৬ অক্টোবর ২০১৮, শনিবার, ১১:৫৭

দুই দেশের সচিব পর্যায়ের বৈঠকে চুক্তি সই হতে পারে

ট্রানজিট পণ্য অগ্রাধিকার পাবে দুই বন্দরেই

চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতীয় ট্রানজিট পণ্য দেশটির উত্তর-পূর্ব রাজ্যে পরিবহনের জন্য ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি)’ চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে দুই দেশ। খসড়া এসওপিতে পণ্য পরিবহনে সর্বোচ্চ ৩০ দিন বেঁধে দেয়ার প্রস্তাব রয়েছে। তবে বাংলাদেশ কাস্টমস বিশেষ বিবেচনায় সময় বাড়াতে পারবে। পণ্য বাংলাদেশে ঢোকার সময় লক থাকবে এবং ওই অবস্থায়ই বের হয়ে যাবে।
বিশেষ কারণ দেখা দিলে এসব পণ্য পরীক্ষা করতে পারবে বাংলাদেশ। এদিকে ট্রানজিট পণ্য পরিবহন সংক্রান্ত চুক্তিতে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরে স্থান ও অন্য সুবিধাদি থাকা সাপেক্ষে ভারতীয় পণ্য পরিবহনে অগ্রাধিকার পাবে। এ মাসের শেষদিকে ভারতে দুই দেশের সচিব পর্যায়ের বৈঠকে ‘অ্যাগ্রিমেন্ট অন দ্য ইউজ অব চট্টগ্রাম অ্যান্ড মোংলা পোর্ট ফর মুভমেন্ট অব গুডস টু অ্যান্ড ফ্রম ইন্ডিয়া বিটউইন বাংলাদেশ অ্যান্ড ইন্ডিয়া’ চুক্তি সই হওয়ার কথা। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানতে চাইলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুস সামাদ যুগান্তরকে বলেন, দিল্লিতে সচিব পর্যায়ের বৈঠকে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ট্রানজিট পণ্য পরিবহন চুক্তি সই হতে পারে। এসওপি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা নেই। এসওপি নিয়ে কাজ করছি। এটি শেষ হয়নি। তিনি বলেন, আমাদের সুযোগ থাকলে ট্রানজিট পণ্য অগ্রাধিকার পাবে। এতে অসুবিধা হবে না। চট্টগ্রাম বন্দর সম্প্রসারণ হচ্ছে, বে-টার্মিনাল হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতাও অনেক বেড়েছে। ওভার ক্লাউডেড হবে না।
সূত্র বলছে, দুটি বন্দর ব্যবহার করে ট্রানজিট পণ্য পরিবহন চুক্তি বাস্তবায়নের সুবিধার্থেই এসওপি হচ্ছে। এরই মধ্যে খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। মতামত দিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ (এনবিআর) সংশ্লিষ্টদের কাছে খসড়া পাঠানো হয়েছে। গত মাসে ‘অ্যাগ্রিমেন্ট অন দ্য ইউজ অব চট্টগ্রাম অ্যান্ড মোংলা পোর্ট ফর মুভমেন্ট অব গুডস টু অ্যান্ড ফ্রম ইন্ডিয়া বিটউইন বাংলাদেশ অ্যান্ড ইন্ডিয়া’ খসড়া অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।

ওইদিন মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেছিলেন, দুই দেশের মধ্যে চলমান সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক সুদৃঢ় করাই এর উদ্দেশ্য। বিআইডিব্লিউটিএ সূত্র বলছে, চলতি নৌবাণিজ্য প্রটোকলের (পিআইডব্লিউটিটি) আওতায় দুই দেশের মধ্যে নৌপথে পণ্য পরিবহন হচ্ছে। এছাড়া আখাউড়া-আগরতলার নৌ ও সড়কপথ ব্যবহার করে ভারত পণ্য ট্রান্সশিপমেন্ট করেছে। এবার চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর দিয়ে দেশটি তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পণ্য পরিবহনের সুযোগ পেতে যাচ্ছে।
খসড়া এসওপিতে দেখা গেছে, নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে পণ্য বাংলাদেশ দিয়ে ভারতে ঢুকবে। পণ্য বাংলাদেশ হয়ে ভারতে ঢোকার সময় ৩০ দিন ঠিক করা হয়েছে। খসড়া এসওপির ৪ নম্বর অনুচ্ছেদে প্রয়োজনে সময় বৃদ্ধির আবেদন করতে পারবে অপারেটর। যৌক্তিক কারণে বাংলাদেশ কাস্টমস তা অনুমোদন করবে।

পণ্য পরিবহনের পদ্ধতি সম্পর্কে অনুচ্ছেদ-২-এ বলা হয়েছে, ট্রানজিট পণ্যবাহী কনটেইনার বাংলাদেশে ঢোকার আগে ভারতের কাস্টমস তা সিল লক করবে। কাস্টমস সংক্রান্ত ঘোষণাপত্রে ওই সিল নম্বর উল্লেখ থাকবে। বাংলাদেশের কাস্টমস পরীক্ষা করে পণ্য ঢুকতে ও বের হওয়ার অনুমোদন দেবে। তবে যৌক্তিক কারণে কনটেইনার পরীক্ষা করতে পারবে বাংলাদেশ কাস্টমস। লক ভাঙা পাওয়া গেলে পণ্য পরীক্ষা করতে পারবে। একইভাবে কনটেইনারবিহীন পণ্য পরিবহনেও দুই দেশের পরীক্ষার সুযোগ থাকবে।

অগ্রাধিকার পাবে চট্টগ্রাম ও মোংলা : এদিকে খসড়া চুক্তিতে ১৪টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। এতে দুই বন্দরে সুযোগ ও সুবিধা থাকলে পণ্যকে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা বলা হয়েছে। ট্রানজিট পণ্যকে অবহেলা করা যাবে না। বন্দর ব্যবহারের জন্য বিদ্যমান হারে চার্জ পরিশোধ করবে ভারত। কোনো শুল্ক আরোপ করা হবে না। নৌমন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, দুই বন্দরে নির্দিষ্ট (ডেডিকেটেড) জেটি চেয়েছিল ভারত।

বাংলাদেশ তাতে সায় দেয়নি। জেনারেল অ্যাগ্রিমেন্ট অন ট্রাফিক অ্যান্ড ট্রেড (গ্যাট) ও বাংলাদেশের আইন ও বিধি মেনে এ ট্রানজিট হবে। খসড়ায় দেখা গেছে, যে চারটি রুটে ট্রানজিট পণ্য চলাচল করবে সেগুলো হচ্ছে- ১. দুই বন্দর থেকে আখাউড়া হয়ে আগরতলা ২. তামাবিল হয়ে ডাউকি ৩. শেওলা হয়ে সুতারকান্দি এবং ৪. সীমান্তপুর হয়ে বিবিরবাজার। ট্রানজিট পণ্য পরিবহন করবে বাংলাদেশি ট্রাক ও জাহাজ। এসব যানবাহনে ট্র্যাকিং সিস্টেম ব্যবহার করা হবে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/97774