২৩ অক্টোবর ২০১৮, মঙ্গলবার, ৬:৪৫

ডিবি পরিচয়ে তুলে নেওয়ার অভিযোগ

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে চার লাশ উদ্ধারের ঘটনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে আরো একটি নিখোঁজের ঘটনা। চারজনের মধ্যে তিনজনের বাড়ি পাবনার একই গ্রামে। নিহত তিনজনের স্বজনরা বলছে, গ্রামের লিটন নামের এক যুবকেরও খোঁজ নেই। তাঁর সন্ধানে একটি লাশের পেছনে ছুটে বেড়াচ্ছে স্বজনরা।

এদিকে রবিবার উদ্ধার হওয়া চার লাশের মধ্যে তিনজনের বাড়ি পাবনার আতাইকুলা উপজেলার ধর্মগ্রামে বলে জানা গেছে। তাঁরা হলেন পাবনা জেলার সদর আতাইকুলা থানার ধর্মগ্রাম এলাকার লোকমান হোসেনের ছেলে জহিরুল ইসলাম (৩০), একই গ্রামের জামালউদ্দিন প্রামাণিকের ছেলে ফারুক প্রামাণিক (৩৫) এবং খায়রুল সরদারের ছেলে সবুজ সরদার (২০)। গতকাল সোমবার জানা যায়, সবুজ ও জহিরুল আপন খালাতো ভাই। তাঁদের আরেক খালাতো ভাই লিটন নারায়ণগঞ্জে অবস্থান করছিলেন এবং শুক্রবার থেকে তাঁর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
রবিবার ভোরে আড়াইহাজারের পাঁচরুখিতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশ থেকে মুখ ও মাথা থেঁতলানো গুলিবিদ্ধ চারটি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর মধ্যে গাড়িচালক লুৎফরের লাশ রবিবারই তাঁর স্ত্রী বুঝে নেন। লুৎফরের বাড়ি ফরিদপুরে, বাসা ঢাকার রামপুরায়। এদিকে একই দিন পাঁচরুখী থেকে আট কিলোমিটার দূরে কাঞ্চন ব্রিজ এলাকা থেকে পুলিশ আরেকটি লাশ উদ্ধার করে। লাশটি পাবনার লিটনের হতে পারে বলেই মনে করছে তাঁর স্বজনরা।

লাশ নিতে আসা স্বজনরা দাবি করছে, লিটনসহ চারজন রূপগঞ্জ থানার ভুলতা গাউছিয়া এলাকায় অবস্থান করছিলেন। ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তাঁদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে শোনা গেছে বলেও তারা দাবি করে। স্বজনদের দাবি, ফারুক প্রামাণিক ঢাকা-গাউছিয়া রুটে বাস চালাতেন।
নিহত জহিরুলের শ্বশুর নজরুল ইসলাম জামাতার লাশ গ্রহণ করতে নারায়ণগঞ্জ এসেছিলেন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, তাঁর জামাতা বেকারিতে কাজ করেন, কখনো বা ভ্যানগাড়ি চালিয়ে পরিবারের খরচ জোগাতেন। তিনি বলেন, জহিরুলের খালাতো ভাই লিটনও ভ্যানগাড়ি চালান। স্বজনরা হাসপাতালে এসে লাশ না পেয়ে কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের কাছে গিয়েছে লাশটি লিটনের কি না তা বুঝতে। জানা যায়, রবিবারই রূপগঞ্জের কাঞ্চন এলাকায় রাস্তার পাশ থেকে একটি লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ লাশটি নিয়ে আসে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল (ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল) মর্গে। তবে ময়নাতদন্ত হওয়ার পর কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশ লাশটি নিয়ে গেছে। পাঁচরুখী থেকে কাঞ্চন ব্রিজের দূরত্ব হবে আট কিলোমিটারের মতো।
নিহতদের মধ্যে ফারুক প্রামাণিকের বাবা জামাল প্রামাণিক কালের কণ্ঠকে বলেন, গণমাধ্যমে খবর আর ছবি দেখে হাসপাতালে এসে তিনি ছেলের লাশ শনাক্ত করেন। তিনি দাবি করেন, পাবনায় তিনজনের কারো বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। কেউ রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত নয়। জামাল প্রামাণিক দাবি করেন, ভুলতার গাউছিয়া থেকে গত ১৫ অক্টোবর ফারুকসহ চারজনকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যায় বলে তিনি শুনতে পেয়েছেন।

সবুজ সরদারের বাবা খায়রুল সরদার দাবি করেছেন, তাঁর ছেলে পরিবারের ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে পারছিলেন না বলে গত ১৫ অক্টোবর ঢাকার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এর পরদিন থেকেই সবুজের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। সবুজ ঢাকার একটি বেকারিতে কাজ করার কথা বলে বাড়ি ছাড়েন বলে দাবি করে তিনি বলেন, ডিবি পরিচয়ে তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে তিনি শুনেছেন।
আতাইকুলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুদ রানা জানান, নিহত তিনজনের বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা নেই। তবে প্রাথমিক অনুসন্ধানে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে যে তাঁরা নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ফারুক বেশ কয়েক বছর ধরে এলাকার বাইরে অবস্থান করছিলেন বলেও তিনি জানান।
ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ মামুন দাবি করেন, ‘নিহতরা ডাকাতদলের সদস্য হতে পারে। আমরা এখন পর্যন্ত এমনটাই ধারণা করছি। তবে তাদের হত্যাকারী কারা, কেন কী কারণে তাদের হত্যা করা হয় তার তথ্য পাওয়া যায়নি। তদন্ত চলছে।’

এদিকে গতকাল রাজধানীর রামপুরার পাওয়ার হাউস বাগিচারটেক এলাকার ৪৫/৫ নম্বর বাসার সামনে গেলে কবিতা আক্তার পরিচয় দিয়ে একজন কালের কণ্ঠকে বলেন, লুৎফর ভালো মানুষ ছিলেন। পাঁচ হাজার টাকা ভাড়ায় সাবলেট থাকতেন। লুৎফর প্রাইভেট কার চালিয়ে যে টাকা আয় করতেন তা দিয়ে সংসার চলত। পরিবারের বড় সন্তান স্থানীয় একটি স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। প্রতিবেশীরা জানায়, লুৎফরের লাশ নিয়ে স্বজনরা গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানার উত্তর আটকবাড়িয়া গিয়েছে। গ্রামেই লুৎফরের লাশ দাফন করা হবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবদুল্লাহ আল মামুন দুটি মামলা দায়েরের বিষয় স্বীকার করে জানান, এ ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত সে ব্যাপারে তদন্ত করা হচ্ছে। তবে ডিবি পুলিশের পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি জানান, নারায়ণগঞ্জের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সংস্থা এ ধরনের অভিযান চালায়নি।

 

http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2018/10/23/694855