২৩ অক্টোবর ২০১৮, মঙ্গলবার, ৬:৫১

দেশ কি বাকশালের পথেই যাচ্ছে?

অবাধ, নিরপেক্ষ ও সকল দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি যত প্রবল হচ্ছে সরকারের অবস্থান তত বেপরোয়া হয়ে পড়ছে বলে মনে হয়। দশম সংসদের শেষ অধিবেশন শুরু হয়েছে। এই অধিবেশনে ঐক্যফ্রন্ট ও ড. কামাল হোসেনের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। অধিবেশনে অনুপস্থিত কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে তীব্র ভাষায় সমালোচনা সংসদীয় রেওয়াজে না থাকলেও বাংলাদেশ সংসদে তা হয়েছে। এ দিকে ঐক্যের পথে পা বাড়িয়ে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের ন্যায় ভদ্রলোকও বিপাকে পড়েছেন বলে মনে হয়। তার বিরুদ্ধে মামলার পর মামলা হচ্ছে। মামলার বিষয়বস্তু ও প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও মামলাগুলো যে সরকারি অনুপ্রেরণায় হচ্ছে তা নিয়ে সন্দেহ নেই। একইভাবে নিবেদিত সমাজকর্মী ডা. জাফরুল্লাহর বিরুদ্ধেও চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে। তারা সরকারের সমালোচক এবং মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতিভূ। সরকার তা পছন্দ করেন না। এই অবস্থায় তাদের সাহায্যে দেশবাসীর এগিয়ে আসা জরুরি। গণতন্ত্র এবং পরমত সহিষ্ণুতা আওয়ামী লীগের ধাঁচে নেই। ব্যারিস্টার মইনুল এবং ড. কামাল হোসেন বিবেকের তাড়নায় এই দলে থাকতে পারেননি। তারা বাইরে দেশ ও জাতির জন্য কিছু করুন এটাও অনেকের সহ্য হচ্ছে না। একটা কথা বলা দরকার। গণতন্ত্রের সাথে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক অনেকটা Marriage of Convenience-এর মতো হলেও দলটি কখনো এর মূল্যবোধের সাথে সহাবস্থান করতে পারেনি। ভারতের উত্তর প্রদেশে একটা সম্প্রদায় আছে যাদের স্ত্রীরা পালঙ্কে শোয়, স্বামীরা শোয় মাটিতে। ঐতিহাসিকরা মনে করেন যে, এরা রানা প্রতাপ সিং-এর বংশধর। মোগল সম্রাটদের হামলা থেকে বাঁচবার জন্য দীর্ঘদিন তারা আত্মগোপনে ছিলেন। সরাসরি যুদ্ধ ও আত্মগোপন করতে গিয়ে তাদের অনেক লোক নিহত হয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত রানা পরিবারের মেয়েদের বিবাহ-শাদী একটি বিরাট সমস্যা হয়ে দেখা দেয়। রানা পরিবারের মেয়েরা রাজপুতে পরিবারের স্বামী না পেয়ে চাকর-নকরদের সাথে বিবাহে বাধ্য হয়। চাকর বা মনিব কন্যার স্বামী হয়ে পুরাতন অভ্যাস অনুযায়ী মাটিতেই শোয়। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা অতীতে একনায়কতান্ত্রিক বাকশাল প্রতিষ্ঠা ও জনগণের ওপর দমন নিপীড়ন পরিচালনা, সরকারি বেসরকারি সম্পত্তি লুটপাট, নিবর্তনমূলক আইন প্রবর্তন প্রভৃতির জন্য হাতজোড় করে ক্ষমা চেয়ে ও চোখের পানি ফেলে জনসমর্থন কুড়িয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। মানুষ মনে করেছিল, আওয়ামী লীগ দলটি তাদের অতীতের ভুল বুঝে তাওবা করে ভাল হয়ে গেছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে যে মানুষ ভুল করেছে, তাদের চরিত্র আগের মতই আছে, সামান্যতম পরিবর্তনও হয়নি বরং আগের তুলনায় আরো হিংস্র, দুর্নীতিপরায়ণ ও বেশি জালেম হয়েছে। বলাবাহুল্য, বাকশাল সম্পর্কে এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের জ্ঞান খুবই সীমিত। এদের মধ্যে যারা এর নাম শুনেছেন তারা এর বিশদ বিবরণ ও তাৎপর্য সম্পর্কে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সম্যক ওয়াকিবহাল নন। এ প্রেক্ষিতে এই পর্যায়ে বাকশালের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় দেয়া আমি জরুরি মনে করছি।

