১৬ অক্টোবর ২০১৮, মঙ্গলবার, ৫:০৩

চার বছরে ১২০০ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে : বিজিএমইএ

টিকতে না পেরে গত চার বছরে (২০১৪-২০১৮) এক হাজার ২০০টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে জানিয়ে তৈরী পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি মো: সিদ্দিকুর রহমান বলেছেন, আমাদের আশঙ্কা, নিকট ভবিষ্যতে আরো অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, রফতানি বাণিজ্যের চাহিদা অনুযায়ী গভীর সমুদ্রবন্দর না থাকা, দীর্ঘ লিড টাইম এবং শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা কম থাকার কারণে প্রতিযোগী দেশগুলোর চেয়ে রফতানি প্রবৃদ্ধির দিক থেকে আমরা ক্রমান্বয়ে পিছিয়ে পড়ছি।

গতকাল বিজিএমইএ অডিটোরিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। ২০১০ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত পোশাক শিল্পে মজুরি ৩৮১.৩৫ শতাংশ বেড়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। সংগঠনের ঊর্ধ্বতন নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
২০১৪-পরবর্তী সময়ে বিশ্বে পোশাকের রফতানি বাজার কমে এসেছে জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী ২০১৪ সালে বিশ্বে পোশাক রফতানির পরিমাণ ছিল ৪৮৩ বিলিয়ন ডলার, যা ২০১৭ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৪৫৪ বিলিয়ন ডলারে। অর্থাৎ ক্রেতাদের চাহিদা কমেছে, যা মূল্যভিত্তিক বাজার প্রতিযোগিতাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিযোগী দেশগুলোর চেয়ে রফতানি প্রবৃদ্ধির দিক থেকে আমরা পিছিয়ে পড়েছি।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ২০১৪-২০১৮ সময়ে আমাদের অন্যতম প্রধান বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের পোশাকের দরপতন হয়েছে ১১.৭২ শতাংশ। অথচ এ সময়ে পোশাকের গড় উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ২৯.৫৪ শতাংশ। ২০১৩-পরবর্তী সময়ে রিমেডিয়েশন বাবদ কারখানাগুলোকে ৫-২০ কোটি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। ২০১৩ সাল থেকে প্রতি বছরই ন্যূনতম ৫ শতাংশ হারে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করা হচ্ছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে কেন্দ্রীয় তহবিল কার্যকর করা হচ্ছে, যা শ্রমিকদের নানামুখী কল্যাণে ব্যয় করা হয়।

তিনি বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে পোশাক শিল্পের নি¤œতম মজুরি বিষয়ে মুষ্টিমেয় মহল থেকে বিভিন্ন রকমের বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। এতে করে জনমনে গভীর সংশয়ের সৃষ্টি হচ্ছে। বেসরকারি খাতের সর্ববৃহৎ কর্মসংস্থানকারী খাত হিসেবে আমরা মনে করি, উপরি উক্ত বিষয়ে প্রকৃত তথ্য জাতির সামনে তুলে ধরা জনমনের সংশয় দূর করা এবং শিল্পের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরা এই সংগঠনের নৈতিক দায়িত্ব।
লিখিত বক্তব্যে সিদ্দিকুর রহমান, শত প্রতিকূলতায় থেকেও গত বছরের শেষার্ধে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে আমরা মজুরি বোর্ড গঠনের জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা দিয়েছিলাম। প্রস্তাবনার পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের শুরুতে মজুরি বোর্ড গঠন হয় এবং পোশাক শিল্পের জন্য নি¤œতম মজুরি ৮ হাজার টাকা নির্ধারিত হয়। জাতীয় গার্মেন্টশ্রমিক ফেডারেশন নামের একটি সংগঠন আংশিক সত্য, বিকৃত ও ভুল তথ্য সংবলিত একটি প্রচারপত্র জনসাধারণের মধ্যে বিলি করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।

তিনি বলেন, রানা প্লাজা ধসের পর পোশাকের মূল্য কমেছে, খরচ বেড়েছে এবং বর্তমান পোশাক শিল্পের বাস্তবতায় এই মজুরি বাস্তবায়ন করা আমাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টসাধ্যÑ তার পরও আমরা পোশাক শিল্পে ৮ হাজার টাকা নি¤œতম মজুরি মেনে নিয়েছি। ২০১৩ সালেও আমরা নি¤œতম মজুরি পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা করেছি। তারও আগে ২০১০ সালে নি¤œতম মজুরি তিন হাজার টাকা করেছিলাম। ২০১০ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত পোশাক শিল্পে মজুরি বৃদ্ধির হার হচ্ছে ৩৮১.৩৫ শতাংশ।
পোশাক শিল্প আজ জাতীয় শিল্প মন্তব্য করে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, এ শিল্পের সাথে জড়িয়ে আছে এক কোটি শ্রমিক ভাই-বোনের জীবন-জীবিকা। এই শ্রমনিবিড় শিল্প খাতকে নিয়ে এমন কোনো উসকানিমূলক তথ্য পরিবেশন ঠিক হবে না, যা শিল্পকে অশান্ত করে দেয়Ñ দেশে-বিদেশে শিল্প বিষয়ে ভুল বার্তা যায় এবং শিল্পের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়। বিগত চার বছর ধরে শিল্পে একটি স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে, যার জন্য আমরা আন্তর্জাতিকভাবে অভিনন্দনও পাচ্ছি। তবে অনেকেই আছেন, যারা আমাদের এই উন্নতিতে খুশি হতে পারছেন না। এই শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি যেকোনোভাবেই হোক বিঘিœত করতে চান। তবে শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টি হলে যারা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়বেন, তারা হলেন আমাদের এই শিল্পের প্রাণ, আমাদের শ্রমিক ভাইবোনেরা।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/357417