১৫ অক্টোবর ২০১৮, সোমবার, ১০:০২

একাদশ সংসদ নির্বাচন

কমিশনের অনুমোদন ছাড়াই ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুতের নির্দেশনা

নির্বাচন কমিশনকে অবহিত না করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণে সম্প্রতি আপত্তি জানিয়েছিলেন চার নির্বাচন কমিশনার। তারা লিখিতভাবে ইসি সচিবের কাছে জাতীয় নির্বাচনসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে চান। এ নিয়ে বির্তকের মুখে পড়ে নির্বাচন কমিশন। এর পরও সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অনুমোদন ছাড়াই পোলিং কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুতের জন্য মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা জারি করেছে ইসি সচিবালয়। সচিবালয়ের সে নির্দেশনা পেয়ে কাজও শুরু করেছে আঞ্চলিক ও জেলা কার্যালয়গুলো। এরই মধ্যে ঢাকার আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ের অধীন সব জেলা নির্বাচন অফিসে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুতের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা সিনিয়র জেলা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের এ চিঠি দেন।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের মাসিক সমন্বয় সভায় ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুতসহ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত হয়। এ সিদ্ধান্ত মোতাবেক সচিবালয় থেকে মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা জারি করা হয়। এ বিষয়ে দুইজন নির্বাচন কমিশনারের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তারা মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ইসি সূত্র জানায়, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুতের বিষয়ে কমিশন কোনো অনুমোদন দেয়নি। এটি পরে কমিশন সভায় অনুমোদন করিয়ে নেয়া হবে। মাসিক সমন্বয় সভায় উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে নীতিমালা অনুসারে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুতের বিষয়ে সভার সভাপতি নির্বাচন কমিশনের সচিব নির্দেশনা দেন।

সভাপতি বলেছেন, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল এখন থেকেই প্রস্তুতের পদক্ষেপ নিতে হবে। প্যানেলে কোনোভাবেই যেন বিতর্কিত কর্মকর্তা অন্তর্ভুক্ত না হন সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তারা আওতাধীন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশান দেবেন। পরবর্তী সমন্বয় সভায় এ-সংক্রান্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে হবে।
সভা সূত্রে আরো জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সার্বিক প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সর্বশেষ হালনাগাদকৃত ভোটার তালিকায় নির্বাচনী এলাকাভিত্তিক সিডি প্রস্তুত করে আঞ্চলিক কার্যালয়ে পাঠানো হচ্ছে মর্মে সভায় জানানো হয়। এসব সিডি যাচাই করে নির্ধারিত তারিখের মধ্যে সচিবালয়কে অবহিত করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়। এ ছাড়া নতুন ভোটারদের অন্তর্ভুক্তি, স্থানান্তর, সংশোধন আবেদন গ্রহণ সংক্রান্ত স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়।
এর আগে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সব কার্যক্রম পরিচালনায় আইন ও বিধিমালা অনুসরণের নির্দেশ দিয়ে একটি অফিস আদেশ জারি করে ইসি সচিবালয়।

ওই অফিস আদেশে বলা হয়- ইসি সচিবালয়ের কিছু কিছু কার্যক্রমে ইসি সচিবালয় আইন ও কার্যপ্রণালী বিধিমালা এর বিধিবিধানের ব্যত্যয় ঘটেছে; যা চার নির্বাচন কমিশনারের নজরে এসেছে। এ সংক্রান্ত বিধিবিধান প্রতিপালন করে ইসি সচিবালয়ের সব কাজ পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশন নির্দেশনা দিয়েছেন। আইন-বিধি যুক্ত করে এ অফিস আদেশে আরো বলা হয়েছে, শাখা হতে কোনো বিষয়ে নথি উপস্থাপনকালে তা কোন পর্যায়ে নিষ্পত্তি হবে তা নথিতে উল্লেখ থাকতে হবে। নির্বাচন কমিশন বরাবর কোনো নথি উপস্থাপন হবে তা কার্যপ্রণালী বিধির তফসিলে উল্লেখ রয়েছে। নির্বাচন কমিশন বরাবর উপস্থাপিতব্য বিষয়াদির ক্ষেত্রে এ বিধির ৩(৫) অনুসরণ করতে হবে। মাঠ কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে ইসি সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব বরাবর এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এর আগে অভিযোগ উঠেছিল, ইসি সচিবালয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন সচিব ছাড়া অন্য নির্বাচন কমিশনারদের অবহিত করা হয় না। কিছু কিছু কার্যক্রমে ‘বিধিবিধানের ব্যত্যয় ঘটেছে’ উল্লেখ করে চার নির্বাচন কমিশনার আন-অফিসিয়াল (ইউও) নোট দিয়েছিলেন। ওই নোটে বলা হয়, যে পদ্ধতিতেই নিষ্পত্তি করা হউক না কেন বিধির ৪(৪) উপবিধি মতে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে বিষয়াদি নিষ্পত্তি করার বিধান থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে লঙ্ঘিত হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/357103