পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে রোববার যানবাহন না পেয়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ভ্যানে চড়ে ও হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছান সাধারণ মানুষ -সমকাল
২৯ অক্টোবর ২০১৮, সোমবার, ১১:১০

পথে পথে উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিকদের অভব্য আচরণ, দুর্ভোগ

পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটে রাজধানীর মতো সারাদেশে রোববার সব ধরনের গণপরিবহন ও পণ্যবাহী যান চলাচল বন্ধ ছিল। এতে সারাদিন প্রচণ্ড ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয় বিভিন্ন রুটের যাত্রীদের। প্রায় সব জায়গাতেই সড়ক-মহাসড়কগুলোতে ছিল লাঠি হাতে শ্রমিকদের মহড়া। কোথাও কোথাও শ্রমিকরা ব্যক্তিগত বিভিন্ন যান চলাচলেও বাধা দেয়। প্রাইভেটকার, অটোরিকশার চালক এবং যাত্রীদের জোর করে নামিয়ে তাদের মুখে ও জামাকাপড়ে মাখিয়ে দেওয়া হয় পোড়া মবিল ও থুতু। এ ধরনের অভব্যতা থেকে বাদ পড়েননি উচ্চ মাধ্যমিকের নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশ নিতে যাওয়া শিক্ষার্থীরাও।

নারায়ণগঞ্জে সরকারি মহিলা কলেজের বেশ কয়েক ছাত্রীর পোশাকে এদিন পোড়া মবিল মাখিয়ে দেয় শ্রমিকরা। সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে মারধর করা হয় বরযাত্রীবাহী একটি গাড়ির চালককে।
এদিকে শ্রমিক ধর্মঘটের ফলে বেনাপোল বন্দরে মালপত্র খালাস ও রফতানি বন্ধ আছে। দূরপাল্লার কোনো পরিবহন না ছাড়ায় সেখানে আটকা পড়েছেন ভারত ফেরত শত শত যাত্রী। এ ছাড়া ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দরেও। রাজশাহীতে কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়েছে বাস চালক ও শ্রমিকদের মধ্যে। ব্যুরো, অফিস, নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর।

চট্টগ্রাম ও পটিয়া : ধর্মঘটের কারণে রোববার নগরী ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ ছিল। পথে পথে শত শত মানুষ অপেক্ষা করলেও যানবাহনের দেখা মেলেনি। সুযোগ বুঝে ভাড়া বাড়িয়ে দেন রিকশা ও অটোরিকশা চালকরা। মাঝেমধ্যে কিছু টেম্পো রাস্তায় নামার চেষ্টা করলে পিকেটিং শুরু করেন পরিবহন শ্রমিকরা। কোথাও কোথাও যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে গাড়ির চাবি কেড়ে নেওয়া হয়। চালক ও যাত্রীদের জোর করে নামিয়ে মুখে ও গাড়িতে মাখিয়ে দেওয়া হয় পোড়া মবিল।
খুলনা : নগরীর মহেশ্বরপাশা এলাকায় এবং যশোর-খুলনা মহাসড়কে পরিবহন শ্রমিকরা ইজিবাইক, প্রাইভেটকার চালকদের মুখে পোড়া মবিল লাগিয়ে দেয়। এ ছাড়া সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালের সামনের সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলেও বাধা দেয়। এ সময় টার্মিনালের বিপরীতে সোনাডাঙ্গা থানা এবং ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও শ্রমিকদের কেউ বাধা দেয়নি।
রাজশাহী : সকালে দু-একটি বাস রাজশাহী পৌঁছানোর সময় হামলার শিকার হয় ট্রাক শ্রমিকদের। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর নওদাপাড়া আমচত্বর এলাকায় একটি বাস থামিয়ে এর চালকে মারধর করে ট্রাক শ্রমিকরা। এর জেরে শিরোইল এলাকায় বাস চালকরা একত্রিত হয়ে কয়েকটি ট্রাক ভাংচুর এবং চালককে মারধর করে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে আবারও ট্রাক শ্রমিকরা একত্রিত হয়ে শিরোইল এলাকায় বাসচালকদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন।
সিলেট : দক্ষিণ সুরমার চণ্ডিপুল, হুমায়ূন রশীদ চত্বর, উত্তর সুরমার তেমূখী, মদীনা মার্কেট, ওসমানী মেডিকেল কলেজ, টুকেরবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় পরিবহন শ্রমিকরা নৈরাজ্য চালায়। সড়কে কোনো অটোরিকশা দেখামাত্রই তারা সেগুলো আটকে দেয়। এ ছাড়া অনেক প্রাইভেটকারও তারা আটকে চালকদের হেনস্তা করে।

