২৯ অক্টোবর ২০১৮, সোমবার, ১০:৫৭

পাঠ্যবই নিয়ে সংকট

যে কোনো মূল্যে সমাধান করুন

বর্তমান সরকারের অন্যতম একটি সাফল্য হল বছরের প্রথম দিনে স্কুলছাত্রদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দিতে পারা। কিন্তু এবার যথাসময়ে ছাত্রদের হাতে সব পাঠ্যবই তুলে দেয়া যাবে কিনা, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা।
অক্টোবর মাসেই যে বইয়ের ছাপার কাজ শেষ হওয়ার কথা, তা নতুন করে নির্ধারিত ৩০ নভেম্বর তারিখে পাওয়া তো দূরের কথা, ডিসেম্বর মাসেও পাওয়া যাবে কিনা, এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর পেছনে অগ্রিম টাকা দিয়ে মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলোর কাগজ না পাওয়া, নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে কাগজ কিনতে জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ড- এনসিটিবির কয়েক কর্মকর্তার চাপ এবং ‘১৫ পয়সা’ কমিশন ও অদৃশ্য সিন্ডিকেট সংক্রান্ত জটিলতা, সর্বোপরি এখন গড়িমসি করলে শেষ সময়ে যেনতেন কাগজে ছাপা বই নিতে এনসিটিবি বাধ্য হবে এবং মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলো অবৈধভাবে বড় মুনাফা করতে পারবে- এমন ‘শুভঙ্করের ফাঁকির’ বিষয় জড়িত রয়েছে। আমরা মনে করি, বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়ার সফলতা ধরে রাখার জন্য বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

এছাড়া প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় স্তরের বই ছাপানো নিয়ে জটিলতা তৈরির পেছনে মুদ্রাকরদের কাঙ্ক্ষিত ঋণ না পাওয়া, এনসিটিবির বিল পরিশোধে বিলম্ব, এমনকি অগ্রিম টাকা দেয়ার পরও কাগজ কলগুলো কেন কাগজ দিচ্ছে না, তা-ও খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে হবে।
জানা যায়, ৩০ অক্টোবরের মধ্যে ৩৬ কোটি ৬ লাখ পাঠ্যবই সরবরাহ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল সরকার। কিন্তু শনিবার পর্যন্ত মাত্র ১৬ কোটি বই সরবরাহ করা হয়েছে এবং ২০ কোটি বই সরবরাহ এখনও বাকি। উদ্বেগের বিষয়, বর্তমানে দিনপ্রতি যে হিসাবে বই সরবরাহ করার কথা তার ২০ শতাংশও সরবরাহ করা হচ্ছে না।

সাতটি প্রতিষ্ঠান এখনও একটি বইও দেয়নি এবং কিছু প্রতিষ্ঠান ছাপার কাজ বন্ধ করে দেয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কেবল সরকারের সফলতার জন্যই নয়, কোমলমতি শিশুদের নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নেয়ার মতো মনস্তাত্ত্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সময়মতো বই সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটানো প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেয়ার বিকল্প নেই।

এনসিটিবি চেয়ারম্যান অবশ্য সিন্ডিকেট ও অভ্যন্তরীণ অনিয়মের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন এবং নির্দিষ্ট সময়ে বই পাওয়ার আশার বাণী শুনিয়েছেন। এখন তার উচিত বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া এবং নিজের দায়িত্ব- বছরের প্রথম দিনে পাঠ্যপুস্তক পৌঁছানোর বিষয়টিতে যেন বিলম্ব না ঘটে তা নিশ্চিত করা। প্রয়োজনে সরকারের দায়িত্বশীল মহলের সহায়তা নিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বছরের প্রথম দিনেই শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই তুলে দেয়ার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নেয়া হবে বলে আমরা আশাবাদী

 

https://www.jugantor.com/todays-paper/editorial/105834