১২ অক্টোবর ২০১৮, শুক্রবার, ৮:৩৬

শিক্ষক সঙ্কটে পাঠদান ব্যাহত সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে

সারা দেশে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষকের বিশেষ করে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। ফলে পাঠদান যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি মানসম্পন্ন শিক্ষাও নিশ্চিত করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। বেশি সঙ্কট রয়েছে ইংরেজি ও গণিতের শিক্ষকের। ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিকের কারিকুলামে নতুন কয়েকটি বিষয় সংযোজন করা হলেও সেসব বিষয়ে নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ না দেয়ায় সঙ্কট আরো তীব্র হয়েছে। যার প্রতিক্রিয়া ও বিরূপ প্রভাব পড়েছে পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মাধ্যমিক স্কুলে তীব্র শিক সঙ্কট কমাতে একসাথে বড় ধরনের নিয়োগ দিতে যাচ্ছে সরকার। একসাথে প্রায় দেড় হাজার বিষয়ভিত্তিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগে প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এ রূপ একটি চাহিদাপত্র পাবলিক সার্ভিস কমিশনে (পিএসসি) দেয়ার পর নিয়োগ প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছে পিএসসি। এ ছাড়া সহকারী প্রধান শিক থেকে সহকারী জেলা শিা কর্মকর্তা পর্যন্ত বিভিন্ন পদে ৪২৩ জনকে পদোন্নতি দেয়ার তালিকাও প্রায় চূড়ান্ত করেছে কমিশন।
তবে মন্ত্রী-এমপিদের ডিও লেটারের চাপে এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীদের অনৈতিক তদবিরে হিমশিম খেতে হচ্ছে মন্ত্রণালয় আর মাউশি কর্মকর্তাদের। চাহিদা মতো শিক্ষকদের পদায়ন করলেও কেউ রাজধানীর বাইরের কলেজে যেতে রাজি নন। তারা মন্ত্রী-এমপিদের দিয়ে তদবির করিয়ে পদায়ন-বদলিকে ঠেকিয়ে রাখছেন। রাজনৈতিক চাপের মুখে বাধ্য হয়েই মন্ত্রণালয় ও মাউশি শিকদের রাজধানী ও বিভাগীয় শহরের কলেজগুলোতে পদায়ন করছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) সূত্রে জানা গেছে, দেশে পুরনো ও সদ্য জাতীয়করণসহ ৩৪৭টি সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে সহকারী শিকের পদ আছে ১০ হাজার ৩৪৪টি। এর মধ্যে এক হাজার ৬৯১টি পদই দীর্ঘ দিন ধরে শূন্য রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মচারীর পদও শূন্য রয়েছে প্রায় দুই হাজার। প্রধান শিক নেই প্রায় এক শ’র ওপর স্কুলে। ৪৭১টি সহকারী প্রধান শিক পদের মধ্যে ৪৬৩টি পদই শূন্য আছে। মাধ্যমিক স্কুলে তীব্র শিক সঙ্কট কমাতে একসাথে বড় ধরনের নিয়োগ দিতে যাচ্ছে সরকার।
মাউশির তথ্যানুযায়ী, ২০১২ সাল থেকে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীতে কারিকুলাম ও সিলেবাস পরিবর্তন করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি), শারীরিক শিা, কর্মমুখী শিা, চারু ও কারুকলা নতুন এ চারটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু নতুন বিষয়ে শিক নিয়োগ দেয়া হয়নি। ফলে এক বিষয়ের শিককে পাঠদান করতে হচ্ছে অন্য বিষয়ে। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের অভাব রয়েছে। এ কারণে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত দুরূহ হয়ে পড়েছে।

মামলা জটিলতায় ২০১৪ সালের ৬ জুন থেকে সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের শিকদের পদোন্নতি বন্ধ রয়েছে। গত বছরের ৯ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট পদোন্নতির বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে রায় দিয়েছেন। ওই রায়ে বলা হয়েছে, চাকরিতে যোগদানের তারিখ থেকে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে পদোন্নতি দিতে হবে। তবে অবশ্যই বিএড ডিগ্রি থাকতে হবে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী চাকরি বিধিমালায় পদোন্নতির বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে। ফলে পদোন্নতির েেত্রও জটিলতা কেটে গেছে। এরপরই গত এপ্রিল মাসে শিা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিা বিভাগের কর্মকর্তারা সভা করে পদোন্নতির তালিকা পিএসসিতে পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/356364