স্বাধীনতা-উত্তর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি মাসে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এই দলটি বাংলাদেশে সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে দিয়ে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। এই দর্শনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের কবর রচনা এবং একনায়কতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা। বাকশাল প্রতিষ্ঠার ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা স্থবিরতা নেমে এসেছিল। দেশব্যাপী জরুরি অবস্থা জারীর মাধ্যমে মানুষের সকল প্রকার মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতাসমূহকে খর্ব করে বাকশাল কায়েম করা হয়েছিল। উদ্দেশ্য, কোনও ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা দল যাতে এর বিরুদ্ধে কোনও প্রতিবাদ-সমাবেশ করতে না পারে। এর ওপর রক্ষীবাহিনীর নির্মমতার হুমকি তো ছিলই। চতুর্থ সংশোধনী ও বাকশাল প্রতিষ্ঠার ফলে দেশে যে পরিবর্তনগুলো এসেছিল সেগুলো ছিল নিম্নরূপ : (১) বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তে দেশে একদলীয় ব্যবস্থার প্রবর্তন হয় (২) সকল রাজনৈতিক দল বেআইনী ঘোষণা করা হয় এবং তার স্থলে দেশে একটিমাত্র রাজনৈতিক দল থাকবে বলে নির্ধারণ করা হয়। এই বাকশাল তথা বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ ছিল প্রকৃতপক্ষে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের একনায়কতান্ত্রিক সংস্করণ। (৩) সরকারি কর্মচারীদের এমন কি প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদেরও রাজনীতিকরণ করে তাদের বাকশালের সদস্য করা হয়। (৪) শাসনতন্ত্র সংশোধনের মাধ্যমে স্থির করা হয় যে বাকশালের অনুমোদন ব্যতিরেকে কেউ রাষ্ট্রপতি বা সংসদ সদস্য হতে পারবে না। তদুপরি নতুন দলে যোগদান না করলে বিদ্যমান সংসদ সদস্যরাও তাদের সদস্যপদ হারাবেন। (৫) আবাদি জমি ও গ্রামীণ অর্থনীতির সমষ্টিকরণের লক্ষ্যে বাধ্যতামূলক গ্রাম সমবায় ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়। এ ব্যবস্থার অধীনে ইউনিয়ন পর্যায়ে সমবায় সমিতি গঠন করে সোভিয়েত রাশিয়ার কলখজ ও সভখজের অনুকরণে জমির ব্যক্তিমালিকানা উচ্ছেদ করে তা সমবায় সমিতির ওপর অর্পণ করার কথা ছিল। সামষ্টিক পদ্ধতিতে উৎপাদন ও সমবায় সমিতি এবং তার সদস্যদের মধ্যে মালিকানার অনুপাতে উৎপাদিত পণ্যের বন্টন ছিল এর লক্ষ্য, (৬) মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা খর্ব করা হয়। (৭) সংবাদপত্র ও সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়। দেশের সকল সংবাদপত্র ও সংবাদ মাধ্যমকে বেআইনি ঘোষণা করে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় দু’টি এবং দলীয় মালিকানায় দু’টি দৈনিক তথা মোট চারটি দৈনিক পত্রিকা রাখা হয়। দলীয় ও রাষ্ট্রীয় বন্দনাই ছিল এর লক্ষ্য। বাকশালের চরম স্বৈরাচারী দর্শনে ভিন্নমতের সুযোগ ছিল না। এই দর্শন কার্যকর করতে গিয়েই সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সরকারের সমালোচনা করার স্বাধীনতাকে কেড়ে নেয়া হয়। (৮) জেলার সংখ্যা ৬১ তে উন্নীত করা হয় এবং প্রত্যেক জেলায় দলীয় রাজনীতিক এবং পছন্দের ব্যক্তিদের গবর্নর নিয়োগ করা হয়। প্রত্যেক গবর্নরের কর্তৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি ইউনিটও ন্যস্ত করার সিদ্ধান্ত হয়, কথা ছিল এভাবে সেনাবাহিনীকে বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে। (৯) বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়। মৌলিক অধিকার বলবৎ করার ব্যাপারে বিচার শাখার ক্ষমতা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। তার পরিবর্তে একটি সাংবিধানিক আদালত বা ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য সংসদকে কর্তৃত্ব দেয়া হয়। কেবলমাত্র রাষ্ট্রপতিই সুপ্রীম কোর্টের বিচারকদের নিয়োগ দেয়ার একমাত্র কর্তৃপক্ষে পরিণত হন। প্রধান বিচারপতি তার সুপারিশ করার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেন। রাষ্ট্রপতি তার অভিপ্রায় অনুযায়ী সুপ্রীম কোর্টের বিচারকদের অপসারণ করারও অধিকারী হন। (১০) সংসদসীয় পদ্ধতির পরিবর্তে সরকার ব্যবস্থাকে