১৪ অক্টোবর ২০১৮, রবিবার, ১০:১২

ওয়েস্টমিনস্টার পার্লামেন্ট ও নির্বাচনকালীন সরকার

সৈয়দ মাসুদ মোস্তফা

নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকরের দাবিতে যখন বিরেধী দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে, তখন ক্ষমতাসীনদের অবস্থান সম্পূর্ণ ভিন্ন মেরুতে। বছর কয়েক আগে তদানীন্তন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমদ বলেছিলেন, তার দল ওয়েস্টমিনস্টার পদ্ধতির গণতন্ত্র চর্চা করে। যেহেতু যুক্তরাজ্যীয় এ পদ্ধতিতে কেয়ারটেকার সরকারের কোনো অস্তিত্ব নেই, তাই তারা তা মানবেন না। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ীই হবে। নির্বাচন কমিশনকে সব ক্ষমতা দিয়ে সরকার সে সময় সহায়ক সরকারের ভূমিকা পালন করবে। এটাই আমাদের সংবিধানের নিয়ম।’

এ বক্তব্যের মাধ্যমে মন্ত্রীর নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ সরকারের দাবি নাকচ ও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দলীয় অবস্থানের কথায় পুনর্ব্যক্ত করেছেন। সম্প্রতি সরকারের পক্ষে থেকে নির্বাচনকালীন সরকারের কথা বেশ জোরালোভাবে প্রচার করা হচ্ছে। যে সরকার নির্বাচনে শুধু রুটিন ওয়ার্ক এবং নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় সহায়তা করবে। কিন্তু এমন অদ্ভুত সরকারের আইনগত ভিত্তি কি তা কারো কাছেই বোধগম্য হচ্ছে না।
সরকার যদি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার ব্যাপারে এতই আন্তরিক হয়, তাহলে বর্তমান ব্যবস্থার মাধ্যমেই তা সম্ভব। শুধু সদিচ্ছা থাকলেই হয়। কিন্তু এ জন্য সবার আগে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে হবে। তা হলেই নির্বাচনকালীন বা নির্দলীয় সরকারের প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু আমাদের দেশের রাজনীতিকরা জনগণের সে আস্থা অর্জন করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের বিষয়টি অলঙ্ঘনীয় বাস্তবতা হিসেবে দেখা দিয়েছে। কিন্তু সরকার এই সঙ্গত দাবিকে পাশ কাটানোর জন্য কথিত নির্বাচনকালীন সরকারের কথা বলছে। দাবি করা হচ্ছে, এ সরকারের কোনো ক্ষমতা থাকবে না। অবস্থা যদি তাই হয়, তাহলে ক্ষমতাহীন কথিত নির্বাচনকালীন সরকারে ‘পালের গোদা’ আর হয়ে থাকার চেয়ে নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচনযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া তো অধিক সম্মানের। বস্তুত, সরকার নির্বাচনকালীন সরকারের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে নিয়ে প্রকারান্তরে এ কথা স্বীকার করে নিয়েছে যে, নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য একটা আলদা পদ্ধতি ও দলীয় প্রভাবমুক্ত সরকার দরকার। তাই সরকারের সংবিধান রক্ষার কোরাস প্রায় সবার কাছেই বেসুরো বলেই মনে হচ্ছে।

