১০ অক্টোবর ২০১৮, বুধবার, ১১:০৭

চড়া সুদের বিল্ডার্স ঋণে হচ্ছে ইউরিয়া সারকারখানা প্রকল্প

একনেকে ৩২ হাজার ৫২৪ টাকার ২০ প্রকল্প অনুমোদন

গড়ে প্রায় তিন শতাংশের বেশি সুদে ঋণ নিয়ে ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য বিল্ডার্স ফাইন্যান্সের মাধ্যমে আট হাজার ৬১৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা বিভিন্ন সুদ হারে ঋণ নেয়া হচ্ছে বিদেশী কোম্পানির নিকট থেকে। দশ হাজার ৪৬০ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পটি একনেক থেকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাংক ও জাপানের কাছে অর্থায়নের অনুরোধ জানানো হলে তারা অপারগতা প্রকাশ করায় পরে বিল্ডার্স ফাইন্যান্সে এই কারখানা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে একনেক সভা শেষে ব্রিফিংএ শিল্প শক্তি বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল শেরেবাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) সার-কারখানা স্থাপন প্রকল্পটিসহ মোট ২০টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রকল্পগুলোর ব্যাপারে সাংবাদিকদের অবহিত করেন। তিনি জানান, ২০ প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে ৩২ হাজার ৫২৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১৫ হাজার ৪৯৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা দেয়া হবে সরকারি তহবিল থেকে। এ ছাড়া সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে আসবে ১১ হাজার ৬৫৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য পাওয়া যাবে বলে ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৩৭৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা।

একনেক বৈঠকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন প্রকল্প (২ হাজার ৮৬১ কোটি ৩১ লাখ টাকা); জরুরি সহায়তা প্রকল্প বিআরবি অংশ (কক্সবাজারে আশ্রয়গ্রহণকারী মিয়ানমার নাগরিকদের জন্য বিদ্যুতায়ন) প্রকল্প (১০৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা); রুরাল কানেটিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট (আরসিআইপি) প্রকল্প (৩ হাজার ৬৬৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা); বাংলাদেশ ইমারজেন্সি অ্যাসিসট্যান্স (এলইডি অংশ) প্রকল্প (২৯৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা); বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কিল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্প (১ হাজার ৯৫৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা); কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠাইন উপজেলায় নির্মিতব্য মিঠাইন সেনা উপস্থাপনার ভূমি সমতল উঁচুকরণ, ওয়েভ প্রটেকশন ও তীর প্রতিরক্ষা কাজ প্রকল্প (৩০৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা); চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালী উপজেলা এবং রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার কাপ্তাই উপজেলায় কর্ণফুলী ও ইছামতি নদী এবং শিলক খালসহ অন্যান্য খালের উভয় তীরের ভাঙন থেকে রক্ষা প্রকল্প (৩৯৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা); রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া ও রংপুর সদর উপজেলায় তিস্তা নদীর ডান তীর ভাঙন থেকে রক্ষা প্রকল্প (১৬৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা); ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট (বাংলাদেশ) প্রকল্প (৩ হাজার ৬৮৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা); গোবিন্দগঞ্জ-ঘোড়াঘাট-বিরামপুর-ফুলবাড়ী-দিনাজপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মানে উন্নতীকরণ প্রকল্প (৮৮২ কোটি ৯১ লাখ টাকা)। এ ছাড়া একনেকে অনুমোদিত কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক (এন-১) উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৪৫৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা; খুলনা সিটি করপোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা উন্নয়ন ও পুনর্বাসন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৬০৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা; দেশের গুরুত্বপূর্ণ ২৫টি (সংশোধিত ৪৬টি) উপজেলা সদরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৪১৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা; জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৯২০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা; শহীদ এম এনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ ও ৫০০ শয্যার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সিরাজগঞ্জ স্থাপন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৮৮৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা; ১২টি ক্যাডেট কলেজের অবকাঠামোগত সুবিধা সম্প্রসারণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৪২৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা; পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন (কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুর জেলা) প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৭৬৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা; নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর গুদারাঘাটের কাছে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর কদমরসুল ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৫৯০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা এবং চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলে (বেজা) বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সড়ক কাম বেড়িবাঁধ প্রতিরক্ষা ও নিষ্কাশন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬৫৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
পলাশ সার কারখানার ব্যাপারে একনেক থেকে জানানো হয়, তিনটি প্রতিষ্ঠান এতে অর্থায়ন করবে। তাদের ঋণের সুদ হার তিন ধরনের। তবে গড় সুদ হার হবে ৩ শতাংশের কিছু বেশি। বর্তমানে দেশে ইউরিয়া সারের বার্ষিক চাহিদা ২৬-৩০ লাখ মে.টনের বিপরীতে বিসিআইসির আওতাধীন ছয়টি ইউরিয়া সার কারখানায় বার্ষিক মোট উৎপাদন হয় ৯-১০ লাখ মে. টন। ঘাটতি প্রায় ১৭-২০ লাখ মে. টন ইউরিয়া সার কাফকো ও বিদেশ থেকে আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়।

নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলায় ১৯৭০ সালে দৈনিক ১৪০০ মে. টন (বার্ষিক ৪ লাখ ৭০ হাজার মে. টন) ক্ষমতাসম্পন্ন ঘোড়াশাল ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি এবং একই স্থানে ১৯৮৫ সালে দৈনিক ৩০৫ মে. টন ক্ষমতাসম্পন্ন পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি স্থাপিত হয়। কারখানা দু’টি দীর্ঘদিন উৎপাদনে থাকায় যন্ত্রপাতি পুরনো ও জরাজীর্ণ হয়ে পরিচালন ব্যয় বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়ে অলাভজনক হয়ে পড়েছে। ওই দু’টি সার কারখানায় বর্তমানে দৈনিক ৬৪ দশমিক ৭ এমএমসিএফ গ্যাস ব্যবহার করে দৈনিক সর্বোচ্চ এক হাজার ৫০ মে. টন সার উৎপাদন করা যায়। অথচ একটি আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তির সার কারখানায় একই পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করে দৈনিক দুই হাজার ৮০০ মে. টন ইউরিয়া সার উৎপাদন সম্ভব।

একনেকের তথ্যানুযায়ী, ইআরডি বিশ্বব্যাংক ও জাপানকে এ প্রকল্পে অর্থায়নের অনুরোধ করলে বিশ্বব্যাংক অর্থায়নে অপারগতা প্রকাশ করে এবং জাপান থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। ফলে দরপত্রদাতাদের স্ব-উদ্যোগে প্রয়োজনীয় বৈদেশিক ঋণসহ সমুদয় অর্থ সংগ্রহ পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির কাছে প্রস্তাব দেয়া হয়। ২০১৫ সালের এপ্রিলে মন্ত্রিসভা কমিটি প্রস্তাবটি অনুমোদন দেয়।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/355824