১ নভেম্বর ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৯:৩৮

আকাশচুম্বী ব্যয় খাল খননে

৫২ শ’ কোটি টাকা থেকে সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা ; ২২৩ একর জমি অধিগ্রহণসহ অসংখ্য নতুন অঙ্গ সংযোজন ; ডিজাইন চূড়ান্ত করতেই ২২ মাস পার

নতুন অঙ্গ যুক্ত করে আকাশচুম্বী ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে পূর্বাচল লিংক রোডের উভয় পাশে অর্থাৎ কুড়িল থেকে বোয়ালিয়া পর্যন্ত ১০০ ফুট প্রশস্ত খাল খনন ও উন্নয়ন প্রকল্পের সংশোধনীতে। অনেক আপত্তির পরও পাঁচ হাজার ৫৩০ কোটি ১৩ লাখ টাকার প্রকল্পটি ২০১৫ সালে অনুমোদন দেয়া হয়। ওই প্রকল্পের ব্যয় এখন ১৬ হাজার ৬৪৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ২০১৮ সালের আগস্টে প্রকল্পটি সমাপ্ত করার কথা থাকলেও হয়নি। কারণ ডিজাইন চূড়ান্ত করতেই প্রকল্পের ২২ মাস পার করে দিয়েছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা। এখন নতুন করে ২২৩ একর জমি অধিগ্রহণসহ অনেকগুলো নতুন অঙ্গ যুক্ত করা হয়েছে বলে মূল্যায়ন কমিটির পর্যালোচনায় উঠে এসেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্ষাকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ডিওএইচএস, বারিধারা এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য এই খাল উন্নয়ন প্রকল্প। এ ছাড়া ডিটেইলড এরিয়া প্লান (ড্যাপ) অনুযায়ী পানি সংরক্ষণ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য খাল সংস্করণসহ জলাবদ্ধতা নিরসনের মাধ্যমে সংলগ্ন এলাকার পরিবেশ উন্নয়ন এবং নতুন কালভার্ড ও তীর রক্ষার মাধ্যমে বিদ্যমান অবকাঠামোর উন্নয়ন করাই মূলত এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। সেই লক্ষ্যে পাঁচ হাজার ৫৩০ কোটি ১৩ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজধানীর পূর্বাচলের লিংক রোডের উভয় পাশে কুড়িল থেকে বোয়ালিয়া পর্যন্ত ১০০ ফুট প্রশস্ত খাল খনন ও লেক উন্নয়ন প্রকল্পটি ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়। খাল খননের কাজ ২০১৮ সালের আগস্টে শেষ করার কথা ছিল। পাঁচ বছর দেনদরবার করে যে প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয় সেই প্রকল্পে প্রায় দুই বছরে খাল খননের ডিজাইনই করতে পারেনি রাজউক। ফলে প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ অর্থও ব্যয় করা যাচ্ছে না। অনুমোদিত ডিপিপিতে খাল খননের মাধ্যমে সৌন্দর্যবর্ধনে ব্যয় ধরা হয় পাঁচ হাজার ২৪৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা। যার বেশির ভাগ অর্থাৎ ৯০ শতাংশ বা চার হাজার ৭০৬ কোটি ১৮ লাখ টাকাই যাবে জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ খাতে। জমি অধিগ্রহণের জন্য ধরা হয়েছে চার হাজার ৬১৯ কোটি ২১ লাখ টাকা এবং ক্ষতিপূরণ বাবদ ৮৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।
পিইসিতে এই প্রকল্পটির ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব সভা করে পর্যালোচনা করা হয়। সংশোধিত প্রকল্পটি অনুমোদিত হলে প্রকল্পভুক্ত কাজগুলো বালু নদী অতিক্রম করে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত সম্প্রসারণ, কাজের পরিধি বৃদ্ধি, নতুন নতুন রাস্তা, খাল খনন কার্যক্রম, ৩০০ ফুট প্রশস্ত সড়কটিকে এক্সপ্রেসওয়ে আকারে আট লেনে সম্প্রসারণ, সার্ভিস রোড নির্মাণ, নতুন করে অতিরিক্ত ২২০.৮৫ একর জমি অধিগ্রহণ, পাম্প হাউজ নির্মাণ, ডাইক বাঁধ স্থাপন ইত্যাদি সম্পন্ন হবে। আর এ কারণে প্রকল্পের ব্যয় ২২ হাজার ৩৭৪ কোটি ৬ লাখ টাকা করার প্রস্তাব ১২ জুন পিইসিতে দেয়া হয়। ওই পিইসি সভার সুপারিশ হলোÑ মূল প্রকল্পটির সাথে আবশ্যিকভাবে সম্পর্কিত এবং কুড়িল থেকে বোয়ালিয়া পর্যন্ত এলাকায় সীমাবদ্ধ রেখে শুধু ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে সমাপ্তিযোগ্য কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করে আরডিপিপি পুনর্গঠন করতে হবে। সে আলোকে ব্যয় ১৬ হাজার ৬৪৪ কোটি ৬৯ লাখ ২০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, যা ইতঃপূর্বে অনুমোদিত ব্যয় থেকে ২১৫ শতাংশ বা ১১ হাজার ৩৫৭ কোটি ৭৭ লাখ ৩১ হাজার টাকা বেশি বলে পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে।
সংশোধিত প্রকল্পের আওতায় এখন কাজ হবেÑ ২২৩ একর জমি অধিগ্রহণ, ৫৪ লাখ ৬৩ হাজার ৩৯০ ঘন মিটার মাটি খনন, কাদা অপসারণ ৮৭ হাজার ৬৬৩.৮৮ ঘন মিটার, মাটি ভরাট ৩০ লাখ তিন হাজার ঘন মিটার, পাম্প হাউজ দু’টি, সৌন্দর্য বর্ধন ও লেক উন্নয়ন নিকুঞ্জে ২২.৯৬ কিলোমিটার, সীমানা প্রাচীর, ওয়াটার বাস স্টপ ১২টি, ওয়াকওয়ে ১৩ কিলোমিটার, সড়ক বাতি ১৩ কিলোমিটার ইত্যাদি। কুড়িল থেকে বালু নদী পর্যন্ত ১৪ লেন এবং বালু নদী থেকে কাঞ্চন পর্যন্ত ১২ লেন রাস্তা নির্মাণ।