বরিশাল : সকালে নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সংলগ্ন বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কে শ্রমিকরা লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান নেয়। এ সময় মহাসড়ক ধরে আসা সব ধরনের যানবাহন চলাচলে বাধা দেওয়া হয়।
নারায়ণগঞ্জ ও সোনারগাঁ : দুপুর ১২টার দিকে সাইনবোর্ড এলাকা পার হওয়ার সময় হঠাৎ শ্রমিকরা নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের বাস থামিয়ে ছাত্রীদের নামতে বাধ্য করে। এ সময় শ্রমিকরা বাসচালককে মারধর করে ও তার মুখে শরীরে পোড়া মবিল লেপে দেয়। ছাত্রীরা এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে তাদেরও অকথ্য ভাষায় গালাগাল এবং ইউনিফর্মে মবিল লাগিয়ে দেওয়া হয়। পরে শ্রমিকরা কলেজবাসটি ভাংচুর করে। এ সময় পুলিশ আশপাশে থাকলেও শ্রমিকদের বাধা দেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন কলেজের অধ্যক্ষ বেদৌরা বিনতে হাবিবা। এদিন সোনারগাঁয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও ছিল উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিকদের উপস্থিতি। সেখানেও শ্রমিকরা বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে চালক ও যাত্রীদের মারধর এবং তাদের গায়ে পোড়া মবিল-থুতু মাখিয়ে দেয়। এদিন মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় সোনারগাঁ উপজেলা শ্রমিক লীগের ব্যানারে ধর্মঘটের পক্ষে মিছিলও হয়।

বেনাপোল : ধর্মঘটের কারণে সকাল থেকে বন্ধ ছিল আমদানিকৃত মাল খালাস। এদিন বাংলাদেশে থেকে কোনো পণ্যবোঝাই ট্রাক ভারতে প্রবেশ করেনি। এ ছাড়া ধর্মঘটের কারণে আটকা পড়েছেন ভারত ফেরত শত শত মানুষ।
পঞ্চগড় : শ্রমিকদের কর্মবিরতির ফলে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর থেকে সব ধরনের পণ্যবাহী পরিবহন বন্ধ রয়েছে। এতে বন্দরে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
শেরপুর (বগুড়া) : সকাল থেকেই ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে লাঠি হাতে অবস্থান নেয় উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিকরা। সব ধরনের যানবাহনের পাশাপাশি রিকশা-ভ্যান চলতেও তারা বাধা দেয়। দুপুরের দিকে বেশ কয়েকটি যানবাহনে ভাংচুর ও চালকদের মারধর করা হয়। পাশাপাশি তাদের শরীরে মাখিয়ে দেওয়া হয় থুতু ও পোড়া মবিল। একপর্যায়ে নৈরাজ্য ঠেকাতে গিয়ে পুলিশের এসআই ওসমান গনি বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ঘেরাওয়ের মুখে পড়েন। এ সময় ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করে শ্রমিকরা।
জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) : সকাল থেকে পৌর শহরের বিভিন্ন স্থানে পিকেটিং করে শ্রমিকরা। দুপুরে উপজেলার মীরপুর থেকে বরযাত্রীবাহী একটি মাইক্রোবাস থামিয়ে এর চালককে মারধর করা হয়।
এ ছাড়া রংপুর, বগুড়া, পটুয়াখালী, ঝিনাইদহ, গাইবান্ধা, বাগেরহাট, জয়পুরহাটের কালাই, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মুন্সীগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুড়িগ্রাম, মানিকগঞ্জের শিবালয়, ময়মনসিংহের ত্রিশাল, কুমিল্লার বুড়িচংসহ নানা জায়গায় যান চলাচলে বাধা দেয় শ্রমিকরা। ধর্মঘটের কারণে সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুর বাঘাবাড়ী নৌবন্দর থেকে পণ্যবাহী কোনো ট্রাক মালপত্র নিয়ে যেতে পারেনি।

http://samakal.com/bangladesh/article/18101788