৬ নভেম্বর ২০১৮, মঙ্গলবার, ২:১২

রোহিঙ্গাদের জন্য এবার বেশি সুদের বিশ্বব্যাংক ঋণ

এবার রোহিঙ্গাদের জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে বেশি সুদে ঋণ নিচ্ছে সরকার। আড়াই শতাংশ হার সুদে একটি প্রকল্পের জন্য ঋণ নেয়া হচ্ছে ১৭ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশী মুদ্রায় যার পরিমাণ ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর আগে গত মাসেও বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে বেশি সুদে ভিন্ন একটি প্রকল্পের জন্য ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছিল।

গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে ঋণ নেয়ার জন্য এই চুক্তিসহ দু’টি চুক্তিতে সই করা হয়। চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব মনোয়ার আহমেদ এবং বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান।
ঋণ নেয়া প্রকল্প হচ্ছে, সাসটেইনেবল ফরেস্ট অ্যান্ড লাইভলিহুডস (সুফল) প্রকল্প এবং অনুদানের প্রকল্প হচ্ছে ‘সেকেন্ড রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন (রস্ক)’ প্রকল্প। এর আগে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে যে ঋণ নেয়া হতো তার সবগুলোর জন্য শুধু শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জ দিতে হতো। কিন্তু এখন থেকে বিশ্বব্যাংকের ঋণ পেতে হলে বেশি সুদ প্রদান করতে হচ্ছে।
গতকালের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সুফল প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংক ঋণ হিসেবে দেবে ১৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শক্তিশালীকরণ, তথ্যপদ্ধতি ও প্রশিক্ষণ দেয়া, গবেষণা, সহযোগিতামূলক বন ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ এবং রক্ষিত বন এলাকা উন্নয়ন, প্রকল্প এলাকার বননির্ভর জনগোষ্ঠীর বিকল্প আয়ের সুযোগ বৃদ্ধি, বন সম্প্রসারণ এবং বনের বাইরে বৃক্ষরোপণ বাড়ানো এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, পরিবীক্ষণ এবং রিপোর্টিং কাজ করা হবে। এই প্রকল্পের আওতায় সমন্বিত বন ব্যবস্থাপনার আওতায় ৭৯ হাজার হেক্টর জমি বৃক্ষ রোপণ করা হবে। বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে এলাকার দরিদ্র মানুষ বিকল্প আয়ের একটি সুযোগ পাবে।
এই প্রকল্পের বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মিয়ানমারের সহিংস কার্যক্রমের ফলে বাংলাদেশে ১০ লাখের মতো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী আশ্রয় নিয়েছে। বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর কারণে কক্সবাজারের বিস্তীর্ণ বনভূমি ধ্বংস হয়েছে।

চুক্তি অনুযায়ী, ৫ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ (রেয়াতকাল) ৩০ বছরে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এ ঋণের উত্তোলিত অর্থের ওপর ১ দশমিক ২৫ শতাংশ সুদ এবং শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ দিতে হবে। উল্লেখ্য, এর আগে বিশ্বব্যাংকের ঋণে পরিশোধের মেয়াদ ছিল ৪০ বছর।
চুক্তি শেষে ইআরডি সচিব বলেন, বিশ্বব্যাংক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। এটি বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় সহায়তা। আশা করি বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা হিসেবে বিশ্বব্যাংক সবসময় আমাদের পাশে থাকবে।
চিমিয়াও ফান বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য বিশ্বব্যাংক অনুদান দিয়ে সহায়তা করছে। এসব সহায়তায় শুধু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যে উপকার পাবেন তা নয়, স্থানীয় জনগোষ্ঠীও উপকৃত হবে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, রস্ক প্রকল্পটির অতিরিক্ত অর্থায়ন হিসেবে আড়াই কোটি ডলার অনুদান হিসেবে দেবে বিশ্বব্যাংক। এ প্রকল্পের মাধ্যমে কক্সবাজার জেলায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শিশু এবং অন্যদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। এতে সাড়ে তিন লাখ রোহিঙ্গা শিশু শিক্ষা ও মানসিক সহায়তা পাবে। থাকবে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ। এর মধ্যে পাঠ্যপুস্তক ও উপকরণ সামগ্রীর পরিকল্পনা, নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিধি ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, মহিলা শিক্ষক নিয়োগ, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জন্য নতুন শিক্ষাকেন্দ্র তৈরি ও বিদ্যমান শিক্ষাকেন্দ্রকে সহায়তা দেয়া, ক্যাম্পের শিক্ষাকেন্দ্রের জন্য শিক্ষক ও প্রশিক্ষক নিয়োগ এবং নিয়োগকৃত শিক্ষক ও প্রশিক্ষকের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
এই প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট অধিদফতরগুলোর ব্যবস্থাপনা, সমন্বয় ও পর্যবেক্ষণ সম্পর্কিত সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলা ও টেকনাফ উপজেলার শিক্ষা অফিসার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জন্য সক্ষমতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। শিক্ষার জন্য কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংস্কার ও পর্যবেক্ষণমূলক কার্যক্রম এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম নেয়া হবে।

 

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/362665