২৪ অক্টোবর ২০১৮, বুধবার, ৯:৫২

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কী বোঝে তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা

প্রাথমিকের পাঠ্যবই- ৬

তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ে আলোচনা করা হয়েছে বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা নিয়ে। ছোট পরিবারের সুবিধা, বড় পরিবারের সমস্যা, অধিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব প্রভৃতি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে তৃতীয় শ্রেণীর জন্য পাঠ্য বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ে। চতুর্থ শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ে অতিরিক্ত জনসংখ্যার কুফল, জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
এভাবে পঞ্চম শ্রেণীর পাঠ্যবইয়েও বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত লেখা পাঠ্য করা হয়েছে।

তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের বয়স সাধারণত সাড়ে আট থেকে সাড়ে নয় বছর হয়ে থাকে। এ বয়সের শিশুদের জন্য জনসংখ্যা সমস্যাবিষয়ক লেখা পাঠ্য করা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেক অভিভাবক। তাদের অভিযোগ, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর শিশুদের মানুষের জন্ম প্রক্রিয়া সম্পর্কেই তো কোনো ধারণা নেই। জনসংখ্যা সমস্যা বিষয়ে এত ছোট শিশুদের জ্ঞান দিয়ে লাভ কী? জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধে তারা কী করতে পারবে?

অনেক অভিভাবক জানিয়েছেন তাদের ছোট শিশুরা জনসংখ্যাবিষয়ক পড়া নিয়ে বিভিন্ন ধরনের অদ্ভূত প্রশ্ন করে। এ ধরনের বিষয় পড়ার সময় শিশুরা কিছু বুঝে উঠতে পারে না। অন্ধের মতো শুধু কতগুলো শব্দ মুখে আওড়ায় আর কিছু না বুঝে প্রশ্নের উত্তর মুখস্ত করে।
জনসংখ্যা সমস্যার মতো একটি বিষয় এত ছোট শিশুদের জন্য কেন পাঠ্য করা হলো তা বুঝে উঠতে পারছেন না তারা। তাদের মতে এসব বিষয়ে শিশুদের জ্ঞান না দিয়ে বরং তারা যাতে ছোটবেলায় ভালো আচার-আচরণ, আদব-কায়দা শিখতে পারে সে ধরনের লেখা পাঠ্য করা উচিত। তাদের মাথার ওপর এসব সমস্যার বোঝা চাপানো উচিত নয়।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এনসিটিবি কর্তৃক প্রণীত তৃতীয় শ্রেণীর বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ে ১২তম অধ্যায়ে ‘বাংলাদেশের জনসংখ্যা’ সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে ‘জনসংখ্যা ও পরিবার’ এবং ‘যানবাহন ও পরিবেশের ওপর অধিক জনসংখ্যার প্রভাব’ শীর্ষক দু’টি উপশিরোনামে বিষয়টি আলোচনা করা হয়েছে।
‘জনসংখ্যা ও পরিবার’ শিরোনামে লেখা হয়েছে ‘পরিবারের লোকসংখ্যা বেশি হলে সবার প্রয়োজন মেটে না। সবাই পুষ্টিকর খাবার পায় না। প্রয়োজনীয় পোশাকের অভাব হয়। বাড়িতে থাকার জন্য যথেষ্ট স্থান পাওয়া যায় না। ঘুমানো বা বিশ্রামের জায়গার অভাব দেখা দেয়। বড় পরিবারে ময়লা-আবর্জনা বেশি হয়। ছোট পরিবারে সবার প্রয়োজন মেটানো সম্ভব।
বড় পরিবারে অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। ছোট ভাইবোনদের দেখাশোনা করতে হয় বলে অনেক সময় মেয়ে শিশু পড়ালেখা করতে পারে না। যেসব পরিবারে লোকসংখ্যা বেশি সেখানে ছোট শিশুরা অনেক সময় মা-বাবার সাথে কাজে যায়। ফলে তারা ঠিকমতো বিদ্যালয়ে আসতে পারে না। অসুখ হলে ঠিকমতো চিকিৎসা পায় না।’
‘যানবাহন ও পরিবেশের ওপর অধিক জনসংখ্যার প্রভাব’ শিরোনামে লেখা হয়েছে বেশি জনসংখ্যা একটি দেশের প্রধান সমস্যা।

পাঠ্যবইয়ে জনসংখ্যা সমস্যাবিষয়ক আলোচনা ও লেখার মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেক অভিভাবক। যেমন পঞ্চম শ্রেণীর বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের ৪৬ পৃষ্ঠায় জনসংখ্যা সমস্যার সমাধান শিরোনামে লেখা হয়েছে, ‘এই অধ্যায়ে উল্লিখিত সমস্যা সমাধানে আমাদের যেসব সম্মিলিত কৌশল অবলম্বন করা প্রয়োজন সেগুলো হলো : খাদ্যের উৎপাদন বাড়াতে হবে। গৃহ নির্মাণে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। পরিবেশ দূষণ রোধ করতে হবে, যাতে মানুষের জীবনযাপনের মান বৃদ্ধি পায়। রোগ প্রতিরোধে বিভিন্ন টিকা এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে সরকারি সহায়তা বাড়াতে হবে; এতে মানুষের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। শতভাগ সাক্ষরতার হার নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য কারিগরি শিক্ষার উন্নয়ন করতে হবে। আমদানির তুলনায় রফতানি বাড়াতে হবে।
কয়েকজন অভিভাবক জানালেন এর সাথে ঠিক জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানের সম্পর্ক কী বুঝতে পারছেন না তারা। শিশুদেরই বা কী বোঝাবেন।


http://www.dailynayadiganta.com/last-page/359494