৩০ অক্টোবর ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:৩০

শেষ দিনেও পরিবহন শ্রমিকদের নৈরাজ্য

সরকারকে ফেডারেশনের ২১ দিনের আলটিমেটাম ; দাবি না মানলে ৭২ ঘণ্টার কর্মবিরতি ঘোষণা ; চালক-যাত্রীদের কান ধরে উঠবস করতে বাধ্য করা

৪৮ ঘণ্টা কর্মবিরতির শেষ দিনেও রাজধানীসহ সারা দেশে পরিবহন শ্রমিকদের নৈরাজ্য অব্যাহত ছিল। শেষদিনে তাদের নির্যাতন-হয়রানির সাথে যুক্ত হয়েছে কান ধরে উঠবোস করানো। বিভিন্ন স্থানে গাড়িচালক ও যাত্রীদের ধরে পোড়া মবিল মাখানোসহ গতকাল কান ধরে উঠবোস করিয়েছে নিরপরাধ মানুষদের। এ দিকে পরিবহন শ্রমিকদের এই অতি বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে সাধারণ মানুষ। রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে তারা কর্মবিরতির নামে শ্রমিকদের এই নৈরাজ্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এ দিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সরকারকে ২১ দিনের সময় দিয়েছে তারা। ২১ দিনেও তাদের দাবি বাস্তবায়ন না হলে আরো ৭২ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করা হবে। কর্মবিরতির নামে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় গতকালও মানুষকে পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে। অনেকে সঠিক সময়ে কর্মস্থলে যেতে পারেননি, গুরুত্বপূর্ণ কাজ ব্যাহত হয়েছে, এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে গুনতে হয়েছে বাড়তি টাকা। স্থবির হয়ে পড়ে ব্যবসা-বাণিজ্য। ব্যবসায়ীদের পণ্য আটকে আছে বিভিন্ন বন্দরে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা বলেছেন, এই কর্মবিরতির পরও তাদের ৮ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হলে আরো কঠোর কর্মসূচি নিয়ে তারা মাঠে নামবেন।

শেষ দিনেও নৈরাজ্য : অবরোধের দ্বিতীয় দিন গতকাল সোমবারও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চরম নৈরাজ্য চালিয়েছে উচ্ছৃঙ্খল পরিবহন শ্রমিকেরা। রাস্তায় গাড়ি দেখলেই তারা হামলে পড়েছে। এমনকি, প্রাইভেট গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স চলাচলেও তারা বাধার সৃষ্টি করেছে। স্কুল-কলেজগামী গাড়িগুলোও আটকে দিয়েছে তারা। পোড়া মবিল মাখানোর সাথে গতকাল যুক্ত হয় চালক ও যাত্রীদেরকে কান ধরে উঠবোস করানোর কর্মসূচি।
গতকাল সোমবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও শনিরআখড়ায় বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তিগত যানবাহনের চালকদের কান ধরে উঠবোস করাতে দেখা যায়। সিএনজি অটোরিকশা, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন চালককে গাড়ি থেকে নামিয়ে উঠবোস করায় শ্রমিকেরা। তবে আন্দোলন ডাকা সংগঠনের নেতারা বলছেন, দুষ্কৃতকারীরাই এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে। যারা আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চায় তারাই এমন ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে।
টার্মিনালগুলোতে মহড়া : গতকালও রাজধানীর সায়েদাবাদ, গাবতলী, গুলিস্তান, মহাখালীসহ বিভিন্ন টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে শ্রমিকেরা মহড়া দিচ্ছে। টার্মিনাল থেকে কোনো গাড়ি রাস্তায় বের হতে দেয়নি তারা। বিভিন্ন টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায় শত শত মানুষ অপেক্ষা করছে গাড়ির জন্য। কিন্তু কোনো গাড়ি ছাড়তে দেয়া হচ্ছে না। সায়েদাবাদ টার্মিনালের এক গাড়ির মালিক বলেন, তারা গাড়ি চালাতে চান। কিন্তু কিছু শ্রমিক বাধা দিচ্ছে।