প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতিতে রূপান্তর করা হয়। (১১) রাষ্ট্রপতি পদে থাকার কোনো মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়নি, তার পরিবর্তে চতুর্থ সংশোধনীতে এই বিধান রাখা হয় যে, তিনি যতকাল ইচ্ছা ততকাল রাষ্ট্রপতি পদে বহাল থাকবেন। জনগণের ইচ্ছা-অনিচ্ছা অথবা নির্বাচনের সাথে এর কোনো সম্পর্ক থাকবে না। রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসিত করার (Impeachment) ব্যবস্থা রাখা হলেও এর কর্মপদ্ধতি এতই কঠিন করা হয় যে, অভিশংসন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। (১২) সংসদ সদস্য না হলেও যে কোনো ব্যক্তিকে মন্ত্রী নিয়োগ করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতিকে প্রদান করা হয়। শাসনব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা ও সংসদকে দলীয় কর্তৃত্বে এনে একটি চরম স্বৈরাচারী রাজনৈতিক ব্যবস্থা কায়েম করাই ছিল এর লক্ষ্য। দেশবাসী এতে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন। এরপর অনেক অঘটন ঘটেছে। জেনারেল জিয়া দৃশ্যপটে এসেছেন। সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী বাতিল হয়েছে। দেশবাসী মনে করেছিলেন তারা আর একদলীয় দর্শনের মুখ দেখবেন না। কিন্তু হা হতাস্মি মন্দ ভাগ্য। ‘ইল্লত যায়না ধুইলে, খাসলত যায় না মইলে।’ বাংলা এই প্রবাদ বাক্য আবারো সত্য প্রমাণিত হলো। আওযামী লীগ তার স্বভাব বদলায়নি। মানুষ ভুল থেকে শিক্ষা নেয়, আওয়ামী লীগ নেয়নি নিতে জানে না। পঁচাত্তরের পট পরিবর্তনের পর ২১ বছর তারা ক্ষমতায় আসতে পারেনি। ২১ বছর পর দেশব্যাপী মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে ক্ষমতায় এসে ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে তাদের জুলুম-নির্যাতন, দুর্নীতি, লুটপাটের পুরাতন অভ্যাসগুলো সম্পূর্ণরূপে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারলেও যা দেখা গিয়েছিল তাতে মানুষ দ্বিতীয় মেয়াদে তাদের ক্ষমতায় যাবার জন্য ভোট দেয়নি। তখনকার দিনে বলবৎ নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার পদ্ধতিতে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোর সুযোগ ছিল। ২০০৭ সালের জানুয়ারির নির্বাচন তারা হতে দেয়নি, দেশব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টি করে সেনাসমর্থিত দুবছরের অবৈধ সরকারকে তারা ক্ষমতায় আনেন। তাদেরই আন্দোলনের ফসল এই সরকারের সকল প্রকার অবৈধ কাজকে বৈধতা দেয়ার শর্তে খ্যাতনামা ব্রিটিশ সাপ্তাহিকী ‘দি ইকনমিস্টের ভাষায়’ বস্তায় বস্তায় ভারতীয় টাকা ও ভারতীয় পরামর্শ এবং মইন-ফখরের সরকারের সমর্থনে ২০০৮ এর নির্বাচনে কারচুপির মাধ্যমে জয়ী হয়ে দলটি পুনরায় ক্ষমতায় আসে। ক্ষমতায় এসে একে একে বাকশালের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার অশুভ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ তারা শুরু করেছেন। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে তারা পুরো বিচারব্যবস্থা ও বিচারকের দলীয়করণ করেছেন। নিজেদের সুবিধাজনক অবস্থানে রেখে চতুর্থ সংশোধনী বাতিল করে করা পঞ্চম সংশোধনীকে বাতিল করিয়েছেন। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের রক্ষাকবচ কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থাকে বিতর্কিতভাবে আদালতের মাধ্যমে বাতিল করিয়েছেন। উল্লেখ্য, আদালতের রায়ে এই ব্যবস্থা আরো দুই মেয়াদ রাখার কথা থাকলেও পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হবার পূর্বেই এই ব্যবস্থাকে বাতিল করে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। দলীয় সরকারের অধীনে এবং সংসদ বহাল রেখে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধন করা হয়। বৃহত্তম রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি এবং জামায়াতকে ভেঙে একচ্ছত্র আধিপত্য ভোগ করার চেষ্টা চালানো