৫ নভেম্বর ২০১৮, সোমবার, ১২:২৯

রংপুরে আদালত চত্বরে মইনুলের ওপর হামলা

রংপুরে একটি মানহানি হামলায় জামিন শুনানিতে অংশ নিতে এসে আদালত প্রাঙ্গণে যুব, ছাত্র, স্বেচ্ছা ও যুব মহিলা লীগের হামলার শিকার হয়ে আহত হয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। হামলকারীরা তার ওপর জুতা, পচা ডিম ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। অন্য দিকে ব্যারিস্টার মইনুল আদালত থেকে চলে যাওয়ার সাথে সাথেই হাজিরা দিতে আসা বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় আদালত চত্বর। পরিস্থিতি সামাল দিতে গুলি ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। অন্য দিকে মইনুলের জামিন নামঞ্জুর হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তার আইনজীবীরা।
আদালত সূত্র জানায়, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে গত ২২ সেপ্টেম্বর রংপুর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কোতোয়ালি আমলি আদালতে মানহানির মামলা করেন যুবলীগ কর্মী মিলি মায়া বেগম। ওই মামলার জামিন শুনানির তারিখ ছিল রোববার। গত শনিবার সন্ধ্যায় কড়া পুলিশি পাহারায় রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয় ব্যারিস্টার মইনুলকে। আদালতে তার উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে গতকাল সকাল ৯টা থেকেই চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের প্রবেশ পথ ঘেরাও করে অবস্থান নেন জেলা মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাকিয়া সুলতানা চৈতি, জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক নাছিমা জামান ববি, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক রমজান আলী তুহিন, যুবলীগ নেতা কাউন্সিলর হারাধন রায়, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান রনি, মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসিফের নেতৃত্বে কয়েক শ’ নেতাকর্মী। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে তারা ব্যারিস্টার মইনুলের বিরুদ্ধে ঝাড়ু ও জুতা প্রদর্শন করতে থাকে। এ সময় তাদের সেøাগানে আদালত চত্বরে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১২টা ৩২ মিনিটে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে বহনকারী রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের গাড়ি প্রবেশ করা মাত্রই বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে চত্বর। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ইটপাটেকল, জুতা ও ডিম নিক্ষেপ করতে থাকে। এতে ব্যারিস্টার মইনুল আহত হন। পুলিশ তাকে গাড়ি থেকে নামানোর সময় একজন ছাত্রলীগ কর্মী তাকে লক্ষ্য করে থাপ্পড় তোলে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ ব্যারিস্টার মইনুলের মাথায় হেলমেট পরিয়ে দেয়। মইনুলের আইনজীবীরা তাকে রক্ষা করতে গেলে তাদের সাথে ধ্বস্তাধ্বস্তি হয় পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের। পরে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ আদালতে নিয়ে যায়। সেখানে শুরু হয় তার জামিন শুনানি। এ সময় বাইরে জুতা ও ঝাড়– প্রদর্শন করে বিক্ষোভ চলতে থাকে। আদালতে শুনানির সময় ব্যারিস্টার মইনুল নিজেই তার ওপর হামলার বিষয়টি বিচারকের কাছে তুলে ধরে নিরাপত্তা চান।
ব্যারিস্টার মইনুলের জামিন শুনানিতে অংশ নেয়া আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট মাসুদ রানা পরে এক ব্রিফিংয়ে জানান, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন শুনানিতে অংশ নিয়ে নিজেই আদালতের বিচারক আরিফা ইয়াসমিন মুক্তার কাছে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার কথা তুলে ধরেন। এ সময় তিনি আদালতকে বলেন, আমার ওপর আদালতের প্রবেশ পথে সরকারদলীয় লোকজন হামলা করেছে। এতে আমি আহত হয়েছি। এ সময় আদালতের কাছে ব্যারিস্টার মইনুল নিরাপত্তা চান। আদালত বক্তব্য শুনে পুলিশকে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন। এই আইনজীবী আরো জানান, বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণীর নাগরিক এবং সিনিয়ন আইনজীবীকে যেভাবে আদালত চত্বরে সরকারদলীয় লোকজন আহত করেছে, সেটি কোনো সভ্য সমাজে হতে পারে না। তিনি ব্যারিস্টার মইনুলের ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতার করে শাস্তির দাবি জানিয়ে এ ঘটনার নিন্দা জানান। 
রংপুর জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান নাছিমা জামান ববি জানান, ব্যারিস্টার মইনুল নারী জাতিকে অপমান করেছে। সে কারণে আমরা নারীরা তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ নিন্দা জানানোর জন্য শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছি। কেউ যদি তার ওপর হামলা চালিয়ে থাকে সেটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আমাদের দলের কেউ ওই ঘটনার সাথে জড়িত নয়। তিনি বলেন, আমরা চাই ব্যারিস্টার মইনুলের সর্বোচ্চ শাস্তি।

বিএনপি ও সরকারপন্থীদের সংঘর্ষ : পরে বেলা ১টা ২৬ মিনিটে আদালতের নির্দেশ মতে পুলিশ মইনুলকে প্রিজনভ্যানে করে নিয়ে যাওয়ার সময় আবারো বিক্ষোভকারী সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা প্রিজনভ্যানে বৃষ্টির মতো ডিম, জুতা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। প্রিজনভ্যান আদালত চত্বর থেকে বেরিয়ে যাওয়া মাত্রই দু’টি মামলায় জামিন নিতে আসা কোর্ট চত্বরে অপেক্ষমাণ বিএনপি নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার পক্ষে সেøাগান দিয়ে আদালতে আসতে থাকলে তাদের ধাওয়া দেয় বিক্ষোভকারীরা। এ সময় তারা বিএনপি নেতাকর্মীদের ইটপাটকেল, জুতা ও ডিম নিক্ষেপ করতে থাকে। বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রতিরোধ করে পুলিশের সহযোগিতা চাইলে সংঘর্ষ বাধে। এতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় আদালত চত্বর। সংঘর্ষে আওয়ামী লীগের আইনজীবী দিলশাদ ইসলাম মুকুল, মহানগর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক জহির আলম নয়ন, জেলা ছাত্রদল সভাপতি মনিরুজ্জামান হিজবুলসহ উভয়পক্ষের অন্তত ১২ জন আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ চার রাউন্ড শর্টগানের গুলি এবং দুই রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনার জন্য পুলিশকে দায়ী করে আওয়ামী লীগ ও তাদের আইনজীবীরা। আর বিএনপি নেতারা এ ঘটনাকে আইনের শাসনের পরিপন্থী উল্লেখ করে দায়িদের গ্রেফতারের দাবি জানান।

এ দিকে শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ব্যারিস্টার মইনুলের আইনজীবী রংপুর আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল কাইয়ুম জানান, এটি জামিনযোগ্য মামলা। কেন জামিন দেয়া হলো না বোধগম্য নয়। সরকারের ফরমায়েশি আদেশের কারণেই জামিন দেয়া হয়নি বলে মন্তব্য করে আবারো জামিনের আবেদনের কথা জানান তিনি। 
উল্লেখ্য, গত ১৬ সেপ্টেম্বর একাত্তর টেলিভিশনের টকশোতে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টির এক প্রশ্নের জবাবে তাকে চরিত্রহীন বলায় গত ২২ সেপ্টেম্বর রংপুরে তার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা হয়। ওই মামলার ৬ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার হন তিনি।

 

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/362451