২০ অক্টোবর ২০১৮, শনিবার, ৮:২৯

প্রতি ডজন ডিমের দাম বেড়েছে ১৫ টাকা

পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে ডিম। মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে প্রতি ডজন ডিমের দাম বেড়েছে ১৫ টাকা। পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও বেশি দামে ডিম বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। দাম বৃদ্ধি কোন জানা নেই ব্যবসায়ীদের। বাজার মনিটরিং না থাকায় কোন কারণ ছাড়াই দফায় দফায় বাড়ছে ডিমের দাম। তবে চাল এবং সবজির বাজার স্থিতিশীলতায় রয়েছে।

মাত্র দুই সপ্তাহ আগেও রাজধানীর বাজারগুলোতে ডিমের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ছিলো। কোনো কারণ ছাড়াই সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম ডজন প্রতি বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। দুই সপ্তাহ আগে ৯৫ টাকা ডজন বিক্রি হওয়া ডিমের দাম এখন দাঁড়িয়েছে ১২০-এ। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
রোজার ঈদের পর ডিমের দাম কিছুটা বাড়লেও কোরবানির ঈদের পর তা কমে আসে। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দফায় দফায় দাম বেড়ে ডিম এখন অনেকটাই নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। বাজারে কারও নজরদারি না থাকার কারণে ডিমের দাম এখন দফায় দফায় বাড়ছে বলে অভিযোগ করছেন ক্রেতারা।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন ডিমের চাহিদা খুব বেড়েছে। বাজারে ডিমের যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে, খামারিরা তা সরবরাহ দিয়ে পারছে না। সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেশি থাকায় ডিমের দাম বেড়েছে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত এক মাসের ব্যবধানে ডিমের দাম বেড়েছে ৩ দফা। এর মধ্যে শেষ দুই সপ্তাহ দাম বৃদ্ধির হার ছিল সব থেকে বেশি।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, শুধু ডিম বিক্রি করেন এমন ব্যবসায়ীরা প্রতি ডজন ডিম ১০৫-১১০ টাকায় বিক্রি করছেন। এক সপ্তাহ আগেও এসব ব্যবসায়ীরা ৯৫-১০০ টাকা ডজনে ডিম বিক্রি করেছেন।
খুচরা পর্যায়ে মুদিদোকানে এক পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১০-১১ টাকায়। আর হালি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪২ টাকায়। এসব ব্যবসায়ীরা এক ডজন ডিম বিক্রি করছেন ১১৫-১২০ টাকায়।
মালিবাগ হাজিপাড়ার ব্যবসায়ী মো. সাবু বলেন, কয়েক সপ্তাহ ধরেই ডিমের দাম বাড়তি। কিছুদিন আগেও এক ডজন ডিম ৯০ টাকায় বিক্রি করেছি। আর এখন এক ডজন ডিম ১১০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, বাজারে এখন ডিমের অনেক চাহিদা। খামারিরা চাহিদা অনুযায়ী ডিম সরবরাহ করতে পারছেন না। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়ে গেছে। তবে দাম বাড়লেও আমাদের বিক্রি কমেনি। আবার লাভও বাড়েনি। কারণ আমাদেরকেও বাড়তি দামে ডিম কিনে আনতে হচ্ছে।
রামপুরার ব্যবসায়ী জয়নাল মিয়া বলেন, প্রায় প্রতিদিনই ডিমের দাম বাড়ছে। ৯০ টাকা ডজন বিক্রি হওয়া ডিমের দাম দেখতে দেখতে ১১০ টাকা হয়ে গেছে। অবস্থা এমন দাম বেড়ে কোথায় যেয়ে থামবে ঠিক নেই।
ডিম ব্যবসায়ীরা বলেন, বর্তমানে বাজারে ডিমের চাহিদা যে পরিমাণে বেড়েছে, খামারিরা সে পরিমাণে সরবরাহ করতে পারছেন না। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়ে গেছে। তবে দাম বাড়লেও আমাদের বিক্রি কমেনি। আবার লাভও বাড়েনি। কারণ, আমাদেরও বাড়তি দামে ডিম কিনে আনতে হচ্ছে।
