গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বিষয়ে সম্পাদক পরিষদের উদ্যোগে সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয় -সংগ্রাম
১৪ অক্টোবর ২০১৮, রবিবার, ১০:২১

ডিজিটাল আইনের বিতর্কিত ৯টি ধারা সংশোধনে দাবি সম্পাদক পরিষদের

# আগামীকাল মানববন্ধন
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিতর্কিত নয়টি ধারা সংশোধনের দাবিতে আগামীকাল সোমবার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করবে সম্পাদক পরিষদ। মানববন্ধনে শুধু পরিষদের সদস্যরাই অংশ নেবেন।
গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলন করে সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচি ঘোষণা করেন সম্পাদক পরিষদের সদস্য দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকার সম্পাদক শ্যামল দত্ত। সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউএজ সম্পাদক নূরুল কবীর, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম, কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, নয়াদিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দীন, সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনিরুজ্জামান, করতোয়া সম্পাদক মো. মোজাম্মেল হক, ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন, যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, ঢাকা ট্রিবিউন সম্পাদক জাফর সোবহান, সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, ইনডিপেনডেন্ট সম্পাদক এম শামসুর রহমান, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক শহীদুজ্জামান খান, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম প্রমুখ।
এই কর্মসূচি হওয়ার কথা ছিল গত ২৯ সেপ্টেম্বর। সে সময় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এই কর্মসূচি স্থগিত করে সম্পাদক পরিষদকে আলোচনায় অংশ নেওয়ার অনুরোধ জানান। এরপর তথ্যমন্ত্রীসহ সরকারের তিন মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে আলোচনা করেন। ওই আলোচনায় তিন মন্ত্রীর পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগ মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হবে এবং মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেলে এ নিয়ে আরও আলোচনা করা হবে। কিন্তু গত দুটি মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
গতকালের সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শ্যামল দত্ত বলেন, তাঁরা মনে করেন, এটি প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ। সম্পাদক পরিষদ স্থগিত মানববন্ধনটি ১৫ অক্টোবর পালন করবে।
লিখিত বক্তব্যে শ্যামল দত্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যে ধারাগুলো নিয়ে সম্পাদক পরিষদের আপত্তি রয়েছে, সেগুলো তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এই আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩ ধারাগুলো গণতান্ত্রিক অধিকার, সুশাসন, স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী। আগামী ২১ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাওয়া চলতি দশম জাতীয় সংসদের ২৩তম অধিবেশনে এই ধারাগুলো সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

সাংবাদিক সম্মেলনে সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম বলেন, আমাদের সঙ্গে সরকারের তিন মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার সর্বশেষ বৈঠকে আইনমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেছিলাম, রাষ্ট্রপতি সংসদে পাস হওয়া বিলে সই করার আগেই কিছু করা যায় কিনা। তিনি বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতি সই করার পরও সরকার চাইলে সংশোধনীর মাধ্যমে আইনে পরিবর্তন আনতে পারেন। এটি একটি সুস্পষ্ট সাংবিধানিক প্রক্রিয়া। আমরা আশা করব, অনুরোধ করব, এই প্রক্রিয়া মেনে এই আইনের বিশেষ যে ধারাগুলো নিয়ে আমরা বলেছি, সেগুলোতে সংশোধনী আনবেন।
সম্পাদক পরিষদ বলছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩ ধারাগুলো স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। সম্পাদক পরিষদ কয়েক দিনের মধ্যে শুরু হতে যাওয়া বর্তমান সংসদের শেষ অধিবেশনে এই ধারাগুলো সংশোধনের দাবি জানিয়েছে।

সাংবাদিক সম্মেলনে সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম বলেন, ‘আমরা আইনটি বাতিল চাইনি। কতগুলো বিশেষ ধারার আমূল পরিবর্তন চেয়েছি। এই পরিবর্তন সম্ভব। আমরা আশা করব, ওই ধারাগুলো সংশোধন করে আইনটি সংশোধন করা হবে।’
সম্পাদক পরিষদের দাবিগুলো হলো: ১. সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতা সুরক্ষার লক্ষ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩ ধারা অবশ্যই যথাযথভাবে সংশোধন করতে হবে। ২. এসব সংশোধনী বর্তমান সংসদের শেষ অধিবেশনে আনতে হবে। ৩. পুলিশ বা অন্য কোনো সংস্থার মাধ্যমে কোনো সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে তল্লাশি চালানোর ক্ষেত্রে তাদের শুধু নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু আটকে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া যাবে; কিন্তু কোনো কম্পিউটারব্যবস্থা বন্ধ করার অনুমতি দেওয়া যাবে না। তারা শুধু তখনই প্রকাশের বিষয়বস্তু আটকাতে পারবে, যখন সংশ্লিষ্ট সংবাদপ্রতিষ্ঠানের সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনা করে কেন ওই বিষয়বস্তু আটকে দেওয়া উচিত, সে বিষয়ে যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে পারবে।

৪. কোনো সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের কোনো কমপিউটারব্যবস্থা আটকে দেওয়া বা জব্দ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই উচ্চ আদালতের আগাম নির্দেশ নিতে হবে। ৫. সংবাদমাধ্যমের পেশাজীবীদের সাংবাদিকতার দায়িত্বের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অপরাধের ক্ষেত্রে প্রথমেই আদালতে হাজির হওয়ার জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে সমন জারি করতে হবে (যেমনটা বর্তমান আইনে আছে) এবং সংবাদমাধ্যমের পেশাজীবীদের কোনো অবস্থাতেই পরোয়ানা ছাড়া ও যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ ছাড়া আটক বা গ্রেপ্তার করা যাবে না। ৬. সংবাদমাধ্যমের পেশাজীবীর দ্বারা সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের গ্রহণযোগ্যতা আছে কি না, তার প্রাথমিক তদন্ত প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে করা উচিত। এই লক্ষ্যে প্রেস কাউন্সিলকে যথাযথভাবে শক্তিশালী করা যেতে পারে। ৭. এই সরকারের পাস করা তথ্য অধিকার আইনকে দ্ব্যর্থহীনভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ওপর প্রাধান্য দেওয়া উচিত। ওই আইনে নাগরিক ও সংবাদমাধ্যমের জন্য যেসব স্বাধীনতা ও অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে, সেগুলোর সুরক্ষা অত্যাবশ্যক।

 

http://www.dailysangram.com/post/349216