১৪ অক্টোবর ২০১৮, রবিবার, ১০:২২

ভোটে মোবাইল ব্যবহার বন্ধের চিন্তা ইসির

ওয়াকিটকি কিনতে লাগবে ২০ হাজার কোটি টাকা

নির্বাচনে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েই চলেছে। ভোটগ্রহণে অনিয়ম ও জালিয়াতির খবর গণমাধ্যমে খুব অল্প পরিসরে প্রকাশিত হলেও থেমে নেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। এসব অনিয়ম প্রচারের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে মোবাইল ফোন। জালিয়াতির দৃশ্য ভোটসংশ্লিষ্টরা মোবাইল ফোনে ধারণ করে তা ইন্টারনেটের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যামগুলোতে শেয়ার করছে; যাতে সমালোচনার শিকার হতে হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে।

এই সমালোচনা ঠেকাতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন চাহিদা অনুযায়ী মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক বন্ধ রেখে নিজেরা স্যাটেলাইট ফোন বা ডিজিটাল মোবাইল রেডিও কমিউনিকেশন সিস্টেম (ওয়াকিটকি) ব্যবহার করতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসি বলছে, স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখতেই এটি ব্যবহার করা হবে। এই দুই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে সরকারের কাছে অতিরিক্ত দুই হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে কমিশন। গত বুধবার ভারপ্রাপ্ত অর্থসচিবের কাছে পাঠানো নির্বাচন কমিশনের সচিব স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, নির্বাচনে ওয়াকিটকি ব্যবহার প্রকল্পের জন্য চীন সরকারের ৫৩ কোটি টাকা অনুদান পেতে ঢাকায় চীনা দূতাবাসে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। ‘ইউজ অব ডিজিটাল মোবাইল রেডিও কমিউনিকেশন সিস্টেম (ওয়াকিটকি) ইন ইলেকশনে’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোর (এমটিবিএফ) আওতায় নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এক হাজার ১৪৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত সিলিং নির্ধারিত রয়েছে। আসন্ন নির্বাচনে সীমিতসংখ্যক আসনে ভোট গ্রহণ ও ফলাফল ঘোষণার কাজে ইভিএম ও ওয়াকিটকি ব্যবহারের জন্য মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোর আওতায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট দুই হাজার ৫২ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রয়োজন।
গত মাসে নির্বাচন ব্যবস্থায় তথ্যপ্রযুক্তি প্রয়োগের লক্ষ্য ইভিএম ব্যবহার শীর্ষক প্রকল্পের ডিপিপি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় অনুমোদন করা হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৮২৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, যা সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হবে।
এর আগে গত মে মাসে ভোটের দিন মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধের বিষয়ে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, বিটিআরসি ও মোবাইল ফোন অপারেটরদের সাথে বৈঠকে বসে ইসি। ওই বৈঠকে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করা সম্ভব নয় বলে জানায় বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি)।

নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্বাচনী সংবাদ প্রকাশ ও প্রচার বিষয়ক নীতিমালা প্রণয়ন সংক্রান্ত এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিটিআরসি, টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, মোবাইল ফোন অপারেটরের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টরা অংশ নেন।
বৈঠকে ইসির প্রস্তাবনায় বলা হয়, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচার চালাতে দেখা যায়। প্রার্থীর বিকৃত ছবি, অসত্য ও মানহানিকর তথ্য প্রকাশ করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া নানা ধরনের বিদ্বেষমূলক অপপ্রচার চালাতে দেখা যায়, যা নির্বাচনী পরিবেশ উত্তপ্ত করে। মোবাইল ফোনের এসএমএসের মাধ্যমেও বিদ্বেষমূলক অপপ্রচার চালাতে দেখা যায়। ওই প্রস্তাবনায় অনলাইন মনিটরিং সেল গঠন, যেসব ফেসবুক আইডি থেকে অপপ্রচার চালানো হয় তা শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তাব করা হয়।

বৈঠকে মোবাইল ফোন অপারেটরের প্রতিনিধিরা বলেন, একসময় ভোটের দিন মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকলেও বর্তমানে সেই সুযোগ নেই। এ ছাড়া মোবাইল ফোন বন্ধ রাখা হলে গুজব বেশি ছড়াবে, জনমনে আতঙ্ক ও নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হবে। মোবাইল ভয়েস ও ডাটা বন্ধ করা হলে কমিশনের কার্যক্রমেই বিঘœ ঘটবে। কারণ এটা হলে নির্বাচন কর্মকর্তা ও ভোটের দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। গণমাধ্যমগুলোর সরাসরি সম্প্রচারসহ সংবাদ পরিবেশনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/356875