১২ অক্টোবর ২০১৮, শুক্রবার, ৮:৩০

র‌্যালির আলখাল্লা ও আমাদের দেশাত্ববোধ

সৈয়দ মাসুদ মোস্তফা : সময় বহতা নদীর মতই চলমান। তাই কালের গর্ভে অনেক কিছুই হারিয়ে যায়, আবার সময়ের পরিবর্তনে অভিনবত্বও আসে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। এই পরিবর্তনটা মোটেই কাকতালীয় হয় না বরং পূর্বাহ্নেই কিছু কিছু নমুনা বা আলামত দৃশ্যমান হয়। চক্ষুষ্মানরা তা প্রত্যক্ষ করে অলঙ্ঘনীয় পরিবর্তনের সাথে নিজেদের মানিয়ে নেয় এবং আগামী দিনে তাদের করণীয় ও বর্জনীয় নির্ধারণ করে ফেলে। ফলে তাদের অনাগত দিনের যাত্রাপথটা হয়ে ওঠে অনেকটায় স্বস্তিদায়ক। কারণ, পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে তারা নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে।

অন্যদিকে যারা আকাশে মেঘের ঘনঘটা দেখে ঝড়ের পূর্বাভাষ অনুমান করতে পারে না, বিপত্তিটা দেখা দেয় তাদের ক্ষেত্রেই। এজন্য তাদেকে অনেক সময় চড়ামূল্যও দিতে হয়। ইতিহাস একথার অনূকুলেই সায় দেয়। সুলতান ইব্রাহীম লোদী বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পারেননি বলেই ১৫২৬ সালে পানিপথের যুদ্ধে মোঘলদের কাছে সবই হারিয়েছেন। ফলে উপমহাদেশে সুলতানী রাজবংশের পতন আর মুঘল স¤্রাজের গোড়া পত্তন হয়েছিল। বাতাসের গতি বুঝতে না পারায় ১৫৩৯ সালে চৌসায় এবং পরের বছর কৌনজে শেরশাহের কাছে পর্যুদস্ত হন স¤্রাট হুমায়ন। আবার বাস্তবমুখী হওয়ার কারণেই ১৫৫৫ সালে সেরহিন্দের যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে স¤্রাজ্য ফিরে পেয়েছিলেন বাবর তনয়।
শহীদ নবাব সিরাজ মিত্র চিনতে ভুল করেছিলেন বলেই নিজ সেনাধ্যক্ষই তাকে ডুবিয়েছেন। এমনকি নবাবী ও স্বাধীনতা হারিয়ে এবং প্রাণ দিয়ে তাকে সেই ভুলের প্রায়শ্চিত্য করতে হয়েছিল। মীরজাফরও বোধহয় ফাগুনের ফুলটা ভুলভাবে দেখেছিলেন। স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিশ্বাসঘাতকার আশ্রয় নিলেও নবাবীর নামে লর্ড ক্লাইভের গর্ধভ হওয়া ছাড়া তার বিকল্প ছিল না। আমরা স্বাধীনতাও হারিয়ে বসেছিলাম। সিদ্ধান্ত গ্রহণে অদূরদর্শিতার কারণে তাকে চড়ামূল্যও দিতে হয়েছে। জনশ্রুতি আছে যে, তার পুত্র মীর সাদেক আলী খান মিরনকে তার মিত্রশক্তি ইংরেজরা তাবুতে আগুন দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। মীরজাফরের মৃত্যুর পর তার টিন এজার পুত্র নাজিম উদ্দীন আলী খান ওরফে নজমদ্দৌলা তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন। ইংরেজদের পথের কাঁটা সরানোর জন্যই তাকেও নাকি মাত্র ১ বছরের মাথায় বিষপ্রয়োগে হত্যা করা হয়েছিল। মীর কাসিম যখন বাস্তবতা উপলব্ধি করেছিলেন ততদিনে ভাগীরথিতে অনেক পানি গড়িয়ে গেছে। সময় ও প্রেক্ষাপট তার অনুকূল ছিল না। সঙ্গত কারণেই তার প্রায়শ্চিত্যও ছিল বেশ করুণ।