সরকারের মুুখে সংবিধান রক্ষার প্রত্যয় শোনা গেলেও অভিযোগ আছে তারা মনের মাধুরী মিশিয়ে রাষ্ট্রীয় সংবিধানকে সংশোধন করে নিজেদের ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করার সব ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করেছে। তারা সংবিধান সংশোধনের সময় বিরোধী দল বা জনগণের মতামতও গ্রহণ করেনি। সংবিধান সংশোধন করতে হলে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতামতের প্রতিফলনের বিষয়টি অনস্বীকার্য। এমনকি সংবিধান সংশোধনে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে রেফারেন্ডামের বিধান আমাদের সংবিধানেই নিকট অতীতেই ছিল এবং তা ওয়েস্টমিনস্টার সংসদীয় পদ্ধতির উল্লেখযোগ্য ও ইতিবাচক দিক। কিন্তু তা পঞ্চদশ ও ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বাদ দেয়ায় ক্ষমতাসীনদের অতিমাত্রায় স্বেচ্ছাচারী হওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে।
সরকার সংবিধানের বাইরে না যেতে চাইলেও নির্বাচনকালীন সরকারের সাংবিধানিক গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এটি সরকারের বাস্তবতাকে পাশ কাটানোর অভিসন্ধি বলেই মনে করছেন আত্মসচেতন মানুষ। সরকার সংবিধানের দোহাই দিয়ে যে নিজদের ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করতে চাইছে নির্বাচনকালীন সরকারের ধারণায় তার স্পষ্ট প্রমাণ। সংবিধানের ৫৭(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে স্বীয় পদে বহাল থাকিতে এই অনুচ্ছেদের কোনো কিছুই অযোগ্য করিবে না।’

এতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যিনি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন, তিনি নতুন একজন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব না নেয়া পর্যন্ত স্বপদে বহাল থাকবেন। এর বাইরে নতুন পদ্ধতির সরকার গঠন সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত নয়। সংবিধানের ৫৮(৪) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করিলে বা স্বীয় পদে বহাল না থাকিলে মন্ত্রীদের প্রত্যেকে পদত্যাগ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে; তবে এই পরিচ্ছেদের বিধানাবলি-সাপেক্ষে তাহাদের উত্তরাধিকারীগণ কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তাহারা স্ব স্ব পদে বহাল থাকিবেন।’

সংবিধান অনুযায়ী ক্ষমতাসীন সরকারই নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালন করবে। তাই সরকার পক্ষে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে যত কথাই বলা হোক, এর মধ্যে একটা মারাত্মক শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে বলেই মনে হয়। দাবি করা হচ্ছে, নির্বাচনকালীন সরকার রুটিন ওয়ার্ক ছাড়া সব ধরনের নীতিনির্ধারণী কাজ থেকে বিরত থাকবে। এ কথারও কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি নেই। সরকার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কোনো কোনো কাজ থেকে বিরত থাকতে পারে। কিন্তু এ জন্য কোনো সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা নেই। যেহেতু সংবিধানে রুটিন ওয়ার্ক বা নির্বাচনকালীন সরকার বলে কোনো কথা নেই, তাই বিদ্যমান ব্যবস্থায় ক্ষমতাসীনদের প্রভাবমুক্ত কোনো সরকার প্রতিষ্ঠাও সম্ভব নয়। সঙ্গত কারণেই বর্তমান সরকার ও কথিত নির্বাচনকালীন সরকারের মধ্যে কোনো তফাত থাকবে বলে মনে হয় না।
মূলত উদার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়েই আমরা মুক্তি সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছিলাম। নব্বইয়ের গণ-আন্দোলনের প্রেক্ষাপটেও রাজনৈতিক দলগুলো গণতন্ত্র ও সংসদীয় গণতন্ত্র চর্চার যে একধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার মধ্যে ছিল কার্যকর সংসদ, জবাবদিহিমূলক সরকার, আইনের শাসন, অসঙ্গতিপূর্ণ আইনগুলো বাতিল করাসহ মৌলিক মানবাধিকার, সংবাদপত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা। কিন্তু দীর্ঘ দিনেও সে লক্ষ্যে আমরা পৌঁছতে পারিনি। একশ্রেণীর উচ্চাভিলাষী রাজনীতিক ও মধ্যস্বত্বভোগী দালাল-ফড়িয়া এবং রাজনৈতিক ভাঁড়দের কারণেই ধারাবাহিক সাফল্য আমাদের কাছ থেকে হাতছাড়া হয়ে গেছে। এতে স্বার্থান্বেষী মহল উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করতে পারলেও দেশ ও জাতিকে এ জন্য চড়া মূল্যও দিতে হচ্ছে।
এ জন্য একটু পেছনে ফিরে তাকানো দরকার। মুজিবনগরের ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে’ যে সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তা ছিল রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির সরকার। স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে করা হয়েছিল রাষ্ট্রপতি। তার অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে করা হয় উপরাষ্ট্রপতি বা অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে তিনি যখন ফিরে এলেন, এর পরদিন সরকারপদ্ধতির পরিবর্তন ঘটিয়ে মোটামুটি ব্রিটিশ ওয়েস্টমিনস্টার পদ্ধতির সংসদীয় গণতান্ত্রিক সরকারপদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়। এর জন্য ১১ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি একটি আদেশ জারি করেন।

