৩১ অক্টোবর ২০১৮, বুধবার, ১১:৩০

কাতারে থাকলেও কক্সবাজারের গায়েবি মামলায় আসামি

লায়েক ইবনে ফাজেল কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাহ এলাকার বাসিন্দা। বিগত তিন বছর ধরে তিনি কাতারে প্রবাস জীবন কাটাচ্ছেন। অথচ তিনিই নাকি গত রোববার কক্সবাজার শহরের ফায়ার সার্ভিসের কাছে প্রধান সড়কে গাড়িতে আগুন দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছেন। এমন অভিযোগে কক্সবাজার সদর থানা পুলিশের করা মামলায় তিনি পাঁচ নম্বর আসামি হয়েছেন। এমন কল্পিত ঘটনায় পুলিশের তালিকায় নিজের নাম দেখে তিনি জানান, ‘তিন বছর ধরে কাতারে আছি, এ ঘটনায় কিভাবে আসামি হলাম একমাত্র পুলিশই ভালো বলতে পারবে।’ তবে আওয়ামী লীগ সরকারের এমন নির্লজ্জ কাজ নতুন কিছু নয় বলে তিনি আরো যোগ করেন।

কক্সবাজার বিএনপি ও জামায়াতের ১৯ জন নেতার নাম উল্লেখ করে এই মামলায় আসামি করা হয়েছে আরো ১৩০ জনকে। নাশকতার অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা এই মামলার বাদি কক্সবাজার মডেল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক সুজন চন্দ্র মজুমদার। কোনো ঘটনা ছাড়া এরকম মামলা হওয়ায় শহরের মানুষের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সাথে হাস্যরসেরও সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে কক্সবাজারে পুলিশের ক্রেডিবিলিটি নিয়ে। কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা ও সাধারণ সম্পাদক পৌরমেয়র মুজিবুর রহমান এ মামলার প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের জানান,‘আমরা এরকম মামলার বিষয়টি মোটেও জানি না, পুলিশ এ বিষয়ে আমাদের কাছ থেকে কিছু জানারও চেষ্টা করেনি।

মামলার অন্যতম আসামি কক্সবাজার পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ মোহাম্মদ আলী জানান, কক্সবাজার রাজনৈতিকভাবে সব সময় শান্ত থেকেছে কিন্তু পুলিশ শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করতে চাইছে। কোনো ধরনের ঘটনা ছাড়া ডাহা মিথ্যা মামলা করে কক্সবাজারের শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে নষ্ট করার পাশাপাশি পুলিশের এমন ভূমিকায় সবাই হতবাক।

ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়ের আশপাশে অনেক ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা ওই দিন কোনো মিছিল-মিটিং দেখেননি এবং গাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনাও ওই স্থানে ঘটেনি। ব্যবসায়ীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কক্সবাজারে এই গায়েবি মামলার ফলে মানুষের মাঝে পুলিশের দায়িত্বশীল ভূমিকা চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

কক্সবাজার সদর মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক মো: ফরিদ উদ্দিন খন্দকার জানান, গত রোববার ভোর ৫টার দিকে বিএনপি-জামায়াতের লোকজন শহরের ফায়ার সার্ভিস এলাকায় মিছিল বের করে সরকারবিরোধী স্লোগান দেন। এ সময় তারা একটি টমটম গাড়িতে আগুন দেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে তারা পালিয়ে যায়। ওই সময় একজনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়। মামলার পাঁচ নম্বর আসামি লায়েক ইবনে ফাজেল তিন বছর ধরে কাতারে অবস্থান করছেন। তিনি কিভাবে গাড়িতে আগুন দিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, গাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনা সত্য। তবে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।

মামলায় মোস্তাক আহমদ নামের একজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তিনি সদরের পিএমখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নং ওয়ার্ডের সদস্য। মামলার অন্যতম আসামি কক্সবাজার সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান শহিদুল আলম বাহাদুর ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রাশেদুল হক রাসেল জানান, কক্সবাজারে গত কয়েক মাস ধরে কেউ এলাকায় নেই, তা ছাড়া গ্রেফতার এড়াতে কেউ বাসা-বাড়িতেও থাকতে পারছেন না, পুলিশ কাউকে দাঁড়াতেই দিচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে ফায়ার সার্ভিস অফিসের কাছে আগুন দেয়ার ঘটনা সাজিয়ে মিথ্যা মামলা করাটা কতটুকু বিবেকসম্পন্ন কাজ হয়েছে তার বিচার জনগণের কাছে আমরা দিলাম।

কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ শাহজাহান চৌধুরী ও জেলা জামায়াতের আমির মওলানা মোস্তাফিজুর রহমান এসব গায়েবি মামলার বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন। কক্সবাজার জেলা বিএনপির দফতর সম্পাদক ইউছুপ বদরী জানান, কক্সবাজারে এ পর্যন্ত চারটি গায়েবি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজার শহরে দু’টি, কুতুবদিয়ায় একটি এবং চকরিয়ায় একটি। এসব মামলায় বিএনপি জামায়াতের শত শত নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/361217