৯ অক্টোবর ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:৩১

পণ্য পরিবহনে অচলাবস্থা

সড়ক পরিবহন আইনের বিরোধিতা করে মালিক-শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটে অচল হয়ে পড়েছে পণ্যপরিবহন ব্যবস্থা। যানবাহন বন্ধ রেখে ধর্মঘট পালন করায় সারা দেশে পণ্য পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। এমনকি রপ্তানিমুখী পণ্যও বন্দরে নিতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। নিরাপদ সড়কের দাবিতে চলা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পাস হয় সড়ক পরিবহন আইন। আইন পাসের পর তেমন একটা বিরোধিতা না করলেও এখন সুযোগ বুঝে মানুষকে জিম্মি করে মালিক-শ্রমিকরা ধর্মঘটে নেমেছে বলে অভিযোগ নিরাপদ সড়ক আন্দোলন সংশ্লিষ্টদের।

এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ। বৈঠকে শ্রমিকদের সাত দফা দাবির বিষয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়। গতকাল রাত সাড়ে ৮টায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শুরুর আগে পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক তালুকদার মোহাম্মদ মনির মানবজমিনকে জানান, এর আগেও মন্ত্রী তাদের আশ্বাস দিয়েছেন তাদের দাবি বিবেচনা করা হচ্ছে। সদ্য পাস হওয়া সড়ক পরিবহন আইন সংশোধন করার বিষয়ে ভেবে দেখা হচ্ছে।

বৈঠকে এ বিষয়ে কথা হবে। সরকার তাদের দাবি মেনে নিলে মঙ্গলবার ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়া হবে বলে জানান তিনি। তালুকদার মোহাম্মদ মনির বলেন, আমরাও চাই না মানুষ কষ্ট পাক। ধর্মঘটের কারণে পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে। এতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন মানুষ। কিন্তু যে আইনের কারণে শ্রমিকদের জীবন হুমকির মুখে সেই আইন মেনে নেয়া যায় না। মৃত্যু পরোয়ানা মাথায় নিয়ে শ্রমিকরা রাস্তায় পণ্যবাহী গাড়ি চালাবে না।

কোনো শ্রমিক ইচ্ছা করে রাস্তায় মানুষ মারে না। অনেক কারণে সড়ক দুর্ঘটনা হতে পারে। এজন্য শুধু শ্রমিককে ফাঁসি বা জেল দেয়ার বিধান মানা হবে না। এই আইন পরিবর্তন করতে হবে বলে দাবি করেন তিনি।

তাদের সাত দফা দাবির অন্যতম হচ্ছে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ সংশোধ। এ ছাড়াও অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনায় ৩০২ ধারায় মামলা গ্রহণ না করা, পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার বিধান বাতিল ও জামিনযোগ্য ধারায় মামলা করা, টাঙ্গাইল জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সদস্য হাসমত আলীসহ মালিক ও শ্রমিক মুক্তি, পুলিশের হয়রানি বন্ধ করা, গাড়ির কাগজপত্র চেকিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করা, পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ট্রাক টার্মিনাল বা স্ট্যান্ড নির্মাণ করা, গাড়ির মডেল বাতিল করতে হলে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া, সহজ শর্তে ভারী যানবাহন চালককে ভারী লাইসেন্স দেয়া ও এর আগ পর্যন্ত হালকা বা মধ্যম লাইসেন্স দিয়ে ভারী যানবাহন চালানোর সুযোগ দেয়া, সারা দেশে গাড়ির ওভারলোডিং বন্ধ করা এবং ফুটপাথ, ওভারব্রিজ, আন্ডারপাস ও জেব্রাক্রসিং ব্যবহার নিশ্চিত করা।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আট নেতা অংশ নেন। তাদের মধ্যে ছিলেন পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মুকবুল আহমদ, সদস্য সচিব তাজুল ইসলাম, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক তালুকদার মোহাম্মদ মনির, আন্তঃজেলা ‘পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহমদ আলী, শামসুল আলম প্রমুখ।

শনিবার রাজধানীর তেজগাঁও ট্রাক টার্মিনালে এক সমাবেশে পণ্য পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয় সংগঠনটি। ওই সমাবেশে ‘পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাস্তায় পণ্যবাহী গাড়ি চলবে না। আর দাবি মেনে নেয়া হলে আগামীতে যেকোনো রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বর্তমান সরকারকে সহযোগিতা করা হবে বলে ঘোষণা দেন তারা।

পরদিন রাজধানীর ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ডে এক সমাবেশে চিত্র নায়ক ও নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)’র চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ। গতকাল দিনভর রাজধানীর বিভিন্ন স্ট্যান্ডে ট্রাক-পিকআপ পার্কিং করা ছিল। শ্রমিকরা অলস সময় কাটাচ্ছিলেন। কোথাও কোথাও ট্রাক চালাতে চাইলেও শ্রমিকরা বাধা দিয়েছেন। এমনকি কোনো চালককে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে বিক্ষোভ করেছে শ্রমিকরা।

এসময় অন্তত ১৫টি গাড়ি ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেছে তারা। ধর্মঘট চলাকালে বিভিন্ন স্থানে পরিবহন শ্রমিকরা সড়ক আটকে অন্য যানবাহন চলাচলে বাধা দেন। যেসব চালক পণ্যবাহী গাড়ি চালিয়েছেন তাদের আটক করে মারধরও করা হয় বিভিন্ন স্থানে। এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন সাতরাস্তা কাওরান বাজার সড়ক থেকে ট্রাক স্ট্যান্ড তুলে দেয়া হলেও গত দুই দিন ধরে ধর্মঘটে থাকা পরিবহন সারি করে রাখা হয় ওই সড়কে। এতে সড়কটি দিয়ে অন্য যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।

 

http://mzamin.com/article.php?mzamin=139356