২৩ অক্টোবর ২০১৮, মঙ্গলবার, ৬:৪৯

নিরাপদ সড়ক দিবসে ঝরল ১০ প্রাণ

মাকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে ছেলেকে পিষে মারল বাস

নিরাপদ সড়ক দিবসের নানা আয়োজন চলছিল ঢাকার রাস্তায়। সড়কে যান চলাচলে শৃঙ্খলা ফেরাতে নানা সংস্থার তদারকিও ছিল। ঠিক এই দিনেই গতকাল সোমবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে সড়কে দুটি বাসের মাঝে পড়ে থেঁতলে গিয়ে মায়ের সামনেই প্রাণ গেল এক তরুণের। এ সময় আরও একজন মারা যান। এদিকে, গতকাল সড়ক দুর্ঘটনায় চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে অটোরিকশাযাত্রী বাবা ও ছেলেসহ তিনজন ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন। ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে উভয় আরোহী নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া নেত্রকোনার মদনে অটোরিকশা-চাপায় এক নারী, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বাসচাপায় এক কিশোর এবং গাইবান্ধার ফুলছড়িতে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন।

সমকাল প্রতিবেদক জানান, যাত্রাবাড়ীতে নিহত দু'জনের একজন সেলিম মিয়া (২২) ডেমরায় প্লাস্টিকের খেলনা তৈরির কারখানায় কাজ করতেন। তিনি গতকাল সকালে গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের শিবচর থেকে তার অসুস্থ মা মনোয়ারা বেগমকে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য নিয়ে এসেছিলেন। দুপুরে ডেমরার বাসা থেকে মাকে নিয়ে চিকিৎসকের চেম্বারে যাচ্ছিলেন। দুপুর ১টার দিকে ডেমরা থেকে অটোরিকশায় যাত্রাবাড়ী মোড়ে নেমে রাস্তা পার হওয়ার সময় মায়ের সামনেই ঘটে দুর্ঘটনাটি। হৃদরোগে আক্রান্ত মৃত্যুপথযাত্রী বৃদ্ধ মাকে রেখেই না ফেরার দেশে চলে যান সেলিম। নিহত অপর যুবক জুয়েল (৩০) তুরাগ পরিবহনের একটি বাসের চালক ছিলেন। একই সময়ে তিনিও রাস্তা পার হওয়ার সময় ট্রান্সসিলভার দুই বাসের চাপায় পড়েন। আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

চোখের সামনে এমন ঘটনা দেখে সেলিমের মা কোনো কথাই বলতে পারছিলেন না। পুলিশের কাছে তিনি শুধু বলছিলেন, সেলিম তার একমাত্র ছেলে। তিনি অসুস্থ হওয়ায় সোমবারই তাকে চিকিৎসার জন্য বাড়ি থেকে ছেলে ঢাকায় নিয়ে আসে। তারা চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার সময় একটি বাস ছেলেকে চাপা দিয়ে মেরে ফেলে।

যাত্রাবাড়ী থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী বলেন, ট্রান্সসিলভা পরিবহনের থেমে থাকা বাসটিকে অপর বাসটি ওভারটেক না করলে এমন দুর্ঘটনা ঘটত না। দুটি বাসই জব্দ করা হয়েছে। মূল অভিযুক্ত বাসচালক শাহীন কাজীকে আটক করা হয়েছে। তার কাছে বাস চালানোর বৈধ কোনো কাগজ এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া যায়নি। জুয়েলের চাচাতো ভাই মহিউদ্দিন জানান, জুয়েলের বাড়ি বরিশাল। তিনি দয়াগঞ্জ বটতলা এলাকায় দুই ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন।

ঠিক এর আগের রাতেই রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার সামনে পিকআপের ধাক্কায় রিকশা আরোহী মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে নাবিলা নামে ১ বছর বয়সী এক শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।

চাঁদপুরে বাবা-ছেলেসহ অটোরিকশার তিন যাত্রী নিহত :চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার বাকিলায় সোমবার ভোরে চাঁদপুর-কুমিল্লা সড়কে এক দুর্ঘটনায় সিএনজি চালিত অটোরিকশার তিন যাত্রী ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনায় এলেম হোসেন (৪৫), তার ছেলে একরাম হোসেন (২২) এবং আবু সুফিয়ান (৪০) নামে তিন যাত্রী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। তাদের বাড়ি শাহরাস্তি উপজেলার ওয়ারুক এলাকায়। গুরুতর আহত হয়েছেন অটোচালকসহ আরও দু'জন। তাদের চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

