১৭ অক্টোবর ২০১৮, বুধবার, ১০:০৩

‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মুক্ত গণমাধ্যমের জন্য বড় হুমকি’

বাংলাদেশে মুক্ত গণমাধ্যমের উপর বড় হুমকি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। আইনটির সংশোধনীর দাবি জানিয়ে সম্পাদক পরিষদের নজিরবিহীন মানববন্ধনের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে এ কথা বলেছে সাংবাদিকদের অধিকার বিষয়ক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ)। এতে জাতীয় সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রায় দুইমাস সময় বাকি। নির্বাচনে এই আইনের সংশোধনী হবে প্রচারণার মূল ইস্যুগুলোর অন্যতম। ওদিকে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু আল জাজিরাকে বলেছেন, আইনটি সংশোধনের কোনো পরিকল্পনাই নেই সরকারের। গতকাল এ নিয়ে বিদেশি মিডিয়ায় বেশ কয়েকটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।

আরএসএফ তাদের বিবৃতিতে বলেছে, বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকাগুলোর সম্পাদকরা নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরোধিতা করে তার সংশোধনী দাবি করেছেন। এর প্রতি সমর্থন প্রকাশ করছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস।
ওইসব সম্পাদক এই আইনটি অনতিবিলম্বে সংশোধনের জন্য সরকারের ওপর চাপ দিচ্ছেন। অপ্রত্যাশিত ঐকমত্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশের ১৬ জন সম্পাদক ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছেন। তাদের দাবি, গত সপ্তাহে কার্যকর হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারা সংশোধন করতে হবে। এতে ডেইলি স্টার-এর সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম বলেন, পার্লামেন্টের আগামী অধিবেশনে এই আইনের সবচেয়ে কঠোর ধারাগুলো নতুন করে প্রণয়ন করতে হবে।

এমন আহ্বানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের এশিয়া-প্যাসিফিক ডেস্কের প্রধান ডানিয়েল বাস্টার্ড। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের সাংবাদিকরা যে আইন নিয়ে লড়াই করছেন তার প্রতি আমাদের পূর্ণাঙ্গ সমর্থন রয়েছে। ওই আইনে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে ব্যাপকভাবে খর্ব করা হয়েছে। এ আইনে গোপনীয় সূত্র ব্যবহারকে দমন করা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর রিপোর্ট কাভারেজ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফলে বর্তমানে এ আইনটি যেভাবে আছে তা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য বিরাট হুমকি। এই মুক্ত গণমাধ্যম হলো বাংলাদেশি গণতন্ত্রের একটি স্তম্ভ।
জানুয়ারিতে এই আইনটির প্রস্তাবিত আকার প্রকাশ করা হলে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছিল আরএসএফ। তাতে তুলে ধরা হয়েছিল এর গভীর ত্রুটিগুলো। সবচেয়ে কঠোর ধারাগুলো বাতিল করার আহ্বান জানানো হয়েছিল। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক আইনের (আইসিটি) বহুল বিতর্কিত ৫৭ ধারার পরিবর্তে ব্যবহার করার মানসিকতা ছিল ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। আরএসএফ বলেছে, ওই ধারাটি সরকার ভিন্নমতাবলম্বীদের কণ্ঠকে স্তব্ধ করতে ব্যবহার করেছে। এর সর্বশেষ শিকার হয়েছেন সুপরিচিত ফটোসাংবাদিক শহিদুল আলম। তিনি গত ৫ই আগস্ট থেকে জেলে রয়েছেন। উল্লেখ্য, আরএসএফ ২০১৮ সালে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচক প্রকাশ করেছে সম্প্রতি। তাতে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৬তম।

ওদিকে আল জাজিরা লিখেছে, নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে বিরল প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলোর সম্পাদকরা। তারা বলছেন, এই আইনটি দেশের গণমাধ্যমের ওপর এক হিম প্রভাব ফেলবে। এতে সাত দফা দাবি তুলে ধরেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম। এর মধ্যে রয়েছে এই আইনের ৯টি ধারা বাতিল করা। তার মতে, এসব ধারা দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে খর্ব করবে। তিনি আল জাজিরাকে বলেছেন, বর্তমান ডিজিটাল যুগে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার পরিবেশের সঙ্গে এই আইনটি বেমানান। এতে ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা বিঘ্নিত হবে। ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান বলেছেন, এই আইন গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর এক হিম প্রভাব ফেলবে।

প্রতিবাদী সম্পাদকরা বলছেন, এই আইনের একটি ধারার বিষয়ে তারা উদ্বিগ্ন, যে ধারায় আদালতের পরোয়ানা ছাড়াই সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার ও তাদের সরঞ্জাম জব্দ করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে পুলিশকে। তাদের আশঙ্কা এমন শাস্তির ফলে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বিঘ্নিত হবে। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশে দুর্নীতি উন্মোচনের চেষ্টা ব্যাহত হবে। তবে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সাংবাদিকদের এমন উদ্বেগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেছেন, ক্রমবর্ধমান সাইবার ক্রাইম থেকে নাগরিকদের রক্ষা করতেই এই আইন করা হয়েছে। এটা দিয়ে মিডিয়া কর্মীদের পেশাগত কাজকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে না। তিনি আল জাজিরাকে বলেছেন, এই আইনটি সংশোধনের কোনো পরিকল্পনা নেই সরকারের। প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে একটি কালো আইন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। দলটি আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় এলে এ আইনটি বাতিল করার কথা বলেছে। আইনটির সমালোচকরা বলছেন, ভিন্নমতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হতে পারে এই আইন। একই রকম রিপোর্ট প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা এপি।

 

http://mzamin.com/article.php?mzamin=140607&cat=2/