স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারির সেই অধ্যাদেশ ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। তা ছিল রাষ্ট্রের অন্তর্বর্তীকালীন ‘সংবিধান’। অধ্যাদেশের শিরোনাম ছিল ‘দ্য প্রভিশনাল কনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ অর্ডার, ১৯৭২’। সেই সাময়িক সাংবিধানটি ছিল অতি সংক্ষিপ্ত, এক পৃষ্ঠার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ১১ মাস পরে ’৭২-এর ডিসেম্বরে যে সংবিধান কার্যকর হয়েছিল, সেটির ভিত্তি ছিল ১১ জানুয়ারির রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ। সেই আদেশে ধারণ করা হয়েছিল ১৯৫৪ সালের নির্বাচনী অঙ্গীকার ২১ দফা, ১৯৬৬-এর ছয় দফা এবং ’৬৯-এর ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফার চেতনা। অর্থাৎ বাংলাদেশের জনগণের দাবি সংসদীয় গণতান্ত্রিক সরকার। সেই দাবির প্রতি সম্মান দেখাতেই শেখ মুজিব রাষ্ট্রপ্রধানের সর্বোচ্চ পদ ছেড়ে সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নেন।

আসলে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল সংসদীয় গণতন্ত্র দিয়ে। ১৯৭৩ সালের মার্চে প্রথম নির্বাচনের মাধ্যমে তা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। কিন্তু ক্ষমতাকেন্দ্রিক অপরাজনীতি ও ক্ষমতার নানা উত্থান-পতনের মাধ্যমে আমরা সে ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারিনি। দেশ আবারো রাষ্ট্রপতি শাসনের দিকে ফিরে গেছে। কিন্তু ১৯৯০ সালের গণ-আন্দোলন এবং ১৯৯১ সালের সংসদীয় নির্বাচনের পর জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে আবারো আমাদের ওয়েস্টমিনস্টার পদ্ধতির পার্লামেন্ট ফিরে এসেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের পিছু ছাড়েনি।
মূলত কমনওয়েলথ বা স্বাধীনতা পাওয়া, সাবেক ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রগুলোর বেশির ভাগই ওয়েস্টমিনস্টার পার্লামেন্টারি সিস্টেম অনুসরণ করছে বলে দাবি করা হয়। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, মালয়েশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্তত ৩৩টি দেশে ব্রিটিশ পার্লামেন্টারি ব্যবস্থার অনুরূপ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু রয়েছে বলে মনে করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের চলমান ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি, সংসদীয় ব্যবস্থার হতাশাজনক চিত্র রীতিমতো উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে।

