২৯ অক্টোবর ২০১৮, সোমবার, ১০:৫৪

কাল উপস্থাপন হচ্ছে ২৩টি প্রকল্প * অর্থের অপচয় হওয়ার আশঙ্কা

একের পর এক রেকর্ড ভাঙছে একনেক

জাতীয় সংসদ নির্বাচন কড়া নাড়ছে দোরগোড়ায়। কিন্তু উন্নয়ন প্রকল্প পাসের হিড়িক থামছে না। প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রে একের পর এক রেকর্ড ভাঙছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। মঙ্গলবার (২৩ অক্টোবর) সর্বোচ্চ সংখ্যক (২১টি) প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। আগামীকাল মঙ্গলবার সেই রেকর্ড ভাঙতে যাচ্ছে একনেক। এদিন সর্বোচ্চ সংখ্যক (২৩টি) উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হতে পারে।

জানা গেছে, নতুন প্রকল্পগুলোর মধ্যে সড়ক-মহাসড়ক তৈরি, উন্নয়নসহ জনতুষ্টি সংক্রান্ত একাধিক প্রকল্প রয়েছে। এতে ২৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নির্বাচনের কারণে যাতে উন্নয়ন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত না হয়, সেজন্য প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, নির্বাচনকে সামনে রেখেই এসব প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। উদ্দেশ্য হল- যারা নির্বাচন করবেন তারা যেন নির্বাচনী প্রচারে এগুলো তুলে ধরতে পারেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ রোববার যুগান্তরকে বলেন, তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে এসব প্রকল্পের যাচাই-বাছাই হয়তো ঠিকমতো করাই হয়নি। অর্থাৎ সম্ভাব্যতা যাচাইও হয়নি। তাই এসব প্রকল্পের মান নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। এছাড়া এসব প্রকল্প ঠিকমতো বাস্তবায়ন নাও হতে পারে। অর্থের অপচয় হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। নির্বাচনী বিবেচনায় এত প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া যৌক্তিক নয়। শেষ সময়ে সরকারের এ রকম সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হচ্ছে না।
পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো. জিয়াউল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, তাড়াহুড়ো তো একটু আছে। কেননা সবাই ভাবছেন আগামী দুই মাসে হয়তো একনেক বৈঠক হবে না। তাই তারা আগেভাগেই প্রকল্প পাস করাতে চাচ্ছেন। কিন্তু আমরা মনে করি একনেক বন্ধ হবে না। রুটিন কাজ হিসেবে হয়তো এটি চলবে। এছাড়া পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বারবার বলছেন, এর সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। উন্নয়ন কার্যক্রম যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেজন্য প্রকল্পগুলোর অনুমোদন দেয়া হচ্ছে।
সূত্র জানায়, একনেকে উপস্থাপন হতে যাওয়া মাদানি এভিনিউ থেকে বালু নদী পর্যন্ত মেজর রোড প্রশস্তকরণ এবং বালু নদী থেকে শীতলক্ষ্যা নদী পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ (প্রথম পর্ব) প্রকল্পটির মাধ্যমে ৪ লেন রাস্তা নির্মাণ এবং বিদ্যমান রাস্তার উন্নয়ন করা হবে। এটি বাস্তবায়নে এক হাজার ২৫৯ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এছাড়া রাজউক পূর্বাচল ৩০০ ফুট মহাসড়ক থেকে মাদানি এভিনিউ পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি নতুন প্রকল্প। এটি বাস্তবায়নে ৪৫৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। নতুন করে ৯টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৪৩৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। স্কুলগুলো রংপুর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, জয়পুরহাট এবং শ্রীমঙ্গলের চা বাগান এলাকায় নির্মাণ করা হবে। একই সঙ্গে বেশ কিছু প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হল- বঙ্গবন্ধু জাদুঘর নির্মাণ প্রকল্পের মূল ব্যয় ২৭৬ কোটি টাকা থেকে ৩৭৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা বাড়িয়ে এখন ৬৫৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা মোট ব্যয় ধরা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ১৩৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ ব্যয় বাড়ছে। তৃতীয়বারের মতো কর্ণফুলী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে। এটির মূল ব্যয় ছিল ৪৩৯ কোটি টাকা। এর আগে প্রথম, দ্বিতীয় ও বিশেষ সংশোধনীর মাধ্যমে ৬৮২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা মোট ব্যয় ধরা হয়। এখন ১১৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা বাড়িয়ে ৭৯৭ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হচ্ছে।

একনেকে উপস্থাপন হতে যাওয়া অন্য উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে- বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন পর্যন্ত নতুন ডুয়েলগেজ স্টেশন নির্মাণ প্রকল্প, ঈশ্বরদী থেকে পাবনা হয়ে ঢালারচর পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মাণ (দ্বিতীয় সংশোধিত), গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ১ থেকে ৫নং জোনের অভ্যন্তরীণ রাস্তা, নর্দমা ও ফুটপাত নির্মাণ, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা, নর্দমা ও ফুটপাত নির্মাণ ও উন্নয়নসহ সড়কের নিরাপত্তা, ডিজিএফআই’র টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি অবকাঠামো, মানবসম্পদ এবং কারিগরি সক্ষমতা উন্নয়ন প্রকল্প, ডাক অধিদফতরের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন এবং সম্প্রসারণ, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থল সংরক্ষণ ও উন্নয়ন, বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশ পুলিশের জন্য ৯টি আবাসিক টাওয়ার নির্মাণ, ন্যাশনাল একাডেমি ফর অটিজম অ্যান্ড নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅ্যাবিলিটিজ (দ্বিতীয় সংশোধিত), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা, ২৩ জেলায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন, পতেঙ্গায় বিএনএ বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স নির্মাণ, স্মলহোল্ডার এগ্রিকালচার কম্পিটিটিভনেস প্রজেক্ট, কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটসমূহের কার্যক্রম শক্তিশালীকরণ, ঢাকায় বিসিক কেমিক্যাল পল্লী স্থাপন, গাজী ওয়্যারস লিমিটেড শক্তিশালীকরণ এবং ৫০০-৬০০ মেগাওয়াট এলএনজি বেইজড কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্টের জন্য ফিজিবিলিটি স্টাডি ও গ্যাস সঞ্চালন লাইন নির্মাণ প্রকল্প।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/105905