এতো বেশি দামে ডিম এর আগে কবে বিক্রি করেছেন? এমন প্রশ্ন করা হলে এই ব্যবসায়ী বলেন, আমি পাঁচ বছরের ওপরে ডিমের ব্যবসা করছি। এখন যে দামে ডিম বিক্রি করছি, এতো বেশি দামে এর আগে কখনও বিক্রি করিনি। তবে গত রোজার ঈদের আগে এক ডজন ডিম ১০৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছি।
পূর্ব রামপুরার মুদি ব্যবসায়ী মো. শামছু বলেন, কিছুদিন আগে একপিস ডিম ৮ টাকা বিক্রি করেছি। এখন এক পিস ডিম ১১ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে এক হালি নিলে ৪২ টাকা রাখা যাবে।
ডিমের দাম এতো বেশি কেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমরা বলতে পারবো না। দাম বাড়ার কারণ খামারিরাই ভালো বলতে পারবেন। আমরা আড়ত থেকে ডিম কিনে আনি। আড়তে দাম বেশি হলে আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। আড়তে দাম কমলে আমরাও দাম কমিয়ে দেবো।
এদিকে ডিমের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা। রামপুরায় ডিম কিনতে আসা আফজাল হোসেন বলেন, কয়েক সপ্তাহ ধরেই ডিমের দাম বাড়ছে। প্রথমে এক ডজনের দাম ৯৫ টাকা থেকে ১০০ টাকা হলো। কিন্তু সপ্তাহ না ঘুরতেই এখন ১১৫ টাকা ডজন হয়েছে।
তিনি বলেন, বাজারে কারও কোনো মনিটরিং নেই। ফলে যে যখন যেভাবে পারছে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের। দাম বাড়লেও আমাদের কিছু করার নেই। চুপচাপ মেনে নিয়ে বাড়তি দামেই কিনতে হবে।
গত সপ্তাহের চেয়ে আরও বেড়ে গেছে কয়েক ধরনের মাছের দামও। ইলিশ মাছ ধরার উপরে নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ার পর থেকেই অন্যান্য মাছের দাম বাড়তে শুরু করেছে।
শুক্রবার প্রতি কেজি পাবদা মাছ ৫০০-৫৫০ টাকা দামে বিক্রি হয়। টেংরা মাছ মানভেদে ৪৮০-৬০০ টাকা, তেলাপিয়া মাছ ১৪০-১৮০ টাকা কেজি বিক্রি হতে দেখা যায়। কিন্তু তেলাপিয়া মাছ সাধারণত ১৩০-১৪০ টাকা কেজি দরেই বিক্রি হয়। এদিকে টেংরা মাছ অন্যান্য সময় সাধারণত মানভেদে ৩৫০-৪৫০ টাকার মধ্যেই পাওয়া যায়। এখন এই মাছের দাম মানভেদে ৪৫০-৫৫০ টাকা।
এছাড়া রুই মাছের দাম আগের সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহে মাঝারি আকারের যে রুই মাছ ৩০০-৩২০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন প্রতি কেজি বিক্রি করতে দেখা গেছে ২৮০-৩০০ টাকায়। এর চেয়ে ছোট আকারের রুই মাছ প্রতি কেজি ১৮০-২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কই মাছ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০-২২০ টাকায়, সরপুঁটি আকারভেদে ১৮০-২২০ টাকা কেজি, পাঙ্গাশ প্রতি কেজি ১৩০-১৬০ টাকা, ছোট মলা মাছ ৩৫০-৪৫০ টাকা কেজি, চাষের শিং ও মাগুর মাছ ৫০০-৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে সবজি বাজার ঘুরে দেখা যায়, আগের সপ্তাহের সাথে মিল রেখেই বিক্রি হচ্ছে বেশিরভাগ সবজি। ৪০-৬০ টাকার মধ্যেই রয়েছে বেশিরভাগ সবজির দাম। টমেটো ও ফুলকপির দাম বেশ চড়া। নতুন সবজি হওয়ায় যথাক্রমে ৮০ টাকা কেজি টমেটো এবং ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ফুলকপি।
এদিকে বেশ কিছুদিন ধরেই স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে পেঁয়াজের বাজার। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৪৫ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা কেজি দরে।
চালের বাজারেও নেই তেমন কোনো পরিবর্তন। গুটি স্বর্ণা মোটা) ৪০ টাকা, পাইজাম ৪১-৪২ টাকা, বিরি আটাশ ৪৩-৪৫ টাকা, মিনিকেট (নিম্মমান) ৫০-৫৫ টাকা, মিনিকেট (ভালো মান) ৫৮-৬০ টাকা এবং নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা দরে।

http://www.dailysangram.com/post/350093-