ভরসা বিআরটিসি বাস : কর্মবিরতির শেষ দিনে গতকালও মানুষের ভরসা ছিল বিআরটিসি বাস। রাজধানীর বিভিন্ন রুটে বিআরটিসি চলতে দেখা গেছে। তাতে যাত্রী ছিল উপচে পড়া। সেখানে যাত্রী ওঠানোর ক্ষেত্রে কোনো শৃঙ্খলা দেখা যায়নি। যারা ধাক্কাধাক্কি করে বাসে উঠতে পেরেছেন তারাই গন্তব্যে গিয়েছেন। অন্যরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও বাসে চড়তে পারেননি।
যাত্রীদের চরম ভোগান্তি : গতকালও যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। রাজধানীর মতিঝিলে কামরুল নামে এক যাত্রী বলেন, তার মোহাম্মদপুর যাওয়ার কথা। প্রায় আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কোনো বাস পাননি। বিপ্লব নামে অপর এক পথচারী বলেন, তিনি ফার্মগেট থেকে আড়াই শ’ টাকা দিয়ে রিকশায় মতিঝিলে এসেছেন।
মানুষকে নাজেহাল করছে এরা কারা? : কর্মবিরতির নামে শ্রমিকেরা রাস্তায় মানুষকে নাজেহাল করলেও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী সাংবাদিকদের বলেছেন, যারা মানুষকে লাঞ্ছিত করেছে তারা শ্রমিকদের কেউ নয়। বহিরাগতরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে।

তবে ওসমান আলীর অভিযোগের বিরোধিতা করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ খোকন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যাত্রী, চালক ও শিক্ষার্থীদের মুখে পোড়া মবিল তারাই লাগিয়েছে। তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী ছাত্রদের ওপর প্রতিশোধ নিয়েছে তাদের গায়ে মবিল লাগিয়ে। এরা শ্রমিকদের দুর্বৃত্ত বানায়। তারা প্রকৃতপক্ষে দুর্বৃত্ত।’
সরকারকে ২১ দিনের আলটিমেটাম : এ দিকে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর কিছু ধারা সংশোধনসহ ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নে ২১ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। এখন যথারীতি যানবাহন চলবে। ২১ দিনেও তাদের দাবি বাস্তবায়ন না হলে ৭২ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
নির্ধারিত সময়ের পরও গাড়ি চলছে না
গতকাল সন্ধ্যা ৬টার পর পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও রাতেও কোনো গাড়ি রাস্তায় চলতে দেখা যায়নি। টার্মিনালগুলোতে খবর নিয়ে জানা গেছে রাতেও তারা দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়বে না।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, পরিবহন ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে গতকাল দূরপাল্লার বাস, ট্্রাকসহ গণপরিবহন চলাচল করেনি চট্টগ্রাম নগরী ও জেলার মহাসড়কগুলোতে। নগরের অভ্যন্তরে নামমাত্র কয়েকটি গণপরিবহন চলাচল করলেও দুর্ভোগের অন্ত ছিল না নগরবাসীর। অতিরিক্ত ভাড়া গুনে নগরবাসীকে যেতে হয়েছে গন্তব্যে। নগরীর বাইরে অবস্থানকারী লোকজনকে হেঁটে এবং রিকশা করে নগরে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। গতকাল বিকেল থেকে চট্টগ্রাম বন্দর ও আশপাশের আইসিডি থেকে জরুরি রফতানি কাজে নিয়োজিত কনটেইনারবাহী গাড়ি চলাচলের উদ্যোগ নেয় সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল সকাল থেকে পরিবহন শ্রমিকেরা নগরীর বিভিন্ন স্পটে অবস্থান নিয়ে গণপরিবহন ও ট্্রাক চলাচলে বাধা প্রদান করে। অনেককে মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
চবির শিক্ষকবাহী বাসে হামলা : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষকবাহী একটি বাসে পরিবহন শ্রমিকরা হামলা চালিয়েছে। গতকাল সকাল সোয়া ৮টায় নগরীর বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
২৫-৩০ জন পরিবহন শ্রমিক মারধর করে চালক দুলালের মুখে আলকাতরা লাগিয়ে দেয়। হামলাকারীরা তার মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তাকে চবি মেডিক্যালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
খুলনা ব্যুরো জানায়, দ্বিতীয় দিনের মতো গতকাল সোমবারও পরিবহন ধর্মঘট অব্যাহত থাকায় খুলনায় জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক সড়কগুলোতে কোনো ধরনের যানবাহন চলাচল করেনি। এমনকি অ্যাম্বুলেন্স ও ইজিবাইকসহ ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচলেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে পরিবহন শ্রমিকেরা। যেসব চালক যানবাহন নিয়ে রাজপথে নামছেন তাদের ধরে মুখে পোড়া মবিল মাখিয়ে দেয়া হয়েছে। সড়ক-মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ব্যারিকেড দিয়ে রাখা হয়।

