১৪ অক্টোবর ২০১৮, রবিবার, ১০:২৪

শাহবাগে ভোগান্তি অব্যাহত

সন্ধ্যা ৭টা। স্পট শাহবাগ মোড়। চারপাশের সকল রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শাহবাগ মোড়কে দড়ি দিয়ে দু’ভাগ করেছেন কিছু অবরোধকারী। এক পাশে অবরোধ করছেন সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে। অন্য পাশে সরকারি চাকরিতে প্রতিবন্ধী কোটা ৫ শতাংশ করার দাবিতে অবরোধ
করছেন বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ঐক্যপরিষদ। দুই গ্রুপে সব মিলিয়ে অবরোধ করছেন শতাধিক ব্যক্তি। দুই দাবিতে শতাধিক ব্যক্তির করা এই অবরোধে অচল হয়ে পড়ে ঢাকা।
ছুটির দিনে শাহবাগের আশেপাশের সবক’টি সড়কে দেখা দেয় তীব্র যানজট। ট্রাফিক পুুলিশের কর্মকর্তারা যানজট নিরসনে দম ফেলার সময় পাচ্ছিলেন না। আর সাধারণ যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছাতে গুনতে হয় প্রয়োজনের চেয়ে অধিক সময়।

অবরোধের কারণে গুলিস্তান, মতিঝিল, পল্টন, প্রেস ক্লাব থেকে মিরপুরগামী যানবাহনকে পড়তে হয় বিপাকে। ট্রাফিক সংশ্লিষ্টরা এ সড়ক দিয়ে নিয়মিত চলাচলকারী যানবাহনকে মৎস্য ভবন থেকে কাকরাইল মসজিদ মোড় হয়ে রূপসী বাংলা মোড় দিয়ে ডাইভারশন দেন। এতে করে এই সড়কে বাড়তি চাপ তৈরি হয়। অনদিকে কাওরান বাজার- বাংলামোটর দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কাঁটাবন, এলিফ্যান্ট রোডগামী যানবাহনকে বিকল্প সড়ক ব্যবহার করতে হয়। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে আসা বাংলামোটর-কাওরান বাজারগামী যানবাহনকে বিকল্প সড়কে যেতে হয়। এতে করে সব সড়কের যানবাহন ও যাত্রীদের বাড়তি ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। তবে অন্য যানবাহন বিকল্প সড়ক দিয়ে চলাচল করলেও বেশি বিপাকে পড়তে হয় ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটাল (বারডেম) ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা রোগীদের বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সকে। অন্যান্য যানবাহন ও যাত্রীদের মতো রোগী বহনকারী যানবাহনকে ভোগান্তি পোহাতে হয়। মুমূর্ষু কিছু রোগীকে অনেক পথ ঘুরিয়ে হাসপাতাল পর্যন্ত নিতে হয়েছে। টাঙ্গাইল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা এক রোগীর স্বজন জাফর আহমেদ বলেন, একটি মাইক্রোবাস নিয়ে আমরা বাংলামোটর সড়ক দিয়ে শাহবাগ মোড়ে এসে পৌঁছাই। এখানে রাস্তা বন্ধ থাকার কারণে মৎস্য ভবন দিয়ে ঘুরে আবার রূপসী বাংলা মোড় হয়ে উল্টোপথে হাসপাতালে পৌঁছেছি।

শাহবাগ মোড়ে বেসরকারি চাকরিজীবী আলম শিকদার বলেন, অবরোধকারীরা দড়ি দিয়ে এমনভাবে রাস্তা বন্ধ করে রেখেছেন যে পায়ে হেঁটে এপার থেকে ওপারে যাওয়ার উপায় নাই। তিনি বলেন, হাতেগোনা কয়েকজন অবরোধ করছেন আর সাধারণ মানুষের এত ভোগান্তি। বারডেম হাসপাতালের এক রোগীর স্বজন মঞ্জু হোসেন বলেন, ব্যস্ততম এই এলাকাতে যদি এভাবে যেকোনো বিষয় নিয়ে সড়ক অবরোধ করা হয় তবে ভোগান্তি সৃষ্টি হবেই। আনোয়ার হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, দেশটা কোথায় যাচ্ছে? দু’দিন পর পর আন্দোলন-অবরোধ। ছুটির দিনেও মানুষের একটু শান্তিতে চলার উপায় নাই। শাহবাগ মোড় বন্ধ হয়ে গেলে পুরো ঢাকাই অচল হয়ে পড়ে। কিন্তু এ বিষয়ে প্রশাসনের কোনো মাথাব্যথা নাই।


সাধারণ মানুষের ভোগান্তি নিয়ে কথা হয় প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ঐক্যপরিষদের অবরোধকারী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. মোবারকের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা সরকারি চাকরিতে ৫ শতাংশ কোটা রাখার দাবিতে বৃহস্পতিবার থেকে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছি। আমাদের দাবি মানা না পর্যন্ত আমরা এখান থেকে যাবো না। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি নিয়ে তিনি বলেন, আমরাও এখানে অনেক কষ্ট করে আন্দোলন করছি। এই সংগঠনের আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. আলী হোসেন বলেন, কোনো দাবি আদায় করতে হলে কিছু ভোগান্তি মেনে নিতে হবেই। আমাদের দাবি মেনে নিলে আমরা এখান থেকে চলে যাবো।

http://mzamin.com/article.php?mzamin=140116