সম্প্রতি পশ্চিমা বিশ্বের কয়েকটি রেফারেন্ডাম বা গণভোটের রায়কে বিশ্বরাজনীতির গতি-প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে। ব্রিটিশ নাগরিকরা বহুল আলোচিত ব্রেক্সিটের পক্ষে ভোট দিয়ে ব্রিটিশ ও ইউরোপের ইতিহাসের বাঁক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। ইতঃপূর্বে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে স্কটল্যান্ড ব্রিটেন থেকে আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে রেফারেন্ডামে ভোট দেয়। সে নির্বাচনে ভোটদাতাদের ৫৫ শতাংশই ব্রিটেনের সাথে থাকার পক্ষে রায় দিয়েছে।
মূলত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ বৃহত্তর সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে রেফারেন্ডামের সুযোগ জনগণের জন্য অনেক বড় অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। ক্যারিবিয়ার মার্কিন অঙ্গরাজ্য পুয়ের্টোরিকোর জনগণ একটি গণভোটে অংশ নিয়েছিল পুয়ের্টোরিকো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হিসেবে থাকবে নাকি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটাবে এই সিদ্ধান্তে আসার জন্য। ১৯১৭ সালে পুয়ের্টোরিকোর নাগরিকরা মার্কিন নাগরিক হিসেবে স্বীকৃত হওয়ার ১০০ বছর পর সম্প্রতি তারা নিজেদের রাজনৈতিক ভাগ্য পুনর্মূল্যায়নের জন্য গণভোটে অংশ নিয়েছিল। ভোটদাতাদের ৯৭ শতাংশই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে থাকার পক্ষে রায় দিয়েছে।
বিশ্বের পুরোধা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো যখন রেফারেন্ডামের মাধ্যমে অতীব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে, তখন বাংলাদেশের কথিত ওয়েস্টমিনস্টার পার্লামেন্ট সংবিধানের পঞ্চদশ ও ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে রেফারেন্ডামের ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়ে দেশে একটি রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করেছে। আদালতের একটি রায়ের দোহাই দিয়ে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে। এসব রাজনীতিকই বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাওয়ার কথা বলে বাহাত্তরের সংবিধান থেকে গণভোটের মতো মৌলিক বিষয়কে বাদ দিয়েছেন। উদ্দেশ্য কারো কাছেই অজানা নয় বরং খুবই পরিষ্কার।
যেখানে স্বচ্ছ ও বিতর্কহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ব্রিটেনের বা জাপানের ওয়েস্টমিনস্টার পার্লামেন্ট ও সরকার শুধু গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের খাতিরে যখন-তখন প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে নতুন নির্বাচনের উদ্যোগ নিতে দেখা যায়, সেখানে বাংলাদেশের কথিত ওয়েস্টমনিস্টার পার্লামেন্টের প্রধানমন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতারা ক্ষমতাকেই ‘যক্ষের ধন’ হিসেবে মনে করেন। আর এমন নেতিবাচক মানসিকতা থেকেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল ৫ জানুয়ারির কথিত নির্বাচন। এই নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দলসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনের বাইরে রেখে, বেশির ভাগ আসনে অনির্বাচিত এবং নিয়ম রক্ষার সংসদ নিয়ে মেয়াদপূর্ণ করা সংশ্লিষ্টদের সম্মান বাড়ায়নি। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও আইনের শাসনের সূচকে আমাদের অবনমনও ঘটেছে।

আমাদের দেশে নির্বাচনপদ্ধতিকে কেন্দ্র্র করেই একটা রাজনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকারপদ্ধতি বাতিল হওয়ার কারণেই একটি মীমাংসিত ইস্যুতে নতুন সঙ্কট দানা বেঁধে উঠেছে। এ জন্য আদালতের একটি রায়কে ক্ষমতাসীনরা বাহানা বানিয়েছে। আদালত কেয়ারটেকার সরকারকে সংবিধানের মূল চেতনাবিরোধী বলে রায় দিয়েছে। কিন্তু অবাধ গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটের নিরাপত্তার রক্ষাকবজ কেয়ারটেকার সরকারপদ্ধতিকে সংবিধানের মূল চেতনার অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধান সংশোধন করতে বাধা কোথায়? মাত্র পাঁচ দশকের ব্যবধানে তো সংবিধানের ১৬টি সংশোধনী আনা হয়েছে।

তাই দেশ ও জাতিকে চলমান সঙ্কট থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য আরেকটা সংশোধনী আনলে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। রেফারেন্ডামকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে তা তো জনগণের ওপর ছেড়ে দেয়া যেতে পারে। নামে ওয়েস্টমিনস্টার পার্লামেন্ট আর কাজে ‘অশ্বডিম্ব’ এমন আত্মপ্রতারণা থেকে আমাদের অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় জাতি হিসেবে আমাদের অস্তিত্ব-সঙ্কট দেখা দিতে পারে। হ
smmjoy@gmail.com

http://www.dailynayadiganta.com/post-editorial/356788