রাজউক পিইসি সভায় জানায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় প্রকল্পটিকে একটি সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্প হিসেবে বাস্তবায়নের নির্দেশ প্রদান করা হয়। সে পরিপ্রেক্ষিতে মূল প্রকল্পটির সাথে আবশ্যিকভাবে সম্পর্কিত এবং কুড়িল থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত এলাকায় সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, কুড়িল থেকে বালু নদী পর্যন্ত ইন্টারসেকশনে কোনো প্রকার জমি অধিগ্রহণ না করে সংযোগ ছাড়া কেবল সড়কের ওপর ইন্টারসেকশন নির্মাণ এবং কুড়িল থেকে বালু নদী পর্যন্ত দু’টি ও বালু নদী থেকে কাঞ্চন পর্যন্ত তিনটি ইন্টারসেকশন রাখার সিদ্ধান্তে ওই সভায় একমত পোষণ করেন সবাই। ১০০ ফুট খালে পার্শ্ববর্তী এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য কোনো সংযোগ থাকবে না। এটি প্রবাহমান হবে না; বরং স্থির পানির লেক হবে। তবে স্টর্ম স্যুয়ারেজের জন্য ১০০ ফুট খালের উভয় পাশে জিআরপি পাইপ স্থাপন করা হবে। এ ক্ষেত্রে নিকুঞ্জ, বিমানবন্দর, বারিধারা, উত্তরখান, কাওলা প্রভৃতি এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য এডি-৮, ডুমনি ও বোয়ালিয়া খালের খনন ও উন্নয়ন করা প্রয়োজন। এ খালগুলোর মাধ্যমে পানি প্রবাহিত হয়ে বালু নদীতে পড়বে। তবে ওই খালগুলো অনুমোদিত প্রকল্পে ছিল না বলে রাজউক সূত্রে জানা গেছে।

পরিকল্পনা কমিশন বলছে, সংশোধিত প্রকল্পে নতুন নতুন কাজ অন্তর্ভুক্ত করে প্রকল্প সংশোধন না করে নতুন করে আলাদা প্রকল্প নেয়া উচিত। এই প্রকল্পের জন্য প্রয়োজন বিশাল অঙ্কের অর্থ। তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলে ৩০০ ফুট সড়কের প্রায় সমান্তরাল নামাপাড়া সড়কটি নির্মাণ করা স্থগিত রাখতে হবে বলে পিইসি সভায় মতামত দেয়া হয়েছে। এ দিকে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বাজেট হলো প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। অনেকগুলো প্রকল্প সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত আছে। এই প্রকল্পটি সংশোধিত ও অনুমোদিত হলে বিশেষ বরাদ্দের প্রয়োজন হবে।

 

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/361452