২৫ অক্টোবর ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:২৫

মজুরি নিয়ে পোশাক খাতে অস্বস্তি

১২০০ কারখানা বন্ধ চলছে শ্রমিক ছাঁটাই

নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছে দেশের তৈরী পোশাক শিল্পখাত। বাড়তি খরচের চাপে রফতানি বাণিজ্যে ৮৮ শতাংশ অবদান রক্ষাকারী এ খাতের উদ্যোক্তারা ভালো নেই। ৪৫ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী এ খাতের জন্য নির্ধারিত নতুন বেতন কাঠামো নিয়ে অসন্তুষ্টি আছে শ্রমিকদের মাঝেও। ৮১ শতাংশ বাড়িয়ে নির্ধারণ করা ৮০০০ টাকার ন্যূনতম মজুরি কার্যকর হচ্ছে আগামী ১ নভেম্বর থেকে। বাড়তি চাপ সামলাতে ইতোমধ্যে শ্রমিক ছাঁটাই করতে শুরু করেছেন অনেক উদ্যোক্তা। তৈরী পোশাক শিল্পমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর দাবিÑ দেশের শ্রমঘন এই শিল্পখাত এমনিতেই বৈশ্বিক নানামুখী চাপে রয়েছে। চাপ সামলাতে ব্যর্থ হয়ে গত চার বছরে বন্ধ হয়ে গেছে ১২০০ কারখানা। এমন পরিস্থিতিতে নতুন মজুরি কাঠামো মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য গত ১৩ সেপ্টেম্বর ন্যূনতম মজুরি কাঠামো ঘোষণা করেছে সরকার। দীর্ঘদিনের চর্চা অনুযায়ী শ্রমিক-মালিক এবং নিরপেক্ষ সদস্য নিয়ে একজন সিনিয়র জেলা জজের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি মজুরি নির্ধারণের রেওয়াজ থাকলেও এবারই প্রথম মজুরি নির্ধারণে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন হয়। ৫১ শতাংশ মজুরি বাড়ানোর যে সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন সেটি প্রতিপালনের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শিল্পমালিকেরা। তাদের আশঙ্কা, বাড়তি ব্যয় মেটাতে ব্যর্থ হয়ে নতুন করে বন্ধ হয়ে যাবে আরো অনেক কারখানা।
এ দিকে আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে ব্যর্থ হয়ে গত চার বছরে ১২০০টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন তৈরী পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি মো: সিদ্দিকুর রহমান। নিকট ভবিষ্যতে আরো অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেন তিনি।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ২০১৪-২০১৮ সময়ে আমাদের অন্যতম প্রধান বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের পোশাকের দরপতন হয়েছে ১১.৭২ শতাংশ। অন্য দিকে এ সময়ে পোশাকের গড় উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ২৯.৫৪%। ২০১৩ পরবর্তী সময়ে রিমেডিয়েশন বাবদ কারখানাগুলোতে ৫ থেকে ২০ কোটি টাকা খরচ করতে হচ্ছে, যার অর্থায়ন করতে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার তথ্য জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ২০১৪ সালে বিশ্বের পোশাক রফতানির পরিমাণ ছিল ৪৮৩ বিলিয়ন ডলার, যা ২০১৭ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৪৫৪ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ উৎপাদনকারী দেশগুলোতে ক্রেতাদের চাহিদা কমেছে, যা মূল্যভিত্তিক বাজার প্রতিযোগিতাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় রফতানি প্রবৃদ্ধির দিক থেকে আমরা পিছিয়ে পড়েছি।
শ্রমিক ছাঁটাই প্রসঙ্গে সরকার সমর্থক জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি এবং নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সদস্য সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, বড় কারখানাগুলোতে এখনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে যারা সাব কন্ট্রাক্টে কাজ করছে এমন ছোট ও মাঝারি কারখানায় নতুন মজুরি কাঠামো অতিরিক্ত বোঝা হয়ে দাঁড়াবে, এমন অজুহাতে শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে। এ ব্যাপারে তারা তালিকা তৈরি করছেন, শ্রম মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলছেন, যাতে শ্রমিক তার ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত না হন।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/359667