জাবিতে আবারও ভর্তি বৈষম্যের শিকার মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। ছবি - সংগৃহীত
১০ অক্টোবর ২০১৮, বুধবার, ১১:০৬

জাবিতে আবারও ভর্তি বৈষম্যের শিকার মাদরাসার শিক্ষার্থীরা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারও ভর্তি বৈষম্যের শিক্ষার হচ্ছে মাদরাসা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। কোন যৌক্তিক কারণ ছাড়াই ডিন-বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দোহায় দিয়ে আরো বৈষম্য বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে অন্যায়ের আশ্রয় নিয়ে নিয়ম ও মেধার অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। মঙ্গলবার প্রকাশিত কলা ও মানবিকী অনুষদের ফলাফল বিশ্লেষন করে জানা যায়, কলা ও মানবিকী অনুষদে ভর্তির ক্ষেত্রে ‘বিজ্ঞান’, ‘মানবিক’, ব্যবসা শিক্ষা ও মাদরাসা ও কারিগরি নামে ৪ ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়। কিন্তু মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইসএসসি পাশ করে আসা বিজ্ঞান বিভাগ ও মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের ‘বিজ্ঞান’ ও ‘মানবিকে’ অন্তর্ভূক্ত না করে তাদেরকে আলাদা করা হয়। সেখানে অনুষদের মোট ৩৩৭ টি আসনের মধ্যে ১৩টি আসন দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে অনেক আগ থেকে বৈষম্যের প্রশ্ন উঠলে কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক আশ্বস্ত করেন ‘এ পরীক্ষা থেকে আর কোন অন্যায় বৈষম্য থাকবেনা, মাদরাসার মানবিককে মানবিক শাখার অন্তভূক্ত করেই রেজাল্ট প্রকাশ করা হবে। কিন্তু এখন আবার বিভাগের দোহাই দিচ্ছেন।’

অন্যদিকে কলা অনুষদভূক্ত কয়েকটি বিভাগের চেয়াম্যানরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ডিনের দায়িত্ব হচ্ছে ভর্তিতে কোথায় অসঙ্গতি অন্যায় বৈষম্য হচ্ছে কিনা তা দেখা। কিন্তু মাদরাসা ছাত্ররা মানবিক শাখার সব শর্ত পূরণের পর হাইকোর্টের আদেশের ভিত্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল বিশ্ববিদ্যালয় মাদরসা শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে কোন বৈষম্য না রাখছেনা। এবিষয়টি আমাদের বিভাগকে কোন নোটিশ দিয়ে অবহিত বা সতর্ক করা হয়নি। ফলে বিভাগও আগের নিয়মে চলছে।
এছাড়াও মাদরাসা শিক্ষার্থীরা মানবিক শাখার হলেও তাদের তুলনায় বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য কলা অনুষদে বেশি সিট দেয়া হয়েছে। কলা ও মানবিকী অনুষদে মোট ৩৩৭ আসনের বিপরীতে দশগুণ মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। বিজ্ঞান বিভাগের ছেলে ৭৯, মেয়ে ৭৯; মানবিক বিভাগের ছেলে ৭৭, মেয়ে ৭৭; ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ছেলে ২১, মেয়ে ১৭ এবং মাদরাসা ও টেকনিক্যাল বিভাগের ছেলে ১১ এবং মাত্র ২ জন মেয়ের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।‘মানবিক’ ও ‘বিজ্ঞান’ বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রায় সমান সংখ্যক সিট বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

এবিষয়ে ভোলা থেকে আগত এক ভর্তিচ্ছু মেয়ে শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, ‘মাদরাসার সাথে অন্যায় ও আইন বিরোধী আচরণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কি লাভ তা আমার বুঝে আসেনা। কলা অনুষদের সাতটি বিভাগের জন্য মাত্র দুইজন মাদরাসা ছাত্রীকে সিলেক্ট করা হয়েছে। সাত বিভাগে বিভাগে দুইজন ভর্তি হবে। এর মানে কি? যে জাবিতে মেয়েদের প্রাধান্য দেয়া হয়। সেই ক্যাম্পাসেই এখন মেয়েদের অবজ্ঞা ও অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে শুরু মাদরাসায় পড়ার কারণেই।’

এ বিষয়ে দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোস্তফা নাজমুল মানছুর বলেন,‘আমাদের বিভাগ থেকেই ডিনকে দুইজন মাদরাসা ছাত্রী ভর্তির চাহিদা দেয়া হয়েছে। তাহলে পুরো অনুষদে কিভাবে দুইজন ছাত্রী ভর্তির অনুপাতে রেজাল্ট প্রকাশ করা হয় তা বুঝে আসে না। তিনি আরো বলেন, ‘বিভাগ ভর্তি জটিলতার অনেক বিষয়েই অবহিত নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ব সার্বিক খোঁজ নিয়ে বৈষম্য বিলোপ করা। আমি যতদূর জানি এর আগে মাদরাসা শিক্ষার্থীরা হাইর্কোটে রিটের করলে আদালত জাবিকে বৈষম্য বিলোপে একটা নির্দেশনা দেয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আজও সে নির্দেশনাটি আমাদেরকে নোটিশ দিয়ে অবহিত করেনি। তাই পূর্বের বৈষম্য আবারও থাকছে অন্যভাবে হচ্ছে।

এদিকে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক বুলবুল আহমেদ বৈষম্যেও বিষয়টি স্বীকার করে বলেন,‘সব শর্ত পূরণ করলেও একাডেমিক সভায় মাদরাসার বিষয়ে এক এক শিক্ষকের এক এক চাহিদা থাকায় সর্বসম্মতিতে বৈষম্য বিলুপ্ত হচ্ছে না। এবিষয়টি একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় ভিসির হস্তক্ষেপে কার্যকরভাবে বৈষম্য বিলোপ করা সম্ভব।

কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. মোজাম্মেল হক বৈষম্যেও বিষয়টি স্বীকার করে বলছেন, ‘অনেক বিভাগ মাদরাসা শিক্ষার্থী নিতে চায় না। আমি শুধু তাদের চাহিদা মাফিক বন্টন করি। এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক নূরুল আালমকে কয়েকবার ফোন করে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষ দাখিল এবং ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের আলিমে বাংলা ও ইংরেজিতে যথাক্রমে দু’শ নাম্বার অন্তর্ভূক্ত করে। অন্যান্য মৌলিক বিষযগুলোও কলেজ-মাদ্রাসার একই সিলেবাসের অন্তভূক্ত করা হয়েছে। এর ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদেরকে কলেজের সাথে প্রতিদ্বন্ধিতা করতে আর বাধা নেই। কিন্তু জাবিতে সে বৈষম্যের ধারা অব্যাহত রয়েছে বিভিন্ন আঙ্গিকে।

 

http://www.dailynayadiganta.com/education/355838