ধর্মঘটের কারণে চাল, ডাল, তেলসহ সব নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যবাহী কাভার্ডভ্যান এবং ট্রাক খুলনায় ঢুকতে পারছে না। এ কারণে ধর্মঘট শেষ হওয়ার পরও কয়েকদিন দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত তেল ডিপো পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা থেকেও সব ধরনের জ্বালানি তেল সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ট্যাংকলরি শ্রমিকেরাও ধর্মঘটে যোগ দেয়ায় তেল লোড-আনলোড বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে পাম্পগুলোতে ইতোমধ্যেই জ্বালানি তেলের সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে।
টাঙ্গাইল সংবাদদাতা জানান, পরিবহন ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে কার্যত অচল ছিল পুরো টাঙ্গাইল জেলার সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা। দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়েনি। টাঙ্গাইলের ওপর দিয়েও অন্য কোনো জেলার যানবাচন চলাচল করেনি। জেলার অভ্যন্তরীণ ১১টি সড়কেও চলাচল করেনি কোনো যানবাহন। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।

নোয়াখালী সংবাদদাতা জানান, পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে গতকাল নোয়াখালীতে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সকাল থেকে জেলা শহর মাইজদী ও জেলার প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র চৌমুহনী শহর এবং জেলা সদর বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী, চাটখিল, সেনবাগ, কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট, সুবর্ণচর ও হাতিয়াসহ ৯টি উপজেলায় বাস-ট্রাক পিকআপ সিএনজিসহ কোনো যানবাহন চলাচল করেনি। সড়ক মহাসড়কগুলো ছিল একেবারে ফাঁকা। এ দিকে যানবাহন চলাচল না করায় হাজার হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হয়।
কুমিল্লা সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লায় দ্বিতীয় দিনের মতো পরিবহন ধর্মঘটে শ্রমিকদের বেপরোয়া আচরণে অচল হয়ে পড়েছে জনজীবন।
মহানগরীর তিনটি বাস ট্রার্মিনাল থেকে কোনো ধরনের বাস ছেড়ে যায়নি। বন্ধ রয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, কুমিল্লা-নোয়াখালী, কুমিল্লা সিলেট ও কুমিল্লা চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের যান চলাচল।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা আলেখারচর, পদুয়ার বাজার বিশ^রোড এলাকায় মহাসড়কের ওপর শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেছেন।

সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, সুনামগঞ্জে দ্বিতীয় দিনের মতো ভোর ৬টা থেকে পরিবহন ধর্মঘট পালন করেন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। ধর্মঘটের ফলে সুনামগঞ্জ থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি, সুনামগঞ্জ শহরেও প্রাইভেট গাড়ি, এমনকি ছোট ছোট যানবাহনগুলোকেও চলাচল করতে দেননি শ্রমিকেরা। ফলে সাধারণ মানুষকে পড়তে হয়েছে নানা সমস্যায়। বিশেষ করে স্কুল ও কলেজগামী ছাত্রছাত্রীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। এ দিকে শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে করেছেন। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের জেলা শাখার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমদের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি সেজাউল কবির, জেলা বাস-মিনিবাস চালক সমিতির সভাপতি সেতু মিয়া, সিনিয়র সদস্য ইসলাম মিয়া প্রমুখ।
রাজবাড়ী সংবাদদাতা জানান, রাজবাড়ীতে দ্বিতীয় দিনের মতো পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতি চলছে। গতকাল সকাল থেকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত দৌলতদিয়া ফেরিঘাট ছিল পরিবহন শূন্য। ব্যক্তিগত গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া কোনো গাড়ি পাড় হতে দেখা যায়নি দেশের ব্যস্ততম এ নৌরুট দিয়ে। বিআইডব্লিটিসি কর্তৃপক্ষ দৌলতদিয়া ঘাট সহকারী ব্যবস্থাপক সফিকুল ইসলাম জানান, সকাল থেকে কোনো পরিবহন দৌলতদিয়াতে আসেনি। এতে বিআইডব্লিটিসির গত দুই দিনে প্রায় অর্ধকোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, পরিবহন শ্রমিক ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে গতকাল নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে লেগুনা ও অটোরিকশা যাত্রীদের ওপর পরিবহন শ্রমিকেরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় আট যাত্রী আহত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও আহতরা জানান, গতকাল সকাল থেকেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বরপা ও বিশ্বরোড এলাকায় অবস্থান নেয় পরিবহন শ্রমিকেরা। তারা লেগুনা, ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা, সিএনজি চালিত অটোরিকশাসহ ছোট-বড় যানবাহন চলাচলে বাধা দিতে থাকে। বরপা এলাকায় পরিবহন শ্রমিক বাবুল ও আজাহারসহ তাদের লোকজন একটি লেগুনা আটক করে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালায়। এ সময় আনোয়ার নামে এক যাত্রী প্রতিবাদ করেন। একপর্যায়ে শ্রমিকেরা যাত্রীদের ওপর হামলা চালিয়ে চার যাত্রীকে জখম করে। অপর দিকে, বিশ^রোড এলাকায় পরিবহন শ্রমিক রাসেলসহ তাদের লোকজন ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা থেকে যাত্রীদের নামিয়ে অপমান করে। এতে প্রতিবাদ করায় রেহেনা আক্তার, সালাম মিয়া, আকবর আলী ও শাকিলকে চর-থাপ্পড় মারা হয়। তবে শ্রমিকেরা মারধরের অভিযোগটি মিথ্যা বলে দাবি করেন।

