১ নভেম্বর ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৯:৩৯

প্রশ্নের মুখে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জবাবদিহিতা

জনবলের অভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন কার্যক্রম ব্যাহত

জনবলের অভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। যথাযথভাবে পরিদর্শন না করায় ব্যাংকগুলোর সরবরাহকৃত তথ্য যাচাই-বাছাই ছাড়াই বিভিন্ন প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে। এতে প্রশ্নের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের জবাবদিহিতা। বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায় এ চিত্র উঠে এসেছে।

জানা গেছে, ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর ৪৪ ধারা এবং বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২ অনুসারে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শন করে থাকে। তা ছাড়া ২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর একজন ডেপুটি গভর্নর নির্দেশনা দেন, তফসিলি ব্যাংকগুলো পরিসংখ্যান বিভাগে যেসব তথ্য-উপাত্ত দেয় তার সঠিকতা যাচাই-বাছাই করতে হবে। ওই নির্দেশনায় আরো বলা হয়, বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংক থেকে বিভিন্ন বিভাগে দাখিলকৃত সেক্টরভিত্তিক দায় ও সম্পদের বিস্তারিত তথ্য-উপাত্তসমূহের সঠিকতা যাচাইয়ের জন্য রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংকের দু’টি এবং অন্যান্য তফসিলি ব্যাংকের একটি করে শাখাসহ মোট ৬০টি শাখায় প্রতি বছর নমুনাভিত্তিক তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। এর পাশাপাশি প্রতি মাসে অনধিক পাঁচটি শাখায় পরির্দশন কার্যক্রম সম্পন্ন করে বিশদ পরিদর্শন প্রতিবেদন প্রদান করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই নির্দেশনা জারির পর থেকে গত ১৬ আগস্ট পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। ফলে ব্যাংকগুলোর সরবরাহকৃত তথ্য যাচাই-বাছাই না করেই বিভিন্ন ধরনের বিবরণী তৈরি করা হচ্ছে। তাই সুষ্ঠু তথ্য-উপাত্তের স্বার্থে ব্যাংকগুলোতে বিশেষ পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সোনালী ব্যাংক থেকে হলমার্ক নামক একটি অখ্যাত কোম্পানি তৎকালীন শেরাটন শাখা থেকে জালজালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা তুলে নেয়। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক এ ঘটনা ঘটার সময় বা পরে তথ্য উদঘাটন করতে পারেনি। একটি বেনামি চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত করা হয়। যখন তদন্ত করে এ জালিয়াতির ঘটনা উদঘাটন করা হয় তত দিনে সোনালী ব্যাংকের সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা হাওয়া হয়ে যায়, যার বেশির ভাগই আজো উদ্ধার করতে পারেনি সোনালী ব্যাংক। এ ছাড়া বিসমিল্লাহ নামক আরেকটি কোম্পানি জনতা ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংক থেকে প্রায় এক হাজার ২০০ কোটি টাকা নিয়ে হাওয়া হয়ে যায়। বর্তমানে ওই প্রতিষ্ঠানের মালিকরা বিদেশে। এক সময় রাষ্ট্র খাতের বেসিক ব্যাংককে ভালো প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফসহ এবং দেশীয় সংস্থাগুলো থেকে উদাহরণ হিসেবে দেখা হতো। এমন একটি ভালো ব্যাংকে ২০০৯ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা জালজালিয়াতি হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথম দিকে এসব জালজালিয়াতির ঘটনা উদ্ধার করতে পারেনি। পরে একটি বেনামি চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে জালিয়াতির মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিশেষ পরিদর্শন করা হয়। তখন এসব জালিয়াতির তথ্য উদঘাটন হলেও কঠোর পদক্ষেপ না নিতে পারায় পরে বেসিক ব্যাংক থেকে আরো অর্থ বেরিয়ে যায়। তবে একপর্যায়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসব জালিয়াতির তথ্য বেরিয়ে পড়লে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ও এমডির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়। বর্তমানে বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও এমডি দু’জনই দেশের বাইরে পালাতক রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পরিদর্শন কার্যক্রমে শিথিলতার কারণে ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণসহ নানা জালিয়াতির ঘটনা বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগের প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে বলা হয়েছে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে মাসিক ও ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে দাখিলকৃত তথ্য-উপাত্তের সঠিকতা নিশ্চিত করার জন্য ৫৬ ব্যাংকের ৬০টি শাখায় তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার প্রস্তাব রয়েছে। একই সাথে প্রতি মাসে অনধিক পাঁচটি শাখায় বিশেষ পরিদর্শন কার্যক্রমটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব রয়েছে। কিন্তু জনবলের অভাবে ও সময় স্বল্পতার কারণে তফসিলি ব্যাংকগুলো থেকে সরবরাহকৃত তথ্য-উপাত্তের সঠিকতা যাচাইয়ের জন্য বিশেষ পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব হয়নি। সংশ্লিষ্ট বিভাগ প্রয়োজনীয় জনবল পেলে পরিদর্শন কার্যক্রম বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিবরণীতে বলা হয়, নির্দেশনা মোতাবেক পরিদর্শন পরিচালনা সংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পাদিত না হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের জবাবদিহিতা প্রশ্নের মুখে পড়ে গেছে।

 

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/361475