২ নভেম্বর ২০১৮, শুক্রবার, ১০:৫৩

অব্যাহত গণগ্রেফতারে জনজীবনে আতঙ্ক

জাতীয় দৈনিকে সাংবাদিকতা করেন বাবলু। গতকাল তিনি রাজধানীর পল্টন মোড় দিয়ে যাচ্ছিলেন। কানে ছিল মোবাইলফোন। হঠাৎ পেছন থেকে দুই অপরিচিত ব্যক্তি তার দু’হাত ধরে ফেলল। মোবাইলে তখনো কথা বলছিলেন বাবলু। হঠাৎ দু’হাত ধরে ফেলায় তিনি ভয় পেয়ে যান। লোক দু’টি তার দুই পকেট চেক করা শুরু করেন। বাবলু তখন ওই দুই ব্যক্তির পরিচয় জানতে চাইলে তারা নিজেদেরকে ডিবি পরিচয় দেয়। বাবলু নিজের পরিচয় দেয়ার পর ওই দুই ব্যক্তি খানিক দূরে দাঁড়িয়ে থাকা তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তাকে বিষয়টি অবহিত করেন। তাৎক্ষণিক বাবলুকে ছেড়ে দেন তারা।

বাবলুকে ছেড়ে দেয়া হলেও এভাবে অনেক পথচারীকেই রাস্তা থেকে তুলে নেয়ার অভিযোগ মিলেছে। গতকাল দুপুরে পল্টন থানা পুলিশ আনোয়ার, রাকিব ও বাবু নামে তিন যুবককে আটক করে। ওই তিন যুবক থানা কম্পাউন্ডে জানান, তাদের বাসা মিরপুরে। স্টেডিয়াম এলাকায় এসেছিলেন মোবাইল কেনার জন্য। মার্কেটে যাওয়ার আগে পুলিশ তাদেরকে আটক করে। তাদেরকে পরিবারের সাথে যোগাযোগ করারও সুযোগ দেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তারা।
শুধু রাজধানীতেই নয়; রাজধানীর বাইরে প্রত্যন্ত গ্রামেও পুলিশ এই গ্রেফতারি অভিযান চালাচ্ছে বলে জানা গেছে।
গত কয়েক দিনের তথ্যানুযায়ী প্রতিদিন গড়ে বিএনপি, জামায়াত এবং ঐক্যফ্রন্টের দেড় শ’ থেকে দু’ শ’ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা, যশোরের বেনাপোল ও শার্শা, মেহেরপুর, নাটোর, চুয়াডাঙ্গা, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, রাজবাড়ী, চট্টগ্রাম ও সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় দুই শ’ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। এর বাইরে অনেক সাধারণ মানুষও গ্রেফতার হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গতকাল রেজোয়ান নামে এক ব্যক্তি জানান, তার গ্রামের বাড়িতে প্রতিদিনই পুলিশ যাচ্ছে তার ভাইদের গ্রেফতার করতে। অথচ তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।

মানুষ এখন সামাজিক অনুষ্ঠানে যেতেও ভয় পাচ্ছেন। ঢাকা থেকে বন্ধুর জানাজার নামাজ পড়তে গিয়ে নাশকতার একটি মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন কুমিল্লার মুরাদনগরের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাহ্ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের ছোট ভাই আবু কাউছার। আবু কাউছার সরাসরি বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত নন। তার বিরুদ্ধে এর আগে কোনো মামলাও ছিল না। অথচ সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, সড়ক-মহাসড়কে প্রতিবন্ধকতা ও নাশকতা করার চেষ্টার অভিযোগ এনে বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, গত এক মাসে মুরাদনগরে নাশকতার কোনো ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু পুলিশ ৩১ অক্টোবরের ঘটনা দেখিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে একটি মামলা দায়ের করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মামলাটিতে বিএনপির ২৫ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সম্প্রতি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় বেশ কিছু মামলা রেকর্ড হয়েছে যার কোনো ভিত্তি নেই। এই মামলাগুলোয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের পাশাপাশি অনেক সাধারণ মানুষকেও আসামি করা হয়েছে। পুলিশ এখন ওই সব মামলার আসামিদের তালিকা ধরে গ্রেফতার অভিযান শুরু করেছে। ভুক্তভোগীরা বলেন, ইতঃপূর্বে যেসব মামলা ছিল রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে তার বেশির ভাগ মামলায় তারা জামিনে রয়েছেন। নতুন নতুন মামলায় তারা এখন গ্রেফতার হচ্ছেন।
এ দিকে একের পর এক গ্রেফতারের ঘটনায় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সাথে সাধারণ মানুষও এখন চরম ভয়ের মধ্যে আছেন। গতকাল বেশ কয়েকজনের সাথে আলাপ করলে তারা বলেন, এখন তারা অনেক ভয়ের মধ্যে। তাদের অনেকেই বলেছেন, পুলিশের কিছু সদস্য সাধারণ মানুষের সাথে যে আচরণ করছে তাতে তারা শঙ্কিত।
অন্য দিকে, পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কয়েকজন বলেছেন, যাদের বিরুদ্ধে মামলা বা গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে তাদেরকেই কেবল গ্রেফতার করা হচ্ছে। মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেলের ডিসি মাসুদুর রহমান বলেছেন, অভিযোগ ছাড়া পুলিশ কাউকে আটক বা গ্রেফতার করে না।


http://www.dailynayadiganta.com/last-page/361731