২৪ অক্টোবর ২০১৮, বুধবার, ৯:৫৪

ঢাবি ‘ঘ’ ইউনিটের উত্তীর্ণদের নিয়ে নতুন পরীক্ষা

আন্দোলনকারী চার ছাত্রকে ছাত্রলীগের মারধর * নতুন কমিটির মাধ্যমে পরীক্ষা গ্রহণের দাবি * ডিন সাদেকা হালিমের পদত্যাগ দাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত সমন্বিত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার বিতর্কিত ফলাফল অবশেষে বাতিল করা হয়েছে। প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় দেশব্যাপী তীব্র সমালোচনার মুখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নতুন করে পরীক্ষা গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে। তবে পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হয়েছেন শুধু তারা এ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। মঙ্গলবার ঢাবি ডিন কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, চলতি শিক্ষাবর্ষে ঘ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নিয়ে পুনরায় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ভিসি অফিস সংলগ্ন লাউঞ্জে ঢাবি ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ডিনস্ কমিটির জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
‘ঘ’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষার প্রধান সমন্বয়কারী ও যুগ্ম সমন্বয়কারী ডিনরা পরীক্ষার তারিখ ও সময় নির্ধারণ করবেন। যথাসময়ে ঢাবি ওয়েবসাইট ও গণমাধ্যমে তা প্রকাশ করা হবে। এ বিষয়ে ভিসি আখতারুজ্জামান বলেন, উত্তীর্ণ ১৮ হাজার ৪৬৩ জন শিক্ষার্থীর পুনরায় পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। নতুন পরীক্ষার তারিখ পরীক্ষা সমন্বয়কারী ও যুগ্ম সমন্বয়কারী ডিনরা বসে সিদ্ধান্ত নেবেন।

১২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। পরীক্ষা শুরুর আগে ৯টা ১৭ মিনিটে প্রশ্নপত্র পাওয়া যায়। পরীক্ষা শেষে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সঙ্গে মেলানো হলে বাংলা অংশে ১৯টি, ইংরেজি অংশে ১৭টি, সাধারণ জ্ঞান অংশে ৩৬টিসহ মোট ৭২টি প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়া যায়। কিন্তু পরীক্ষা বাতিল না করে কর্তৃপক্ষ ফলাফল প্রকাশ করে।
এ পরীক্ষা বাতিল করে পুনরায় পরীক্ষা গ্রহণের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায় থেকে আন্দোলন হয়। এ ঘটনায় আমরণ অনশনে বসেন এক শিক্ষার্থী। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, প্রগতিশীল ছাত্রজোট, ছাত্রদল, সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দ, শিক্ষকদের সাদা দল, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ দফায় দফায় কর্মসূচি পালন করে। সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা না নিতে পারায় বিভিন্ন সংগঠনের আন্দোলন থেকে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিমের পদত্যাগের দাবি ওঠে। দাবি না মানলে তারা কঠোর আন্দোলনেরও হুঁশিয়ারি দেয়। ফলাফল বাতিলের সিদ্ধান্তকে বিভিন্ন মহল থেকে স্বাগত জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের বিক্ষোভ মিছিল, চারজনকে ছাত্রলীগের মারধর : পুনরায় পরীক্ষা নেয়াসহ তিন দফা দাবিতে মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। পরীক্ষা বাতিল না করলে প্রতিটি বিভাগে তালা ঝুলানোর ঘোষণা দেয় তারা। বিক্ষোভ মিছিলটি রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার হয়ে মধুর ক্যান্টিন, লেকচার থিয়েটার, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, প্রশাসনিক ভবন, স্মৃতি চিরন্তন হয়ে আবার রাজু ভাস্কর্যে এসে শেষ হয়। মিছিলে পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান, ফারুক হোসেন, মো. আতাউল্লাহ, বিন ইয়ামিন মোল্লাসহ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়।
রাজু ভাস্কর্যে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তারা অবিলম্বে পুনরায় পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানান। সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হোসেন তিন দফা দাবি পেশ করেন। এগুলো হলো- ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষা বাতিল করে পুনরায় পরীক্ষা নিতে হবে, প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত মূল হোতাদের শনাক্ত করে অবিলম্বে বিচারের আওতায় আনতে হবে এবং বিগত সেশনে জালিয়াতি করে যারা ভর্তি হয়েছে তাদের ছাত্রত্ব ও সনদ বাতিল করতে হবে।

পরিষদের আহবায়ক হাসান আল মামুন বলেন, মিছিল শেষে ফেরার পথে পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হোসেন, রাতুল সরকার, আতাউল্লাহ ও তুহিন ফারাবিকে মারধর করেছে ছাত্রলীগ। মিলন চত্বরের যাত্রী ছাউনির সামনে ছাত্রলীগের কয়েকজন ক্যাডার তাদের মারধর করে। দায় এড়াতে তাদের বিরুদ্ধে ইভটিজিংয়ের অভিযোগ আনা হয়। ছাত্রলীগের ক্যাডারদের মধ্যে ছিল- বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ তুনান, জহুরুল হল শাখা ছাত্রলীগের মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক আলী রিমন, একই শাখার উপ-কর্মসূচিবিষয়ক সম্পাদক সোলায়মান হোসেন ও বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের উপ-মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষেণাবিষয়ক সম্পাদক জাকিউর রাফিদ নাফি। মারধরের শিকার দু’জনকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানেও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা তাদের বাধা দেয়। এ অভিযোগ করেছেন আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক নূরুল হক নূর।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/104145