১৪ অক্টোবর ২০১৮, রবিবার, ১০:১৯

রাজনৈতিক বিবেচনায় নতুন আইজিডব্লিউ অপারেটর দিতে যাচ্ছে বিটিআরসি

সরকারের শেষ সময়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় নতুন আইজিডব্লিউ অপারেটর দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। বিপুল সংখ্যক অপারেটর দেয়ার অর্থ অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসাকে বৈধতা দেওয়ার ব্যবস্থা করার নামান্তর। এতে করে জনগণের পকেট কাঁটার সকল বন্দোবস্তই করে রাখা হচ্ছে। সরকারের মেয়াদের শেষ সময়ে টেলিযোগাযোগ খাতে আন্তর্জাতিক কল পরিচালনায় ইন্টারন্যাশনাল গেইটওয়ে (আইজিডব্লিউ) লাইসেন্স নিতে আগ্রহীদের কাছ থেকে আবেদন চেয়েছে বিটিআরসি। ১৯ সেপ্টেম্বর বিটিআরসির ওয়েবসাইটে ঘোষণা দিয়ে আইজিডব্লিউ লাইসেন্স নিতে আগ্রহীদের কাছ থেকে আবেদন চাওয়া হলে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত ১৪টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন।

গতকাল শনিবার সংগঠনটির সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ এক বিবৃতিতে বলেন, আমাদের দেশে প্রতিটি রাজনৈতিক সরকারই তাদের নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যাংক-বীমাসহ বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান অনুমোদন দিয়ে থাকেন। এতে টেলিকম খাতও ব্যতিক্রম নয়। বিদেশ থেকে কোন কল আসলে প্রথমে যে অপারেটর কল পায় বা বিদেশে কল যাবার জন্য যে অপারেটরের মাধ্যমে কল যায় সেই অপারেটরের নামই হচ্ছে আইজিডব্লিউ (ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে)।
দেশে বর্তমানে আইজিডব্লিউ অপারেটর সংখ্যা ২৩টি। ২০১০ সালে অপারেটরের সংখ্যা ছিল ৪টি। ২০১২ সালে সরকার রাজনৈতিক বিবেচনায় আরও ২৫টি লাইসেন্স প্রদান করে। এতে মোট অপারেটরের সংখ্যা দাড়ায় ২৯টি। পরবর্তী বছরে ৬টি অপারেটরের কাছে বিটিআরসির পাওনা দাড়ায় ৬০০ কোটি টাকা। টাকা পরিশোধ না করার দায়ে এই ৬টি অপারেটরের লাইসেন্স বাতিল করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯ সেপ্টেম্বর নতুন করে আইজিডব্লিউয়ের জন্য আবেদন আহ্বান করে বিটিআরসি। তার বিপরীতে ১৪টি আবেদন এ পর্যন্ত জমা পড়েছে। যদি এই ১৪টি আবেদনকে লাইসেন্স প্রদান করা হয় তাহলে দেশে মোট আইজিডব্লিউ অপারেটরের সংখ্যা দাঁড়াবে ৩৭টিতে।
শনিবার বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন এক বিবৃতিতে জানান, আমাদের প্রশ্ন এতো বিপুল সংখ্যক অপারেটর থেকে গ্রাহকদের লাভ কি? নাকি অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসাকে বৈধতা দেওয়ার জন্যই এই ব্যবস্থা? এই অপারেটরদের মাঝে সেবা প্রদানের নিশ্চয়তা, জবাবদিহিতা কোনটিই নেই। অর্থাৎ মুনাফাই বেশি। মোবাইল অপারেটরদের মোট বিনিয়োগের ৫ শতাংশও এদের বিনিয়োগ করতে হয় না। অথচ লাভের পরিমাণ প্রায় সমান।

এসকল অপারেটদের আবার জোট থাকায় এদের কোন প্রতিযোগিতায় যেতে হয় না। এই জোটের নাম আইওএফ (আইজিডব্লিউ অপারেটর ফোরাম)। তবে এদের মধ্যেও ক্ষমতার ভারসাম্য করে দেওয়া হয়েছে। বেশি লাভ করে ৭টি অপারেটর। এদের শ্রেণিবিভাগ করা হয়েছে টিআর-১ ও টিআর-২ নামে। টিআর-১ অপারেটররা ১ টাকা আয় করলে টিআর-২ অপারেটররা লাভ করে ১ টাকা ৯০ পয়সা। এসব ভাগাভাগি যে রাজনৈতিক কারণে হয়েছে তা এক কথায় পরিস্কার বলে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন। যে রাজনীতি হবার কথা জনগণের কল্যাণে তা আজ মুনাফা করার হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।
সংগঠনটির সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, এটি জনগণের সঙ্গে এক প্রকার প্রতারণা ছাড়া কিছুই না। বিপুল সংখ্যক আইজিডব্লিউ অপারেটরের তখনই প্রয়োজন ছিল যদি তাদের প্রতিযোগিতার কারণে গ্রাহকরা সুবিধা পেত। তা না করে জনগণের পকেট কাঁটার সকল বন্দোবস্তই করে রাখা হয়েছে। এ অপারেটর ছাড়াও মধ্যস্বত্বভোগী আরেকটি অপারেটর আছে যাকে আইসিএক্স বা ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ বলা হয়ে থাকে। এ অপারেটর বসে বসে প্রতি কলে ৪ পয়সা ভাগ পায়। এই দু’টি অপারেটরের দৌরাত্মের কারণেও মোবাইল ফোনের কলরেট কমানো যাচ্ছে না বলে মোবাইল ফোন অপারেটররা ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময়ে স্বীকার করেছে।

তিনি বলেন, আমরা মনে করি এ দুটি অপারেটরকেও জবাবদিহিতার আওতায় এনে প্রতিযোগিতার বাজারে ছেড়ে দেওয়া হোক। আইজিডব্লিউ অপারেটরদের জোট ভেঙ্গে দিয়ে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে কলরেট কমানো হোক।
উল্লেখ্য, গত ১৯ সেপ্টেম্বর নিজেদের ওয়েবসাইটে ঘোষণা দিয়ে আইজিডব্লিউ লাইসেন্স দিতে আগ্রহীদের কাছ থেকে আবেদন চেয়েছিল বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিটিআরসি)। একই সঙ্গে ১০ অক্টোবর বুধবার পর্যন্ত আবেদন করার শেষ সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। জানা যায়, ১০ অক্টোবর পর্যন্ত বিটিআরসিতে লাইসেন্সের জন্য ১৪টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করলেও মোট কয়টি লাইসেন্স দেওয়া হবে সে বিষয়ে কিছুই নিশ্চিত করেনি বিটিআরসি। আবেদনকারী কোম্পানিগুলো হলো সোলজার্স গিয়ারস, রেড বিচ রিসোর্স লিমিটেড, এভিস টেকনোলজিস লিমিটেড, রুটস টেক কমিউনিকেশন, ইনফিনিটি টেলিকম লিমিটেড, জয়েন আস নেটওয়ার্ক, আই বিজনেস হোল্ডিংস লিমিটেড, পদ্মা কমিউনিকেশন লিমিটেড, আমান টেল, রা ইনফোটেক, লেভেল থ্রি টেলিকম লিমিটেড, ওয়েল ইনফরমেশন টেক, টুজি টেলিকম এবং রানা ট্রেডিং লিমিটেড।

 

http://www.dailysangram.com/post/349217