৭ অক্টোবর ২০১৮, রবিবার, ৯:৫৯

শেয়ারবাজারে টাকার প্রবাহ কমছে

আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রভাবে আক্রান্ত হয়েছে দেশের শেয়ারবাজার। প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট প্রকট হয়েছে। এর প্রভাবে শেয়ারবাজারে লেনদেন কমে যাচ্ছে। অক্টোবরে ৫ কার্যদিবসে প্রতিদিন গড় লেনদেন হয়েছে ৫৭৫ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৭৪০ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরের চেয়ে অক্টোবরে গড় লেনদেন ১৬৫ কোটি টাকা কম। এসব নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন মনির হোসেন

শেয়ারবাজারে টাকার প্রবাহ কমছে। গত সপ্তাহের ৫ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) গড় লেনদেন ছিল ৫৭৫ কোটি টাকা। কিন্তু এর আগের মাস সেপ্টেম্বরের গড় লেনদেন ছিল ৭৪০ কোটি টাকা। এ ছাড়া সেপ্টেম্বরের প্রথম ৫ কার্যদিবসের গড় লেনদেন ছিল ৭৯০ কোটি টাকা। অর্থাৎ যে কোনো বিবেচনায় শেয়ারবাজারে লেনদেন কমে আসছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, বড় ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারবিমুখ হচ্ছেন। ফলে লেনদেন কমে আসছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, শেয়ারবাজারে মূল সমস্যা আস্থার সংকট। রাজনীতিতে অস্থিরতা শুরু হলে এ সংকট আরও বাড়তে পারে। এ ছাড়া অনেকেই আশঙ্কা করছেন, নির্বাচন সামনে রেখে বাজার থেকে পুঁজির একটি অংশ অনেকেই তুলে নিচ্ছেন। যে কারণে লেনদেন বেড়ে এখন আবার কমতে শুরু করেছে।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, বাজারে মূল সমস্যা হচ্ছে আস্থার সংকট। দীর্ঘদিন থেকে এ সংকট চলে আসছে। সুশাসনের অভাবে এ সংকট তৈরি হয়। এটি নিরসন না হলে বাজার টেকসই হবে না।
তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগকারীরা এ নিশ্চয়তা পেতে চায় যে, কারসাজির মাধ্যমে কেউ তার টাকা হাতিয়ে নিলে বিচার হবে। পাশাপাশি বাজারে ভালো শেয়ারের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। ভালো শেয়ার না থাকলে ভালো বিনিয়োগকারী আসবে না। বাজারের গভীরতার জন্য ভালো শেয়ার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন পর সেপ্টেম্বরে বাজারে তারল্য প্রবাহ বেড়েছিল। ওই সময়ে ২০ কার্যদিবসে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ১৪ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। প্রতিদিন গড় লেনদেন হয়েছিল ৭৪০ কোটি টাকা। এর আগে আগস্টে ১৯ কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ১১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা। প্রতিদিনের গড় লেনদেন ছিল ৬০৫ কোটি টাকা। এ হিসাবে সেপ্টেম্বরে গড় লেনদেন ১৩৫ কোটি টাকা বেড়েছিল। কিন্তু অক্টোবরের ৫ কার্যদিবসে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা। প্রতিদিনের গড় লেনদেন ৫৭৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ আলোচ্য সময়ে সেপ্টেম্বরের চেয়ে গড় লেনদেন ১৬৫ কোটি টাকা কম। আবার সেপ্টেম্বরের প্রথম ৫ কার্যদিবসে মোট লেনদেন ছিল ৩ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা। এ সময়ে প্রতিদিন গড় লেনদেন ছিল ৭৯০ কোটি টাকা। অর্থাৎ সেপ্টেম্বরের প্রথম ৫ কার্যদিবসের চেয়ে অক্টোবরের ৫ কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ২১৫ কোটি টাকা। এর মানে হল- যে কোনো বিবেচনায়ই বাজারে টাকার প্রবাহ কমছে।

আগামী ডিসেম্বরেই দেশে জাতীয় নির্বাচন। আর এ নির্বাচন সামনে রেখে সাম্প্রতিক সময়ে দুই জোটের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়েছে। এরপর থেকে বাজারে দরপতন শুরু হয়। একইভাবে কমছে লেনদেন। সূচক দু’দিন বৃদ্ধির পর আবার বড় ধরনের পতন আসবে, এ আশঙ্কায় বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। অর্থাৎ দীর্ঘমেয়াদে বাজার স্থিতিশীল হবে- বিনিয়োগকারীদের এমন আস্থা নেই। তবে গত সপ্তাহে ডিএসইর মূল্যসূচক ৭৫ পয়েন্ট বেড়েছে।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, বর্তমানে শেয়ারবাজার একেবারে অসুস্থ। কারণ দুর্বল জেড ক্যাটাগরির শেয়ারের দাম বাড়লেও মৌলভিত্তিসম্পন্ন শেয়ারের দাম বাড়ছে না। এটি স্থিতিশীল বাজারের জন্য কাম্য নয়।
তিনি আরও বলেন, রাজনীতি অসুস্থ, অর্থনীতি অসুস্থ সেখানে শেয়ারবাজার ভালো থাকতে পারে না। তার মতে, বাজারে বর্তমানে গ্যাম্বলিং হচ্ছে। গ্যাম্বলার যা চাইছে, ওই শেয়ারের দাম বাড়ছে, তারা চাইলে দাম কমছে।

আবু আহমেদ বলেন, বাজার আর স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। নির্বাচন নিয়ে সমঝোতা না হলে বাজার ঠিক হবে না। তবে দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে সমঝোতার ঘোষণা এলেই এ বাজার আর ধরে রাখা যাবে না। আর রাজনৈতিক সংকট না কাটলে বাজারে আরও পতন হবে বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা। গত ৪ অক্টোবর তা সামান্য বেড়ে তা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকায়। বিশেষত মন্দ শেয়ারের দাম বাড়ার কারণে বাজার মূলধন বেড়েছে। এটাকে কেউ ভালো চোখে দেখছেন না।

এদিকে গত সপ্তাহের শেষদিকে দৈনিকভিত্তিক লেনদেন কিছুটা বাড়লেও তা স্থায়ী হবে না বলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন। শেয়ার বিক্রি করে অনেকে পুঁজি সরিয়ে নিচ্ছেন বা হিসাবে অলস ফেলে রাখছেন। নতুন বিনিয়োগে যাচ্ছেন না। গত ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ৫১৬ কোটি টাকা, ১ অক্টোবর হয়েছে ৫৫০ কোটি টাকা, ২ অক্টোবর ৪৮৮ কোটি টাকা, ৩ অক্টোবর ৫৬৩ কোটি টাকা এবং ৪ অক্টোবর লেনদেন হয়েছে ৭৬০ কোটি টাকা।
অর্থনীতিবিদ ড. বাকী খলীলী যুগান্তরকে বলেন, বাজার একটু বাড়লেই বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। অর্থাৎ তারা খুব কম লাভে শেয়ার বিক্রি করছেন। এটাকে এক ধরনের আস্থার সংকট বলা যায়।

https://www.jugantor.com/todays-paper/economics/98118