১২ অক্টোবর ২০১৮, শুক্রবার, ৯:১২

কারাগারে থেকেও মামলার আসামি

কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার আগানগর ইউনিয়নের আগানগর মধ্যমপাড়া এলাকার মো. শহিদ মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ মাসুম (২৯)কে গত ২৪শে জুলাই একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর ২৫শে জুলাই থেকে তিনি কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। তাকে গত ৮ই সেপ্টেম্বর বরুড়া থানা পুলিশ সন্ত্রাসবিরোধী মামলায় আসামি করেন। মাসুম ওই মামলার ১৭ নম্বর আসামি। গায়েবি ওই মামলায় মাসুমকে আসামি করা হলে বিষয়টি নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। মাসুম যুবলীগের কর্মী বলে জানা গেছে। পরে পুলিশ বাধ্য হয়ে বলছে, গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা মাসুমের নাম জানিয়েছেন। তদন্ত শেষে ওর নাম বাদ পড়বে।


তবে সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরুড়া থানা পুলিশ গত ৮ই সেপ্টেম্বর ২৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৪০ থেকে ৫০ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে যে অভিযোগে মামলা করেন তেমন কোন ঘটনা ঘটেনি। ওইদিন ভোর সাড়ে ৫টায় কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার ভাউকসার ইউনিয়নের সমেষপুর আল আবরার নূরানী একাডেমি মাদরাসা মাঠে কোনো গোপন বৈঠক ও সংঘবদ্ধভাবে কেউ জড়ো হয়নি। তবে পুলিশ মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, কুমিল্লা-চাঁদপুর মহাসড়কের কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলার সমেষপুর আল আবরার নূরানী একাডেমি মাদরাসা মাঠে বসে বেগম খালেদা জিয়ার মামলার বিচারে কারাগারের অভ্যন্তরে আদালত স্থাপনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ২০ দলীয় জোট তথা বিএনপির ঘোষিত আগামী ৮ থেকে ১০ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনদিনের সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের লক্ষ্যে পলাতক ও অজ্ঞাতনামা আসামিরা সেখানে বসে একত্রিত হয়ে রাষ্ট্রের জননিরাপত্তা বিপন্নসহ ত্রাস সৃষ্টির উদ্দেশ্যে গাড়ি ভাঙচুর ও পেট্রল বোমা নিয়ে সমবেত হয়।

খবর পেয়ে পুলিশ ভোর সাড়ে ৫টায় সেখানে যান। এরপর পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে আসামিরা পুলিশকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি ককটেল নিক্ষেপ করতে থাকে। তখন পুলিশ আত্মরক্ষার্থে ৫টি রাবারের বুলেট ছুড়ে। এরপর ঘটনাস্থল থেকে পালানোর সময় মামলার ১ থেকে ৪নং আসামিকে বিস্ফোরিত জর্দার কোটাসহ গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন বরুড়ার অর্জুনতলা এলাকার দেওয়ান নজরুল ইসলাম, শুশুন্ডা গ্রামের মোস্তফা কামাল, পুরানকাদবা গ্রামের গোলাম মোস্তফা ও পয়ালগুচ্ছ গ্রামের জসিম উদ্দিন। এরা সবাই জামায়াতে ইসলামীর নেতা। এ মামলার এজাহারনামীয় ২৮ জন আসামির মধ্যে জামায়াত, বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরাও রয়েছেন।

জামায়াতের বরুড়া উপজেলার সাবেক আমির ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য দেওয়ান নজরুল ইসলামের পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন, ৮ই সেপ্টেম্বর ভোরে মসজিদে ফজরের নামাজ পড়ে বাড়িতে ঢুকছিলেন তিনি। এরপর তাকে বাড়ির সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া অপর তিন আসামিকেও বাড়ি থেকে নেয়া হয়। জানতে চাইলে সমেষপুর নূরানী আল আবরার একাডেমি মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের মাদরাসা মাঠে ওইদিন কোনো ধরনের গোপন বৈঠক হয়নি। এখানকার নাম ব্যবহার করে মামলা হয়েছে শুনে আমি নিজেও বিস্মিত হয়েছি।’

এদিকে মাসুমের মা রজবুন্নেসা বলেন, আমার ছেলেকে গত কয়েকদিন আগে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে দেখে এসেছি। শুনেছি তারে আবার মামলার আসামি করা হয়েছে। স্ত্রী নাছিমা আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী আজ ৭৮ দিন ধরে কুমিল্লা জেলে আছেন। ওরে হুদাই মিছা আসামি করছে।’ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন কুমিল্লার পুলিশ পরিদর্শক ইখতিয়ার উদ্দিন বলেন, ‘গত ২৪শে জুলাই বেলা ১টা ৩৫ মিনিটে কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার হরিপুর হাজী গণি মিয়া মার্কেটের সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করি। চলতি বছরের ২৪শে ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার ধনুয়াখোলা এলাকার মোবারক হোসেন হত্যা মামলায় মাসুমকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি কারাগারে আছেন।’ বরুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজম মাহমুদ বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা মাসুমের নাম বলেছেন। তাই ওকে আসামি করেছি। মাসুম কারাগারে থাকলে তদন্তে ওর নাম বাদ যাবে।’

http://mzamin.com/article.php?mzamin=139808