হাজীগঞ্জ থানার ওসি আলমগীর হোসেন জানান, ভোরে চারজন যাত্রী নিয়ে একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা শাহরাসিস্ত উপজেলার উয়ারুক বাজার থেকে চাঁদপুরের দিকে যাচ্ছিল।

অটোটি বাকিলার কাছে এলে অন্য একটি ভারী যান এটিকে সামনে থেকে ধাক্কা দেয়। পুলিশের ধারণা, যে যানটি অটোকে ধাক্কা দিয়েছে সেটি কাভার্ড ভ্যান। খুব ভোরে দুর্ঘটনা ঘটায় এবং রাস্তায় লোক না থাকায় দুর্ঘটনা ঘটিয়েই ঘাতক যানটি দ্রুত চলে যায় এবং কেউ তা দেখতে পায়নি। ঘটনাস্থল থেকে দুর্ঘটনাকবলিত অটোরিকশাটি উদ্ধার এবং যাত্রীদের মরদেহ হাজীগঞ্জ মডেল থানায় নেওয়া হয়েছে।

মুক্তাগাছায় মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২ : মুক্তাগাছা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি জানান, ময়মনসিংহ-জামালপুর সড়কে মুক্তাগাছার তারাকান্দি এলাকায় গতকাল সোমবার সকালে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে উভয় আরোহী নিহত হয়েছেন। তারা হলেন মুক্তাগাছা উপজেলার পোড়াবাড়ি গ্রামের আব্দুল হালিমের ছেলে ওমর ফারুক ও আরেক অজ্ঞাত যুবক।

ওমর ফারুক গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মোটরসাইকেলে জামালপুরের ঘোড়াধাপ এলাকায় শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে তারাকান্দির চরাঘাট সেতু সংলগ্ন এলাকায় জামালপুর থেকে আসা আরেকটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ওমর ফারুক নিহত হন। অপর মোটরসাইকেল আরোহীকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ঘটনাস্থল থেকে মুক্তাগাছা থানা পুলিশ চূর্ণ-বিচূর্ণ দুটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছে।

মদনে অটোচাপায় নারী নিহত :মদন (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি জানান, মদনে সড়ক দুর্ঘটনায় সোমবার হাফছা আক্তার (৪৫) নামে এক নারী নিহত হয়েছেন। তিনি উপজেলার গোবিন্দশ্রী গ্রামের আবু বকরের স্ত্রী।

জানা যায়, সোমবার সকালে পিত্রালয় আটপাড়া উপজেলার টেঙ্গা গ্রাম থেকে স্বামীর বাড়ি মদনের গোবিন্দশ্রী গ্রামে যাচ্ছিলেন হাফছা। বালই ব্রিজে অন্য যানবাহনে উঠতে চাইলে বিপরীতমুখী একটি অটোরিকশা তাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মাথা থেঁতলে যায়। পথচারীরা দ্রুত থাকে মদন হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘাতক অটোচালক পলাতক।

বাসচাপায় আহত কিশোরের মৃত্যু :সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, শত চেষ্টা করেও বাসচাপায় গুরুতর আহত ইমন আল হাসানকে (১৮) বাঁচানো গেল না। শনিবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সীতাকুণ্ডের পাক্কা মসজিদ এলাকায় বাসের ধাক্কায় আহত হন ইমন। তিনি উপজেলার বারআউলিয়া শিয়ারীপুল এলাকার ফোরকান আহমেদের ছেলে।

ইমনের চাচা দিদারুল আলম বলেন, ইমন রাস্তার পাশ দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময় বেপরোয়া গতিতে আসা সৌদিয়া পরিবহনের একটি বাস তাকে ধাক্কা দেয়। এতে সে রাস্তার পাশে পড়ে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রামের বেসরকারি একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় সোমবার দুপুরে তার মৃত্যু হয়। পুলিশ ঘাতক বাসটি আটক করেছে।

মোটরসাইকেলের ধাক্কায় ব্যবসায়ীর মৃত্যু, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ :ফুলছড়ি (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি জানান, ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের মদনেরপাড়া এলাকায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় আজাদ মিয়া (৫৫) নামে এক কাপড় ব্যবসায়ী মারা গেছেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে সোমবার দুপুরে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী গাইবান্ধা-বালাসীঘাট সড়কের মদনেরপাড়া বাজার এলাকায় স্পিড ব্রেকার নির্মাণের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুটি স্পিড ব্রেকার নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী সড়ক ছেড়ে চলে যান।
http://samakal.com/todays-print-edition/tp-last-page/article/18104907

http://samakal.com/todays-print-edition/tp-last-page/article/18104907