৯ অক্টোবর ২০১৮, মঙ্গলবার, ৮:১৩

আরপিও সংশোধনের আগেই ইভিএম বিধিমালা প্রস্তুত

জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) যোগ করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (আরপিও) সংশোধন সংক্রান্ত আইনের খসড়া অনুমোদন করেছে ইসি। এটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিং পর্যায়ে রয়েছে। তবে ওই আইন পাস হওয়ার আগেই নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার সংক্রান্ত বিধিমালা তৈরি করেছে ইসি। সাধারণত কোনো আইন পাস হলে তার ভিত্তিতেই সে আইন বাস্তবায়ন/প্রয়োগ সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়ে থাকে।

জাতীয় নির্বাচনে ইভিএমে ভোট দানের জন্য তিন হাজার ৮০০ কোটি টাকার প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদন হয়েছে। এই অর্থ দিয়ে দেড় লাখ ইভিএম প্রস্তুত করা হবে; প্রতিটি ইভিএমের পেছনে ইসির ব্যয় হবে দুই লাখ টাকা। তবে ইভিএম জাতীয় নির্বাচনে ব্যবহার নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরস্পরবিরোধী অবস্থানে রয়েছে। ক্ষমতাসীনদের সায় থাকলেও এর ঘোর বিরোধী সংসদের বাইরে থাকা দল বিএনপির। কিন্তু ইসি কোনো কিছু তোয়াক্কা না করে এ প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকেছে। এ নিয়ে সমালোচনার মুখে রয়েছে সাংবিধানিক সংস্থাটি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্ষমতা অপপ্রয়োগের শাস্তি অর্থ দণ্ড এ বিধান রেখে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) বিধিমালার খসড়া তৈরি করেছে নির্বাচন কমিশন-ইসি। বিধিতে ২৫টি ধারার অধীনে অনেকগুলো উপধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে ৩০০ সংসদীয় আসনে পুরো কিংবা আংশিকভাবে ইভিএমে ভোট নেয়ার বিধান যোগ করা হয়েছে। এ ছাড়া কোনো ভোটার অজ্ঞতাবশত পছন্দের দলীয় প্রতীক কিংবা প্রার্থীর প্রতীক চিহ্নটি ভুলে গেলে সবুজ (ভোটদান সম্পন্ন) বাটন চাপ দেয়ার আগে লাল বাটন চেপে প্রতীক নির্বাচন করে তার ভোট দিতে পারবেন। ভোটের তথ্য সংরক্ষণে ইভিএমের কন্ট্রোল ইউনিটে একটি স্মৃতি ভাণ্ডার (মেমোরি স্টোরেজ) অন্তর্ভুক্ত রেখেছে ইসি। এই প্রযুক্তি পরিচালনার জন্য স্বতন্ত্র কারিগরি কমিটি কাজ করবে। এ ছাড়া নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বিতর্ক এড়াতে ইভিএমে ভোটদান প্রক্রিয়া নির্বাচনের ফলাফল গেজেটে প্রকাশের পর ৩০ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা থাকবে।

এর আগে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (আরপিও) সংশোধন সংক্রান্ত আইনের খসড়া অনুমোদন দেয় ইসি; যা ভেটিং পর্যায়ে রয়েছে। এখন এর আলোকে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার সংক্রান্ত বিধিমালা তৈরি করেছে ইসি।
বিধির ৩ ধারায় বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যালটের পরিবর্তে ইভিএমের মাধ্যমে কোনো নির্বাচনী এলাকার সব বা আংশিক ভোটকেন্দ্রের ভোটগ্রহণ করা হবে। বিধি ৪(১)এ ইভিএম গঠন প্রক্রিয়ায় বলা হয়েছে, ব্যাটারি বা বিদ্যুৎচালিত একটি কন্ট্রোল ইউনিট ও ব্যালট ইউনিট সমন্বয়ে ইভিএম; যা আন্তঃসংযোগের মাধ্যমে কার্যকর থাকবে এবং কমিশনের অনুমোদিত ডিজাইন অনুযায়ী প্রবর্তন হবে। বিধি ৩(২) এ কন্ট্রোল ইউনিটে ডিসপ্লে স্ক্রিন, ডিসপ্লে সফটওয়্যারকে পরিচালনার জন্য বাটন, তথ্য ইনপুট দেয়ার জন্য নম্বর প্লেট, ইনবিল্ট ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার, ইনবিল্ট থারমাল প্রিন্টার, স্মার্ট কার্ড স্লট, এসিড কার্ড স্লট; এইচডিএমআই পোর্ট ছাড়াও ব্যালট ইউনিট সংযুক্ত করার জন্য থাকবে সকেট বা পোর্ট।

বিধির ৫ ধারায় বলা হয়েছে, ইভিএম কম্পিউটার ভিত্তিক, যাহা অপারেটিং সিস্টেমে চলবে, এটিকে সক্রিয় করতে থাকবে নিদিষ্ট পিন ও পাসওয়ার্ড এবং মেশিনের জন্য নির্ধারিত কার্ড ব্যবহার হবে। বৈধ ভোটারসংক্রান্তে এপ্লিকেশন সফটওয়্যার অন্তর্ভুক্ত থাকবে। আর ভোটের তথ্য সংরক্ষণের জন্য প্রতিটি ইভিএমের কন্ট্রোল ইউনিটে একটি স্মৃতি ভাণ্ডার থাকবে।
বিধির ১১(৪) বিধিতে বলা হয়েছে, ভোটদান শুরুর আগে উপস্থিত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এবং পোলিং এজেন্টরা ডেমো ভোট দিয়ে মেশিনটির কার্যকারিতা ও নিরপেক্ষতা যাচাই করবেন। এ ছাড়া অন্ধ কিংবা অক্ষম ভোটাররা প্রিজাইডিং অফিসারের সহায়তায় মনোনীত কোনো ব্যক্তিকে দিয়ে ভোটদান সম্পন্ন করা, যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে ইভিএমে ভোট বন্ধ হলে পুনরায় ত্রুটি সংস্কার করে এসডি কার্ড, অডিট কার্ড ও পোলিং কার্ড প্রবেশ করে ভোট দান শেষ করা, ভোটকেন্দ্রে হামলা হলে কন্ট্রোল ইউনিটে ব্যবহ্নত পোলিং কার্ডটি কন্ট্রোল ইউনিট থেকে সরিয়ে ফেলা এবং সমাধান হলে পুনরায় ভোট চালূ করা এবং ইভিএমের প্রয়োগে কোনো ধরনের নিয়মের ব্যত্যয় হলে অপরাধের জন্য ধারা ৯৩ অনুযায়ী শুধুমাত্র অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/355511