৩০ অক্টোবর ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:৩২

১৬ বছর ধরে চলছে কর্ণফুলী সেতুর কাজ

অনুমোদনের সাড়ে ৫ বছর পর কাজ শুরু ; ব্যয় বেড়েছে ৮২ শতাংশ ; ঠিকাদারকে ৬ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ

দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে চলছে কর্ণফুলী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কাজ। আজো এই কাজ শেষ হয়নি। দীর্ঘ সময়ক্ষেপণের কারণে সরকারকে ছয় কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে। শেষ মুহূর্তে এসে প্রকল্পের নতুন খাত সংযোজন করায় বাড়তি অর্থ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে দাতাসংস্থা কুয়েত ফান্ড। একনেক থেকে অনুমোদন নেয়ার সাড়ে পাঁচ বছর লেগেছে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে। যার কারণে ব্যয় বেড়েছে ৮২ শতাংশ বলে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সরেজমিন প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছে। নতুন করে মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

একনেকের জন্য পাঠানো প্রস্তাবনার তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রামের সাথে কক্সবাজার ও বান্দরবানের যোগাযোগব্যবস্থা সহজ করতে তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রকল্পটি ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর তৎকালীন সরকারের আমলে একনেক থেকে ৪৩৯ কোটি সাত লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যয়ে অনুমোদন দেয়া হয়। ২০০৬ সালের জুনে প্রকল্পটি সমাপ্ত করার কথা ছিল। এখানে প্রকল্প সাহায্য ছিল ১৬২ কোটি টাকা। কিন্তু সাড়ে পাঁচ বছরেও প্রকল্পের কাজ শুরু করতে পারেনি বাস্তবায়নকারী সংস্থা। পরে প্রকল্পের অর্থায়নের উৎস পরিবর্তন হওয়াতে সেতুর ধরন, দৈর্ঘ্য পরিবর্তন, নতুন অঙ্গ সংযোজন করাতে ২০০৭ সালে এসে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। কুয়েত ফান্ডের ঋণসহায়তায় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত হয়। তখন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৫৯০ কোটি টাকা। কুয়েত ফান্ড থেকে ৩৭২ কোটি টাকা ঋণ দেয়ার কথা। প্রকল্পের মেয়াদ চার বছর বাড়িয়ে ২০১০ সালের জুন পর্যন্ত উন্নীত করা হয়।

জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু নির্মাণকাজ শেষ হলেও অনুমোদিত প্রকল্প ঋণের একটি অংশ অব্যয়িত থাকে। ওই অর্থ দিয়ে ব্রিজ অ্যাপ্রোচ সড়কসহ অন্যান্য কাজ সম্পাদনের জন্য কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে একটি সংশোধিত চুক্তি হয়। ফলে প্রকল্প ব্যয় ৬৫১ কোটি ২৮ লাখ টাকায় বৃদ্ধি করে ২০১৪ সালের মার্চে দ্বিতীয় দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। তাতেও কাজ শেষ না হওয়ায় পরিকল্পনা কমিশন মেয়াদ আবার বাড়িয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নেয়া হয়। এ দিকে ভূমি অধিগ্রহণ ও অন্যান্য খাতে ব্যয় বৃদ্ধির কারণে প্রকল্পের ব্যয় আরেক দফা বাড়িয়ে ৬৮২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা করা হয়। পূর্ত কাজের ব্যয় বৃদ্ধির কারণে প্রকল্প শেষ করতে ৩৪ লাখ কুয়েতি দিনার চাওয়া হলে কুয়েত ফান্ড বাড়তি সহায়তা প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করে। ফলে প্রকল্প শেষ করতে বাকি অর্থায়ন জিওবি থেকে করার জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়। আর এ কারণে নতুন করে খাত সংযোজন ও বিয়োজন করে ব্যয় আবার বাড়িয়ে ৭৯৭ কোটি ৯৪ লাখ ৪৬ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এখন জিওবি ও প্রকল্প সাহায্যের অনুপাত হচ্ছে ৬০.৩ শতাংশ এবং ৩৯.৭ শতাংশ। প্রকল্পটি আরো এক বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৯ সালের জুনে সমাপ্ত করার জন্য বলা হয়েছে।

আইএমইডির তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত কাজের অগ্রগতি ৯০ দশমিক ৭৭ শতাংশ। যেখানে অর্থ ব্যয় হয়েছে, গত ১৬ বছরে ৬০২ কোটি ২৫ লাখ টাকা বা ৮৮.২৩ শতাংশ। বহদ্দারহাট থেকে তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু অ্যাপ্রোচ সড়ক চার লেন করার প্রকল্পটি অসমাপ্ত রেখে সমাপ্ত করা হয়। পরে আলোচিত প্রকল্পের সাথে যুক্ত করা হয়। যার কারণে এই খাত থেকে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিপূরণ ববাদ দুই দফায় মোট ছয় কোটি টাকা প্রদান করা হচ্ছে। এটি সরকারের আর্থিক অপচয় বলে পিইসি সভায় মন্তব্য করা হয়। উল্লেখ্য, প্রকল্পটি ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
আইএমইডি বলছে, অনুমোদনের সাড়ে পাঁচ বছর পর প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়। আর প্রকল্পটির সেতু নির্মাণ ২০১০ সালে সমাপ্ত হওয়ার প্রায় চার বছর পর অতিরিক্ত ছয় লেনবিশিষ্ট আট কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়। আগামীতে মূল প্রকল্প সমাপ্ত ঘোষণার পর নতুন অঙ্গের জন্য আলাদা প্রকল্প গ্রহণ করা উচিত।


 

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/360970