এ থেকে মোটেই আলাদা ছিলেন না শেষ মোঘল স¤্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ জাফরও। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসেই ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়েছিল। কোনো মতে স¤্রাটের জীবন রক্ষা হলেও এই বয়োবৃদ্ধকে বাকি জীবন রেঙ্গুনে নির্বাসনে থাকতে হয়েছে। বাদ যাননি স¤্রাজ্ঞী জিনাত মহলও। তাদের আর দেশে ফেরা হয়ে ওঠেনি। তাই তিনি আক্ষেপ করেই তার কবিতায় লিখেছিলেন, ‘কিতনা হ্যায় বদনসিব ‘জাফর’/দাফন কি লিয়ে দো’গজ জামিন ভি না মিলি/কোয়ি ইয়ার মে’। অর্থাৎ ‘কত হতভাগ্য জাফর দাফনের জন্য দু’গজ জমিও পেল না স্বজনদের জনপদে’। সিন্ধুরাজ দাহিরকেও অনুরূপ পরিণতি ভোগ করতে হয়েছিল। কারণ, তারা হয়তো সময়োচিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। বাতাসের বেগ আর ফাগুনের ফুল দেখে তারা তাদের করণীয় নির্ধারণ করতে পারেননি। তাই তাদেরকে এজন্য চরা মূল্যও দিতে হয়েছে।

আধুনিককালেও এমন নজীর দুর্লভ নয়। শ্রোতের বিপরীতে অবস্থান নেয়ার কারণেই ইতালির শাসক ও ফ্যাসীবাদের জনক বেনিতো মুসোলিনি (১৮৮৩-১৯৪৫), নাৎসীবাদের প্রবক্তা এ্যাডলফ হিটলার (১৮৮৯-১৯৪৫), ইরানের রেজা শাহ পাহলভি (১৯১৯-১৯৮০), উগান্ডার ইদি আমিন (১৯২৫-২০০৩), কোম্বোডিয়ার পল পট (১৯২৫-১৯৯৮), চিলির অগস্তো পিনোশে (১৯১৫-২০০৬), রোমানিয়ার নিকোলাই চসেস্কু (১৯১৮-১৯৮৯), ইরাকের সাদ্দাম হোসেন (১৯৩৭-২০০৬), লাইবেরিয়ার চার্লস টেলর, হাইতির জ্যাঁ ক্লদ দ্যুভেলিয়র (১৯৫১- ), তিউনিশিয়ার জয়েন আল-আবেদিন বেন আলিকে অনাকাঙ্খিত পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে। কিন্তু ইতিহাস থেকে আমরা শিক্ষা গ্রহণ করিনি বরং সনাতনী বৃত্তেই আটকে আছি।

দেশে টানটান উত্তেজনা চলছে একথা কারো অজানা নয়। আমাদের দুর্ভাগ্য যে এ অবস্থা থেকে আমরা কখনোই মুক্ত ছিলাম না। ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের পর আমাদের দেশের রাজনীতি সবসময়ই সমস্যা সঙ্কুলই ছিল। পাকিস্তান আমলটা আমাদের জন্য মোটেই স্বস্তিদায়ক হয়নি। স্বাধীনতা লাভের মাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পরও আমরা আশাহতই হয়েছি। কারণ, স্বাধীনতার প্রায় ৫ দশক অতিক্রান্ত হলেও আমাদের দেশে সুস্থ ধারার রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। ফলে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার আকাঙ্খা অধরাই থেকে গেছে। আমরা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পরিবর্তে আত্মকলহে লিপ্ত হয়েছি। কোনো কলহপ্রিয় জাতি কোনো ভাবেই সামনের দিকে এগুতে পারে না। নির্মম হলেও সত্য যে, আমরা সে ভাগ্য বরণ করতে যাচ্ছি বলেই মনে হচ্ছে।
দেশে যে একটা ক্রান্তিকাল চলছে তা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করার কিছু নেই। বিশেষ করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাজনদাররা বেশ তৎপর হয়ে উঠেছেন। যেহেতু আমাদের দেশের রাজনীতির প্রধান উপজীব্যই হলো ক্ষমতায় আরোহণ ও অবহরণকে কেন্দ্র করে। তাই যারা ক্ষমতায় আছেন তারা নিজেদের ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ ও নির্বিঘœ রাখার জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর যারা ক্ষমতার প্রভাব বলয়ের বাইরে তারাও ক্ষমতা লাভের জন্য খুবই তৎপর। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ক্ষমতাসীনরা আগামী ডিসেম্বরে সম্ভাব্য নির্বাচনকে সামনে রেখে দাবার গুটি সাজাচ্ছেন মনের মাধুরী মিশিয়ে। নির্বাচনী ময়দান নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে নির্বাচনের নামে একটি প্রীতিম্যাচের আয়োজন চলছে বলেই দৃশ্যত মনে হচ্ছে।

