশের স্টক এক্সচেঞ্জগুলোয় তালিকাভুক্ত কোনো সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করতে হবে। দ্বিতীয় শর্ত, এজন্য সব ব্রোকারকে একটি আলাদা ব্যাংক হিসাব ও বিও হিসাব খুলতে হবে এবং কৌশলগত শেয়ার থেকে পাওয়া পুরো অর্থ সেই ব্যাংক হিসাবে জমা করতে হবে। তৃতীয় শর্তে বলা হয়েছে, ব্যাংক হিসাবটিতে টাকা জমা হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে পুরো তহবিল পৃথক বিও হিসাবের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে হবে। চতুর্থ শর্ত. বিনিয়োগের তারিখ থেকে তিন বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত সমুদয় অর্থ দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো সিকিউরিটিজে বিনিয়োগকৃত থাকতে হবে। পঞ্চম শর্তে বলা হয়েছে, পৃথক এ বিও হিসাবে সিকিউরিটিজ লেনদেন করে পাওয়া মুনাফার অর্থও একই বিও হিসাবে প্রথম শর্তে উল্লিখিত সিকিউরিটিজে চতুর্থ শর্তে উল্লিখিত সময়সীমা পর্যন্ত বিনিয়োগকৃত থাকতে হবে। তবে এ বিনিয়োগ থেকে অর্জিত লভ্যাংশ আয় বিশেষ ব্যাংক হিসাব থেকে স্থানান্তর করা যাবে। শেষ শর্তে বলা হয়েছে, নির্ধারিত তিন বছরের প্রতিবারই ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে নির্দিষ্ট বিও হিসাবের বার্ষিক গ্রাহক খতিয়ানের বিস্তারিত ও নির্দিষ্ট ব্যাংক হিসাবের লেনদেন বিবরণী সংশ্লিষ্ট উপকর কমিশনারের কাছে দাখিল করতে হবে।

শর্তগুলোর একটিও পরিপালনে ব্যর্থ হলে ডিএসই সদস্যদের করছাড় সুবিধা বাতিল হবে। এমন ক্ষেত্রে তাদের মূলধনী মুনাফার ওপর আয়কর অধ্যাদেশে বর্ণিত ১৫ শতাংশ হারে কর কর্তন করা হবে। এ প্রজ্ঞাপন ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর বলে গণ্য হবে। এনবিআরের প্রজ্ঞাপন জানার পর গত সপ্তাহেই সদস্যদের মধ্যে চেক বিতরণ শুরু করে ডিএসই কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, গত ১২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছে ডিএসইর শেয়ার বিক্রি করে পাওয়া ৯৪৭ কোটি টাকার ওপর প্রযোজ্য মূলধনী মুনাফায় ১০ শতাংশ করছাড় প্রদানের ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গত ৪ অক্টোবর করছাড়-সংক্রান্ত নথি অনুমোদন করে প্রজ্ঞাপন জারির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে পাঠান অর্থমন্ত্রী। আর গত সপ্তাহে এ-সংক্রান্ত নথিতে স্বাক্ষর করেন এনবিআর চেয়ারম্যান। এর পরপরই করছাড়ের এসআরও জারি হয়।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/362656