৬ অক্টোবর ২০১৮, শনিবার, ১১:৫৩

ডাবল ডিজিটের মামলা হবে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে

বিশদলীয় জোটের নেতাকর্মীদের তালিকা ধরে মামলা হবে। মামলার সংখ্যা হবে ডাবল ডিজিটের। কারো বিরুদ্ধে ১০টির কম মামলা থাকবে না। এমন পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে মামলার সংখ্যাও তত বাড়তে থাকবে। একজন পুলিশ কর্মকর্তা সরাসরি এসব মামলা মনিটরিং করছেন বলে জানা গেছে। এ দিকে বেশির ভাগ নেতাকর্মীই এখন নজরদারিতে রয়েছেন। তাদের গতিবিধি লক্ষ করার পাশাপাশি মোবাইল ফোনে কার সাথে কি বলছেন সে ব্যাপারেও মনিটরিং চলছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কোনো ঘটনা ছাড়াই ইদানীং একের পর এক মামলা হচ্ছে। এমনকি এ মামলা থেকে বাদ যাননি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামও। সম্প্রতি হাতিরঝিলে একটি মামলা হয়। যেখানে বিএনপির মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর মিলিয়ে ৫৫ জন সিনিয়র নেতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। অথচ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যে স্পট উল্লেখ করা হয়েছে সে স্পটে ওই সময় কোনো ঘটনাই ঘটেনি। আর যাদের বিরুদ্ধে ওই মামলা দায়ের হয়েছে তারা ওই স্পটের আশপাশেও যাননি। বিএনপিসহ ২০ দলীয় নেতাকর্মীরা এসব মামলার নাম দিয়েছেন গায়েবি মামলা। এমনও ঘটনা ঘটেছে কোনো কোনো থানায় লাগাতার একের পর এক এভাবে মামলা দায়ের হয়ে যাচ্ছে। গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১২ দিনে এ থানায় ১১টি মামলা হয়েছে। যেসব মামলার ধরন একই। মিছিল, নাশকতা সৃষ্টি, জনমনে ভীতির সৃষ্টি, ককটেল নিক্ষেপ ইত্যাদি অভিযোগে এসব মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় যারা আসামি হচ্ছেন তারা সবাই স্থানীয় বিএনপি-জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মী। অভিযোগ উঠেছে, এসব মামলায় এজাহারভুক্ত আসামিদের বাসায় গিয়ে তদন্ত কর্মকর্তারা ফোন নম্বর দিয়ে এসে যোগাযোগ ও ম্যানেজ করতে বলে আসছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যে ১১টি মামলা হয়েছে তার সব মামলারই ঘটনার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিসহ বিএনপি ও জামায়াত সমর্থনে এবং সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে মিছিল করে এবং স্থানীয় জনগণকে হত্যা করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ককটেল নিক্ষেপ করা।
৩ সেপ্টেম্বর এসআই আনিসুল ইসলাম বাদি হয়ে একটি মামলা করেছেন। মামলা নম্বর ৩(০৯)১৮। ঘটনার স্থল মেডিক্যাল স্টাফ কোয়ার্টার, লালবাগ টাওয়ার। মামলায় আসামি করা হয়েছে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সফু, যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার শীর আশরাফ আলী আজমসহ বিএনপি-জামায়াতের ৩৮ জনসহ অজ্ঞাতনামাকে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হলেন এসএম জহিরুল আলম। ধারা ১৪৩/১৪৭/১৪৮/১৪৯/৩০৭/১০৯ পেনাল কোড তৎসহ ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক উপাদানাবলি আইন (সংশোধনী ২০০২) এর ৩/৪/৬।
পরদিন দায়ের করা মামলায় আগের মামলার আসামিসহ ৭৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলা নম্বর ৫(০৯)১৮। বাদি আ: মোনায়েম। ঘটনাস্থল আজিমপুর পুরাতন কবরস্থান। ধারা ১৪৩/১৪৭/১৪৮/১৪৯/৩৩২/৩৫৩/৩০৭/৪২৭/১০৯ পেনাল কোড তৎসহ ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক উপাদানাবলি আইন (সংশোধনী ২০০২) এর ৩/৪/৬।