হয়। মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় শীর্ষস্থানীয় জামায়াত নেতাদের ফাঁসি দিয়ে বৈচারিকভাবে হত্যা করা হয়। জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করা হয়। সেনাসমর্থিত কেয়ারটেকার সরকারের আমলে রুজু করা আওয়ামী লীগ নেতার সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করে বিএনপি নেতাদের মামলাগুলো রেখে দেয়া হয় এবং সুযোগ বুঝে এখন তাদের মামলাগুলো সক্রিয় করে দলটিকে পঙ্গু করে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। আওয়ামী লীগের দর্শন হচ্ছে কিছু বিরোধী দলকে খুদ-কুড়া দিয়ে গৃহপালিত করে বশংবদ করে রাখা, শক্তিশালী দলগুলোকে হামলা-মামলা ও নির্যাতনের মাধ্যমে দমিয়ে রাখা যাতে নির্বাচনের সময় নড়াচড়া করতে না পারে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা না থাকলে তাদেরকে ক্ষমতা থেকে নামায় কে? তারা তাই করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয়করণ করে মানুষের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে। নতুন নতুন নিবর্তনমূলক আইন করে সরকারের কুকীর্তিগুলো ঢেকে রাখার চেষ্টা হচ্ছে। র্যা ব, পুলিশ, বিজিবি, আনসার, ভিডিপি সদস্যদের রক্ষীবাহিনীর ন্যায় ব্যবহার করা হচ্ছে। বৈধ-অবৈধ সুযোগ সুবিধা দিয়ে, জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে রেখে আমলাতন্ত্রকে সম্পূর্ণ দলীয় কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। একইভাবে নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন প্রভৃতিসহ সাংবিধানিক সকল প্রতিষ্ঠানকেও দলীয়করণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় শক্তিকে দলীয় সন্ত্রাস ও দলীয় উচ্চাকাক্সক্ষা পূরণের হাতিয়ার বানানো হয়েছে। শীর্ষ বিরোধী নেতাদের আটক করে তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সিনিয়র রাজনীতিবিদদের উদ্যোগকে এমনভাবে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হচ্ছে যেন তারা মানুষই না। এই সম্মানিত ব্যক্তিদের কাউকে বলা হচ্ছে ধ্বজভঙ্গ, কাউকে বলা হচ্ছে কোমরভাঙা, অথর্ব, বৃদ্ধ আবার কাউকে বলা হচ্ছে হাঁটুভাঙা, চোর ও দুর্নীতিবাজ। অথচ দুর্নীতি এখন জাতীয়করণকৃত একটি প্রপঞ্চ। সর্বত্র দুর্নীতি বিরাজ করছে। অর্থ ও ব্যাংকিং খাত দুর্নীতির চাদরে ঢাকা। এ খাতে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা আত্মসাত হয়েছে। দলীয় নেতা ও ব্যবসায়ী, শিল্পপতিরা নামে বেনামে লোন নিয়ে ব্যাংকগুলোকে ফতুর করে দিয়েছে। দলীয় লোকদের পারিবারিকভাবে ব্যাংকের মালিক বানিয়ে দেয়া হয়েছে, তারা ব্যাংকের মূলধন এমনকি আমানতের টাকাও খেয়ে শেষ করে দিয়েছেন। গত দশ বছরে বাংলাদেশ থেকে যত অর্থ আত্মসাত ও বিদেশে পাচার হয়েছে ততো অর্থ এর আগের ৬০ বছরেও আত্মসাত বা পাচার হয়নি। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগসহ লীগ পরিবারগুলোর খোঁজখবর নিন, নামে বেনামে তাদের সম্পদ আহরণ ও ব্যাংক ব্যালেন্সের খবর নিন, বিস্মিত হবেন। দলটি বৈধ ও সহজ পন্থায় নির্বাচনে বিশ্বাস করে না। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে তারা ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। আর ক্ষমতায় যেতে না পারলে তারাই বলছেন এক দিনেই কারোর ভাষায় ৫ লাখ আবার কারোর ভাষায় ১ লাখ লোক মারা যাবে। এ ভয় কেন? নির্বাচনে ক্ষমতা বদল স্বাভাবিক ব্যাপার। যারা এই স্বাভাবিক ব্যাপারকে অস্বাভাবিক করতে চান তারাই ঐ ধরনের অমূলক ভয়ে ভোগেন। এদের অমূলক ভয়কে মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য সকলের উচিত নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থার অধীনে সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচন করে দেশকে ভয়মুক্ত, নিপীড়নমুক্ত, অন্যায়-অবিচারমুক্ত, লুটপাটমুক্ত শান্তির নিড় হিসেবে গড়ে তোলা।

http://www.dailysangram.com/post/350508