প্রশ্নপত্র ফাঁস। প্রতীকী ছবি (সংগৃহীত)
১৩ অক্টোবর ২০১৮, শনিবার, ১০:৩৯

ঢাবি ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা

ফাঁস হওয়া প্রশ্নের ৭২টি হুবহু মিল

প্রশ্ন ফাঁসের সুযোগ নেই, এটা ডিজিটাল জালিয়াতি -প্রক্টর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের (সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ) সম্মান প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ফের প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। ২০১৮-১৯ শিক্ষা বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুরুর আগেই হাতে লেখা প্রশ্ন ভর্তিচ্ছুদের মোবাইলে আসা শুরু হয়।

এবার নিয়ে টানা তৃতীয়বার ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠল। অভিযোগ অস্বীকার করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার সকাল ১০-১১টা পর্যন্ত ঢাবি ক্যাম্পাসের ৫০ কেন্দ্রসহ ৮১টি কেন্দ্রে পরীক্ষা হয়েছে।
পরীক্ষা শুরুর আগে সকাল ৯টা ১৭ মিনিটে হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জারে উত্তর লেখা সংবলিত প্রশ্ন ভর্তিচ্ছুদের মোবাইল ফোনে ছড়িয়ে পড়ে। বেলা ১১টায় পরীক্ষা শেষ হলে হাতে লেখা ওই উত্তরপত্র যাচাই করে দেখা যায়- বাংলায় ১৯টি, ইংরেজিতে ১৭টি, সাধারণ জ্ঞানে ৩৬টিসহ (বাংলাদেশ বিষয়াবলী ১৬ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী ২০) ৭২টি প্রশ্নের হুবহু মিল রয়েছে। ‘ঘ’ ইউনিটে ১০০টি প্রশ্ন থাকে।
এদিকে সকাল সোয়া ১০টার দিকে ১৪টি পৃথক কাগজে হাতে লেখা প্রশ্নপত্রের উত্তর সংবলিত কপি নিয়ে প্রক্টর অফিসে যান গণমাধ্যম কর্মীরা। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর সোহেল রানাকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি জানান, প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো সুযোগ নেই। পরীক্ষা চলার কারণে তখনও বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না। পরে মূল প্রশ্নের সঙ্গে ফাঁস হওয়া ৭২টি প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

এ প্রসঙ্গে প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী সাংবাদিকদের বলেন, নির্ভরশীল সূত্র থেকে প্রশ্ন ফাঁসের নিশ্চিত তথ্য পাইনি। প্রশ্ন ফাঁসের কোনো সুযোগও নেই। তবে ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। যে বিষয়টি বলা হচ্ছে সেটি প্রশ্ন ফাঁস নয়, ডিজিটাল জালিয়াতি।
প্রমাণিত হলে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সেটি পরের বিষয়। ফাঁস হওয়া প্রশ্ন-উত্তর বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এগুলো একই ব্যক্তির হাতে লেখা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের বক্তব্য অনুযায়ী সকাল ১০টায় পরীক্ষা শুরুর পর যদি প্রশ্নপত্র বের হয়ে থাকে তাহলে মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে তা উত্তরসহ লিখে প্রস্তুত করা কীভাবে সম্ভব? প্রক্টরের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জালিয়াত চক্র এখানে যৌথভাবে কাজ করে, পুরো ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য অল্প সময়ের মধ্যে এগুলো ছড়িয়ে দেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব।’
পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোন বা এ ধরনের কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস বা যন্ত্র সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও হল থেকে যদি প্রশ্ন বের হয় সে ক্ষেত্রে প্রশাসনের ব্যর্থতা আছে কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রক্টর বলেন, ‘এটা সফলতা ব্যর্থতার কথা নয়। আমরা পুরো বিষয়টি যাচাই করে দেখব। যদি কারও বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিষয়ে ‘ঘ’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষার সমন্বয়কারী ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, ‘আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। যতটুকু জানি, পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে শেষ হয়েছে। অভিযোগগুলো প্রক্টরিয়াল টিম যাচাই-বাছাই করে দেখবে। সর্বোচ্চ নজরদারিতে পরীক্ষা নেয়া হয়।’
ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সঙ্গে মূল প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়া গেছে- এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘বাইরের কেন্দ্রগুলোতেও পরীক্ষা নেয়া হয়। সেখানে যদি কোনো শিক্ষক-কর্মকর্তারা বাইরে গিয়ে ছবি তুলে পাঠিয়ে দেন সেটা কিছুটা...। তবে সর্বোচ্চ নজরদারির মধ্যে পরীক্ষা হয়েছে। আমাদের এখন নৈতিক দায়িত্ব রেজাল্ট তৈরি করা, আমরা সেদিকে এগোচ্ছি।’
এর আগে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষার শুরুর প্রায় ৪২ মিনিট আগে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠে। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষেও এ ইউনিটের প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠেছিল। ফের পরীক্ষা নেয়ার দাবি উঠলেও তা করা হয়নি। ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবি শাখার উদ্যোগে বিকালে ভিসির ভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখানো হয়। পরীক্ষা বাতিলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন তারা।

সংগঠনের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক রাজিব দাস যুগান্তরকে বলেন, গত বছরও অস্বীকার করেছিল। পরে প্রমাণিত হয়েছে, সেটি প্রশাসনের মিথ্যাচার ছিল। আমরা চাই না এবারও তেমন হোক। তদন্ত কমিটির গঠন করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিস্তারিত জানতে চাই আমরা। পরীক্ষা বাতিল না হলে কঠোর কর্মসূচি পালনে বাধ্য হব।
এদিকে পরীক্ষা চলাকালে ঢাবি ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান শুক্রবার বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এ বছর ‘ঘ’ ইউনিটে ১ হাজার ৬১৫টি আসনের বিপরীতে ৯৫ হাজার ৩৪১ জন ভর্তিচ্ছু ছাত্রছাত্রী ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছেন।

 

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/100285