শার্শা (যশোর) সংবাদদাতা জানান, পরিবহন ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে বেনাপোল বন্দর থেকে কোনো মালামাল খালাস হয়নি। ভারত থেকে পণ্য আমদানি হলেও শ্রমিকেরা ভারতে কোনো পণ্য রফতানি হতে দেয়নি। ধর্মঘটে গত দু’দিনে সরকার ৩৬ কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ভারত ফেরত শত শত পাসপোর্ট যাত্রী আটকা পড়েছেন বেনাপোল চেকপোস্টসহ বিভিন্ন পরিবহন কাউন্টারে। এতে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। অনেকেই আবার বিকল্প ব্যবস্থায় ভ্যান, রিকশা, টেম্পো ও রেলে করে আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন। বেনাপোল থেকে দূরপাল্লার কোনো পরিবহন ছেড়ে যায়নি। কয়েক শ’ পণ্যবোঝাই ট্রাক ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় আটকে আছে বন্দর এলাকায়।

সাভার (ঢাকা) সংবাদদাতা জানান, ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন গতকাল ঢাকার প্রবেশ পথ আমিনবাজারসহ সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে রিকশা, ব্যক্তিগত গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া স্থানীয় এবং দূরপাল্লার কোনো পরিবহন চলাচল করতে দেখা যায়নি। এতে জনজীবনে নেমে এসেছে চরম ভোগান্তি। অফিসগামী ও স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের হেঁটে এবং অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে যেতে দেখা যায়। যেসব কলেজে এইচএসসি নির্বাচনী পরীক্ষা ছিল ধর্মঘটের কারণে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

ময়মনসিংহ অফিস জানায়, পরিবহন ধর্মঘটের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি এবং অ্যাম্বুলেন্সে নবজাতকের মৃত্যুর জন্য দায়ীদের বিচারের দাবিতে গতকাল বিকেলে ময়মনসিংহে যৌথভাবে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে জনউদ্যোগ ও জেলা নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি। শহরের ফিরোজ জাহাঙ্গীর চত্বরে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেনÑ সিপিবি সভাপতি অ্যাডভোকেট এমদাদুল হক মিল্লাত, জনউদ্যোগের সভাপতি অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু, অ্যাডভোকেট শিব্বির আহমেদ লিটন, নারী নেত্রী নুরজাহান ইয়াসমিন প্রমুখ।

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতির দ্বিতীয় দিনে গতকাল রাজশাহীতে যোগাযোগব্যবস্থা কার্যত অচল হয়ে পড়ে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েন বিভিন্ন রুটের দূরপাল্লার যাত্রীরা। রাজশাহী নগরীর নওদাপাড়া কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও শিরোইলে থাকা ঢাকা বাস টার্মিনাল থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। ট্রেনে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/360979