কোন পদ্ধতিতে মাঠে বল গড়াবে তা ঠিক না করেই প্রতিপক্ষের মন্ত্রীবরকে কুপোকাত করে নির্বাচন নামের নিয়ম রক্ষার টুর্নামেন্টে নিজেদের অনুকূলে নেয়া যায় সে কসরৎ শুরু হয়েছে বেশ আগে থেকেই। অবশ্য অনেকেই বলছেন, প্রতিপক্ষরা যাতে খেলায় মন্ত্রীই নামাতে না পারে, কিস্তি আর হাতি-ঘোড়ার তৎপরতাও যাতে নিজেরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে সে আয়োজনই পাকাপোক্ত করা হচ্ছে। সে কর্মযজ্ঞের অংশ হিসেবেই দেশে মামলাবাজীর নতুন ফেৎনা শুরু হয়েছে। বাদ যাচ্ছেন না চলৎশক্তিহীন বৃদ্ধ, প্রবাসী ও মৃত ব্যক্তিরাও।

মূলত ঘটা করে শত শত রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হচ্ছে, কিন্তু অকুস্থল ও আশেপাশের লোক ঘটনা ঘুণাক্ষরেও জানতে পারছে না। আগের দিনে এনকাউন্টার বা ক্রস ফায়ারের ঘটনা ঘটলেও এখন তা নতুন আঙ্গিক পেয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। এখন যেখানে-সেখানে গুলীবিদ্ধ লাশ পরে থাকার প্রবণতা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। ভিকটিমদের স্বজনরা দাবি করছেন, ঘটনার আগেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদেরকে তুলে নিয়েছি। মূলত নির্বাচনী মাঠ যেভাবে সকলের জন্যই সমান্তরাল হওয়ার দরকার তা কিন্তু হচ্ছে না বরং বিভিন্ন কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে নির্বাচনী ময়দানকে পরিকল্পিভাবেই অসমতল করে তোলা হচ্ছে। আর এই খেলার রেফারীর ভূমিকা নিয়ে মাঠের প্রতিপক্ষরা বেশ দুশ্চিন্তায় আছে বলেই মনে হচ্ছে।

মূলত খেলা যাতে সেয়ানে সেয়ানে না হতে পারে এজন্যই তো জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি বেশ আগেই বাতিল করা হয়েছে। ফলে এখন ময়দানী প্রতিপক্ষরাই খেলার মাঠের রেফারী বা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছেন। অবশ্য বিশে^র অপরাপর রাষ্ট্রে নির্বাচনে এমন সংস্কৃতিই চালু আছে। কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটটা তেমন নয়। রাজনীতিকরা যে আমাদেরকে একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে পারবে এমন আস্থা জনগণের নেই। অন্যান্য দেশে ক্ষমতায় থেকে নির্বাচনের হেরে যাওয়া ও শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের রেওয়াজ থাকলে আমাদের প্রেক্ষাপটে তা কল্পনারও অতীত। স্বাধীনতা পর বিগত ১০ টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে সে রূঢ় বাস্তবতায় আমাদের সামনে ফুটে ওঠে।
১৯৭৩ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এককভাবে অর্জন করেছিল ৩ শ’ আসনের বিপরীতে ২৯৩ আসন, ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন বিএনপি ২০৭ আসন, ১৯৮৬ সালে তৃতীয় ও চতুর্থ সংসদে ক্ষমতাসীন জাপা যথাক্রমে ১৫৩ ও ২৫১ আসন, প্রথমবারের মত নির্দলীয় সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি পেয়েছিল ১৪০ আসন। ১৯৯৬ সালে ষষ্ঠ সংসদে ক্ষমতাসীন বিএনপি পেয়েছিল প্রায় সকল আসন। কিন্তু একই বছরে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে সপ্তম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ১৪৬ আসন।

