২৮ অক্টোবর ২০১৮, রবিবার, ১০:৪৯

ইভিএম ব্যবহার করে সরকার পাতানো নির্বাচন করতে চাচ্ছে -রিজভী

নির্বাচন কমিশন ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে পাতানো নির্বাচন করতে চাচ্ছে বলে অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, জনগণের সংশয় যে শেখ হাসিনা নির্বাচন করবেন না। গতকাল শনিবার সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।

রিজভী বলেন, বিশ্বের দেশে দেশে প্রত্যাখ্যাত ও বিতর্কিত ইভিএম ব্যবহার করে নির্বাচন কমিশন পাতানো নির্বাচন করতে চাচ্ছে। বিএনপি এসব ইভিএম মেলার প্রতিবাদ ও প্রত্যাখ্যান করছে।
তিনি বলেন,জনগণের সকল মতামতকে উপেক্ষা করে ভোট কারচুপির জন্য সরকারি হুকুমে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যবহার করতে দেশের আটটি অঞ্চলে ইভিএম মেলা করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। শনিবার খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, ফরিদপুর, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা অঞ্চলে এই মেলা অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্বের দেশে দেশে প্রত্যাখ্যাত ও বির্তকিত ইভিএম ব্যবহার করে নির্বাচন কমিশন পাতানো নির্বাচন করতে চাচ্ছে। বিএনপি এসব ইভিএম মেলার প্রতিবাদ ও প্রত্যাখ্যান করছে। ইভিএম মেলাতে বিএনপি বা অঙ্গ সংগঠনের কোনো নেতা-কর্মী অংশগ্রহণ করবে না।
বিএনপির এই নেতা বলেন, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি এবং হবেও না। তার অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বিএনপি যে নির্বাচন করবে সেটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে। কারণ বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে যত ভোট হয়েছে সব ভোট হয়েছে সন্ত্রাসমূখর, উৎসবমূখর নয়। ভোট ডাকাতি হয়েছে, জনগণকে ভোট দিতে দেয়া হয়নি।
জনগণের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। সুতরাং জনগণের মনে বড় ধরণের সংশয় হচ্ছে যে, শেখ হাসিনাই নির্বাচন করবেন না। কারণ সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলে তার বারোটা বাজবে। এই কারণেই তিনি একতরফা নির্বাচনেরই যোগাড়যন্তর করছেন। নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে নানা ধরণের নীল নকশা আঁটছেন।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের ভোট দেয়ার গ্যারান্টিাই হচ্ছে-সেই নির্বাচন হবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে। নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। নির্বাচনের আগে অবশ্যই সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাজা প্রত্যাহারসহ রাজবন্দীদের মুক্তি দিতে হবে। রাজনৈতিক সকল মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। অবশ্যই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবি সরকারকে মানতে হবে।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে ভারতের শিলংয়ের আদালত বেকসুর খালাস দেয়ায় রিজভী বলেন, এই রায়ে ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতা সম্পর্কে আমাদের শ্রদ্ধা আরো বৃদ্ধি পেলো। আমি ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ আইনী প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার জন্য। আমরা আশা করবো যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সালাহউদ্দিন আহমেদকে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দেয়া হবে। এ বিজয় এ দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের বিজয়।
তিনি বলেন, অনলাইন অ্যাক্টিভিষ্ট রাজন ব্যাপারী কেরাণীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি লাভের পর হদিস পাচ্ছে না তার পরিবার। গতকাল বিকেলে কারাগার থেকে বের হলে র‌্যাব জেলগেট থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায়। কেইলিং মার্মা নামে র‌্যাব-১০ এর একজন কর্মকর্তা জেলগেট থেকে লিখিত দিয়ে রাজনকে তুলে নিয়ে আসে। কিন্তু তারপর থেকে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করছে র‌্যাব। এটি আতঙ্কজনক, অশুভ কোনো উদ্দেশ্যেই তাকে জেলগেট থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। র‌্যাবের হেফাজতেই রাজন আছে, কিন্তু এখনো তা স্বীকার করা হচ্ছে না। রাজনের পরিবার উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার মধ্যে দিন যাপন করছে। আমি রাজনের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং অবিলম্বে তাকে জনসমক্ষে হাজির করে তার মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।

দেশব্যাপী নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে রিজভী বলেন, ‘দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা বিএনপির সভাপতি এবং উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ্ মো. শামীম হোসেন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো. সাঈদ, চট্টগ্রামের চকবাজার থানা বিএনপি নেতা ফয়েজ আহম্মেদ, ওমর ফারুকসহ ২৫ জনের অধিক, খুলশি থানা যুবদলের এরশাদ হোসেন ও মনোয়ার মনুসহ ১২ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলা যুবদলের হাফিজুল ইসলাম, সুমন আহম্মেদসহ ৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ এবং অনেক বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে-বাড়িতে হামলা করে ভাঙচুরসহ পরিবারের মহিলা সদস্যদের সঙ্গে অশোভন আচণর ও হুমকি-ধামকি প্রদর্শন করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের স্পষ্ট ধারণা, ওরা সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খা বাহিনীর সদস্য মনে হলেও তারা যুবলীগ ও ছাত্রলীগের পরিচিত সশস্ত্র ক্যাডার।

তিনি বলেন, ব্রাহ্মণাবাড়িয়া জেলা যুবদলের পারভেজ, বাঞ্ছারামপুর উপজেলা ছাত্রদলের ওমর ফারুক, মোশারফ হোসেন, সোহেল আরমান, আব্দুল্লাহ আল-মামুন, আনোয়ার হোসেন, ইব্রাহিম, সাহাদ, আব্দুল্লাহ, মো. ইব্রাহিম, বিপ্লব এবং শিপন সহ মোট ১৬ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মেহেরপুরের গাংনীতে বিএনপি নেতা আব্দুস সাত্তার, আব্দুল আলী সহ মোট ৫০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার এবং প্রায় ৫০০ জন নেতাকর্মীর বাড়িতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতারের নামে ব্যাপক তা-ব চালিয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে অশোভন আচরণসহ বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে। ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলা বিএনপি নেতা মো. আইয়ুব খানকে পুলিশ কিছুক্ষণ আগে গ্রেফতার করেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।
সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের সহ-দফতর সম্পাদক মুহাম্মদ মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ প্রমুখ।

http://www.dailysangram.com/post/351103