২৪ অক্টোবর ২০১৮, বুধবার, ৯:৫৪

প্রবিধান লঙ্ঘন করে ২০৯ পদে নিয়োগ দিতে তোড়জোড়

বিভাগীয় প্রার্থীদের বঞ্চিত করে ২০৯ পদে তড়িঘড়ি করে নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে। বঞ্চিত কর্মকর্তারা আইনের আশ্রয় নিলে তাদের ১৩ জনকে স্ট্যান্ড রিলিজ ও একজনকে বদলি করেছে বিসিক কর্তৃপক্ষ।

সূত্র জানায়, গত ১৩ আগস্ট ৪৪ ক্যাটাগরিতে ২০৯ জন জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিসিক কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে এন্ট্রি লেভেল বা নবম গ্রেডের পদসংখ্যা ১৩০। ষষ্ঠ থেকে তৃতীয় গ্রেডের পদ ৬৩টি। দেশের অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে এই পদগুলো পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। বিসিক চাকরি প্রবিধানমালা-১৯৮৯ এবং সংশোধিত ১৯৯৪ প্রবিধান ৩ এর উপপ্রবিধান (২) অনুসারে ‘সরকার কর্তৃক সময় সময় জারিকৃত আদেশানুসারে কোনো বিশেষ শ্রেণীর প্রার্থী এবং করপোরেশন বা করপোরেশন পরিচালিত কোনো প্রকল্পে কর্মরত আছেন বা ছিলেন এমন প্রার্থীর ক্ষেত্রে ওই বয়সসীমা শিথিলযোগ্য হইবে’; ‘আরো শর্ত থাকে যে এই প্রবিধানমালার যাহা কিছুই থাকুক না কেন করপোরেশন বা করপোরেশন পরিচালিত কোন প্রকল্পে আছেন বা ছিলেন এমন কোন প্রার্থীর যদি সংশ্লিষ্ট কাজের অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে নিয়োগের ক্ষেত্রে তাকে অগ্রাধিকার দেয়া যাইতে পারে’। কিন্তু বিসিক কর্তৃপক্ষ সেটাকে আমলে না নিয়ে নিজেদেরই কর্মকর্তাদের বঞ্চিত করে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে।

বঞ্চিত কর্মকর্তারা আইনের আশ্রয় নেয়ার প্রক্রিয়ায় গত ২৩ সেপ্টেম্বর বিসিক কর্তৃপক্ষকে লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করে। এতে বিসিক কর্তৃপক্ষ ক্ষিপ্ত হয়ে ২৬ সেপ্টেম্বর তিনজন কর্মকর্তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করেন। বঞ্চিত কর্মকর্তারা নিয়োগে অংশগ্রহণের জন্য রিট পিটিশন (নম্বর ১২২০৮/২০১৮) দায়ের করেন। পরে ৩ অক্টোবর আদালত এই নিয়োগে কেন তারা অংশগ্রহণ করতে পারবে না জানতে চেয়ে চার সপ্তাহের রুল ও তিন মাসের জন্য কর্মকর্তাদের বর্তমান কর্মস্থল হতে বদলির ওপর স্থিতাদেশ জারি করে।

কিন্তু কর্তৃপক্ষ আদালতের ওই নির্দেশ উপেক্ষা করে ৩ অক্টোবর আবারো ছয়জন কর্মকর্তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে। এরপর গত ১৬ অক্টোবর বিসিক কর্তৃপক্ষ সিভিল রিট পিটিশন দায়ের করে বদলি আদেশের স্থিতাদেশ এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে। ওই দিনই বিসিক কর্তৃপক্ষ পিটিশনারগণের মধ্যে আরো চারজনকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে।
বিসিক কর্মকর্তারা জানান, ১৩ জন কর্মকর্তাকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বদলি করায় প্রধান কার্যালয়ে কাজে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, মহিলা শিল্পোদ্যোক্তা উন্নয়ন কর্মসূচি (উইডিপি) প্রকল্পের কর্মকর্তা/কর্মচারীদেরকে রাজস্ব খাতে আত্তীকরণের ক্ষেত্রে অনিয়ম ও আদালত অবমাননা করেছে সংস্থাটি। আদালতকে উপেক্ষা করে অনৈতিক সুবিধা আদায়ের মাধ্যমে তাদেরকে আবারো পদোন্নতি দেয়ার পাঁয়তারা করছে। এসব কাজে স্বয়ং বিসিক চেয়ারম্যান ইন্ধন জোগাচ্ছেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, অতিরিক্ত সচিবের তালিকায় ৯ নম্বর সিরিয়ালে মুশতাক হাসান মুহ: ইফিতাখারকে (আইডি নং-২১০০) অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদায়ন দেখানো হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিসিক চেয়ারম্যান মুশতাক হাসান মুহ: ইফতিখারকে বদলি করে ওই পদে ২০১৭ সালের ১৬ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সরদার আবুল কালামকে নিয়োগ দেয়া হয়। এর মধ্যে নিয়োগ পাওয়া অতিরিক্ত সচিব সরদার আবুল কালামকে ওই বছরের ১৮ অক্টোবর বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
বিসিক কর্মকর্তারা জানান, চেয়ারম্যান তার আস্থাভাজন ডেপুটি ম্যানেজার (ডিএম) নাজিমুল আবেদিনকে ঢাকা শিল্পসহায়ক কেন্দ্রের ডিজিএম, প্রশাসনের ডিজিএম, বিসিক হালকা বৈদ্যুতিক প্রকৌশলীর প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে পদায়ন করেছেন এবং নিজ পছন্দের এ কে এম মাসুদুজ্জামানকে সচিব পদে বসিয়ে স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য বিসিক চেয়ারম্যান মুশতাক হাসান মুহ: ইফতিখারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/359491