২০০১ সালে দ্বিতীয় বারের মত কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে ৮ম জাতীয় সংসদের নির্বাচনে বিএনপি ১৯৩ আসন পেয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল। নবম সংসদের নির্বাচনে হয়েছিল জরুরি সরকারের অধীনে ২০০৮ সালে। সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৩০ আসন লাভ করে ভূমিধ্বস বিজয় অর্জন করেছিল। আর ২০১৪ সালের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধীনে একতরফা নির্বাচন হওয়ায় ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে বিনা নির্বাচনেই জাতীয় সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল। তাই বিষয়টি নিয়ে চর্বিত-চর্বনের কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।
বিগত ১০টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিসংখ্যান ও বাস্তবতা থেকে জানা যায়, ক্ষমতাসীনদের অধীনে নির্বাচনে ক্ষমতাসীনরা কখনোই ক্ষমতা হারায়নি বা বিরোধী দলও নির্বাচনে জয়লাভ করেনি। আর যেসব নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে হয়েছিল সেসব নির্বাচনের সদ্য বিদায়ী ক্ষমতাসীনরা একবারও ক্ষমতায় আসতে পারেনি। এতে এ বাস্তবতায় ফুটে উঠেছে যে, আমাদের দেশের ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য দলীয় সরকারের অধীনে কোন ভাবেই নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হওয়ার সুযোগ নেই। বরং নির্বাচনের জনমতের প্রকৃত প্রতিফলন ঘটাতে হলে দরকার নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার। কিন্তু আমরা এই বাস্তবতাকে কোনো ভাবেই স্বীকার করছি না বরং বাতাস ও শ্রোতের বিপরীতে অবস্থা গ্রহণ করে জনজীবনকে দুর্বিসহ করে তুলছি।

সত্য কখনোই শক্তিহীন নয়। আমাদের দেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ যে প্রায় অনুপস্থিত তা ক্ষমতাসীনরা ছাড়া প্রায় সকলেই উপলব্ধি করতে পেরেছে। আগে যারা সরকারের পক্ষে যারা গলাবাজী করেছেন নির্মম বাস্তবতায় তাদেরকেও গোঁফ নামিয়ে কথা বলতে শুনা যাচ্ছে। এমনকি বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলও উদ্বেগ-উৎকন্ঠা জানিয়ে আসছে। এমন উপলব্ধিতেই ও নির্বাচনকে অবাধ এবং গ্রহণযোগ্য করার জন্যই যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়েছে। তারা ইতোমধ্যেই ৫ দফা দিয়েছেন। প্রধান প্রধান রাজনৈতিক শক্তিগুলো এক্ষেত্রে আগে থেকেই একাট্টা। কূটনৈতিক মহল থেকেও সবার অংশগ্রহণে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের তাগিদ দেয়া হয়েছে। মূলত নির্বাচনকে অবাধ করার জন্য জাতীয় ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। কিন্তু এক্ষেত্রে সরকার বোধহয় উল্টোপথেই বিচরণ করছে। ক্ষমতাসীনরা হয়তো উপলব্ধিই করতে পারছে না যে, ৫ জানুয়ারির প্রেক্ষাপট আর বর্তমান সময় এক নয়। তাই তারা শ্রোতের সম্পূর্ণ বিপরীতে অবস্থান নিয়ে যেকোন ভাবে রাজদন্ড নিজেদের কব্জায় রাখার একটা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

পরিস্থিতি আর প্রেক্ষাপট যে তাদের জন্য ততটা অনুকূল নয় একথা বোধহয় সরকার পক্ষও উপলব্ধি করতে পেরেছে। তাই তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফেৎনা থেকে বাঁচার জন্য নাম সর্বস্ব দলগুলোর কাঁধে ভর করার চেষ্টা করছে বলেই মনে হচ্ছে। কিন্তু পরিস্থিতি যেভাবে দ্রুত পাল্টাচ্ছে তাতে এমন খড়কুটার আশ্রয় গ্রহণ করে খুব একটা সুবিধা হবে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। ঝড়ের আগাম বার্তা দেখে সতর্ক হতে না পারলে তা অনুশোচনার কারণ হলেও হতে পারে।
বস্তুত, আকাশে যে কালো মেঘের ঘনঘটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো যদি শ্রোতের বিপরীতে অবস্থান নেয় তাহলে হয়তো মহাপ্রলয় ঠেকানো যাবে বলে মনে হয় না। সবার লক্ষ্য হওয়া উচিত জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করে গণপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠায় দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা। এক্ষেত্রে কোনো পক্ষেরই হীনমন্যতা থাকা উচিত নয়। জনশ্রুতি আছে যে, ইংরেজ কবি স্যার ওয়াল্টার র্যা লি রানি এলিজাবেথের সামনে কাদামাখা পথে নিজের আলখাল্লা বিছিয়ে দিয়েছিলেন, যাতে রানির পায়ে কাদা না লাগে! প্রায় ৪শ বছর আগের এই ঘটনা অনুসরণে আমরা কি পারি না গণতন্ত্রের স্বার্থে ও দেশাত্ববোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেদের আলখাল্লা উৎসর্গ করতে?

http://www.dailysangram.com/post/349006