৯ অক্টোবর ২০১৮, মঙ্গলবার, ৮:১১

খুঁড়িয়ে চলার রোগ ধরেছে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ প্রকল্পে

তিন বছরের প্রকল্প শেষ করতে ১০ বছর সময় চাওয়া হয়েছে; ব্যয় বেড়েছে ২৫৮.২ কোটি টাকা

সরকারের সব প্রকল্পের একই দশা। কোনোটা স্থবির, কোনোটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম একনেক থেকে দ্রুত অনুমোদন হলেও বাস্তবায়নে গতি আসে না। জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পও খুঁড়িয়ে চলার রোগে আক্রান্ত হয়েছে।

নির্ধারিত তিন বছর তো দূরের কথা, বাড়তি পাঁচ বছরেও শেষ হচ্ছে না ৪৬টি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন নির্মাণ প্রকল্পগুলো। এখন প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় ১০ বছরে নেয়া হচ্ছে। ফলে ব্যয় ১৪৭ কোটি টাকা থেকে ২৫৮ কোটি ২০ লাখ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে এখন হয়েছে ৪১৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। জমি না পাওয়ার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন দেরি হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়। আজ মঙ্গলবার একনেক সভায় প্রকল্পটির সময় ও ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে বলে একনেক সূত্রে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ভৌত অবকাঠামোর যুগ্ম প্রধান জানান, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অগ্নিকাণ্ড থেকে জনগণের জান-মাল রক্ষা করার জন্য ফায়ার সার্ভিসের গুরুত্ব অনেক। প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রতিটি উপজেলায় কমপক্ষে একটি করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছেন। সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন এবং নিরাপদ দেশ গঠনে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের কার্যক্রমের ব্যাপ্তি বৃদ্ধির জন্য সুরক্ষা ও সেবা বিভাগ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ৫৫০টি উপজেলা বা জেলা সদরের বিভিন্ন স্থানে স্টেশন স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। প্রাথমিকভাবে নির্ধারিত ৫৫০টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের মধ্যে ডিসেম্বর ২০০৮ সাল পর্যন্ত ২০২টি নির্মাণ করা হয়েছিল। অবশিষ্ট ৩৪৮টি স্টেশন নির্মাণের জন্য চারটি প্রকল্প নেয়া হয়। ১৪৭ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৫টি স্টেশন স্থাপনের জন্য ২০১১ সালে একনেকে প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর নাগাদ এই সব স্টেশন নির্মাণকাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু অন্যান্য প্রকল্প থেকে এই প্রকল্পের আচরণ আলাদা হতে পারেনি।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, প্রথমে ব্যয় প্রায় ১৪ কোটি টাকা বাড়িয়ে বাস্তবায়ন মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হলো। কাজের কাজ কিছুই হলো না। এরপর আরো চার দফা প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত টেনে নেয়া হলো। এখন ২০১৮ সালের অক্টোবরে এসে আবারো সময় বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, আরো দেড় বছর সময় বাড়ালে ২০২০ সালের জুনে প্রকল্পটি সমাপ্ত করা সম্ভব হবে; তা-ও যদি ব্যয় ৪১৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা করা হয়।

পরিকল্পনা কমিশন থেকে পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ চলমান অবস্থায় জমি অধিগ্রহণজনিত জটিলতায় প্রকল্পের আওতাভুক্ত ২৫টি ফায়ার স্টেশনের মধ্যে ছয়টি স্টেশনের কাজ সমাপ্ত করতে পারেনি। নতুনভাবে আরো ২১টি স্টেশন অন্তর্ভুক্তি, রেট শিডিউল পরিবর্তন, বিভিন্ন টাইপের স্টেশনের ফ্লোর এরিয়া বৃদ্ধি, যন্ত্রপাতি ও জমির মূল্যবৃদ্ধির কারণে সময় বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সংস্থা। নতুনভাবে ২১টি স্টেশন অন্তর্ভুক্তিসহ প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনের বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রীর সম্মতি রয়েছে বলে ভৌত অবকাঠামো বিভাগ বলছে।
বাস্তবায়নকারী সংস্থার প্রতিনিধি জানান, প্রকল্পের মেয়াদে জমি অধিগ্রহণ করতে না পারা এবং শিডিউল রেট পরিবর্তনসহ আনুষঙ্গিক কারণে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি অর্জিত হয়নি। পাশাপাশি ২০০৮ সাল পর্যন্ত নির্মিত স্টেশনগুলোর অবস্থা এখনই জরাজীর্ণ ও ব্যবহার অনুপযোগী। সেগুলোকে সংস্কার করা প্রয়োজন।

পরিকল্পনা কমিশন বলছে, দেশের অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বর্তমান অবস্থায় ফায়ার সার্ভিসের প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। তারা বলছে, সংস্থার সময়ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা যথাযথভাবে প্রণয়ন ও সে মোতাবেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করাও জরুরি। স্টেশনগুলোর ক্যাটাগরি নির্ধারণের ভিত্তি হালনাগাদ নীতিমালা সংশোধিত ডিপিপিতে সংযুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি লগ-ফ্রেমও যথাযথভাবে প্রণয়ন করতে হবে।


http://www.dailynayadiganta.com/last-page/355512