এর পরদিন কাছাকাছি সময়ে দু’টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ৬(০৯)১৮ নম্বর মামলার ঘটনার সময় হলো ৫ সেপ্টেম্বর ১৪:১৫ মিনিট। ঘটনাস্থল নিউ পল্টন ইরাকি মাঠ। ৭(০৯)১৮ নম্বর মামলার ঘটনার সময় হলো ১৬:৪৫ মিনিট। ঘটনাস্থল খান মোহাম্মদ মসজিদ। দু’টি মামলার আসামিও একই ব্যক্তিরা। একটিতে ৩৩ জন অন্যটিতে ৩৪ জন এবং আরো ৭০-৮০ জন। ধারাও একই। ১৪৩/১৪৭/১৪৮/১৪৯/৩৫৩/৩০৭/১০৯ পেনাল কোড তৎসহ ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক উপাদানাবলি আইন (সংশোধনী ২০০২) এর ৩/৪/৬। ৬ নম্বর মামলা আসামির নামের তালিকায় তসাদ্দেক হোসেন বাবলুর নাম দু’বার (৩ নম্বর ও ২১ নম্বর) এসেছে। ৭ নম্বর মামলায় শামিমুল বারি ও (৫ নম্বর ও ২১ নম্বর) তসাদ্দেক হোসেন বাবলুর নাম দু’বার (৬ ও ৩৩ নম্বর) এসেছে। প্রথমটির বাদি এস এম জহিরুল আলম আর দ্বিতীয়টির বাদি মো: আবদুল আউয়াল। আবার প্রথমটির তদন্ত কর্মকর্তা হলেন মো: আবদুল আউয়াল আর দ্বিতীয়টির মো: মামুন হোসেন।
৮ সেপ্টেম্বর তপন কুমার দেবনাথ বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন, যার নম্বর ১০(০৯)১৮। ঘটনার সময় ৯:৩০ মিনিট, স্থান বেড়িবাঁধ লোহার ব্রিজ। ধারা ১৪৩/১৪৭/১৪৮/১৪৯/৩৫৩/৩০৭/১০৯ পেনাল কোড তৎসহ ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক উপাদানাবলি আইন (সংশোধনী ২০০২) এর ৩/৪/৬। আসামি ৩০ জন। তদন্ত কর্মকর্তা শেখ শাহ আলম।
১০ সেপ্টেম্বর আ: কাদের বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন, যার নম্বর ১৫(০৯)১৮। ঘটনার সময় ১১:৫৫ মিনিট, স্থান গোরে শহীদ মাজার। ধারা ১৪৩/১৪৭/১৪৮/১৪৯/৩৫৩/৩০৭/১০৯ পেনাল কোড তৎসহ ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক উপাদানাবলি আইনের (সংশোধনী ২০০২) ৩/৪/৬। আসামি ২২ জন। তদন্ত কর্মকর্তা মো: গোলাম রব্বানী।

১২ সেপ্টেম্বর ও দু’টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। একরামুল হুদা বাদি হয়ে মামলা দায়ের করা মামলা নম্বর ১৭(০৯)১৮। মামুন হোসেন বাদি হয়ে দায়ের করা মামলা নম্বর ১৯(০৯)১৮ ধারা একই। আসামি ২২ জন।
১৩ সেপ্টেম্বর দায়ের করা মামলার বাদি মোতালেব। নম্বর ২১(০৯)১৮। ঘটনাস্থল বেড়িবাঁধ মদিনা ট্রেডিং। আসামি ২৮ জন।
১৩ সেপ্টেম্বর দায়ের করা অপর মামলা বাদি লুৎফর রহমান। নম্বর ২৩(০৯)১৮। ঘটনাস্থল লালবাগ চৌরাস্তা এরাবিয়ান মাস্টার রেস্টুরেন্ট। আসামি ৩৭ জন।
১৫ সেপ্টেম্বর দায়ের করা মামলার বাদি আবু জাফর। নম্বর ২৮(০৯)১৮। ঘটনাস্থল আজিমপুর ছাপরা মসজিদ। আসামি ২৮ জন।
একটি সূত্র জানিয়েছে, এভাবেই এখন মামলা দায়ের হবে একের পর এক। নেতাকর্মীদের তালিকা সংগ্রহ করে সেই তালিকা ধরে মামলা দায়ের চলছে। কোনো নেতাকর্মীর বিরুদ্ধেই ১০টির কম মামলা থাকবে না। বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন, যাদের নেতাকর্মীদের সহজে গ্রেফতার করা যায়, হয়রানি করা যায় সে জন্যই এভাবে একের পর এক বানোয়াট মামলা হচ্ছে।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/354793