৬ অক্টোবর ২০১৮, শনিবার, ১১:৪৬

দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন কৌশলগত সমীকরণ ও বাংলাদেশ

অবলোকন

মাসুম খলিলী

বেশ আগে থেকেই বিশ্ব রাজনীতির অন্যতম ফোকাসে পরিণত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়া। এই প্রবণতা সম্প্রতি আরো জোরালো হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। একই সাথে দক্ষিণ এশিয়ায় বিশ্ব শক্তিগুলোর প্রভাব ও মৈত্রীর ধরনেও তাৎপর্যপূর্ণ কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের এবারের ভারত সফর নিয়ে আলোচনা ও বিশ্লেষণ বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে আগের তুলনায়। এর কেন্দ্রজুড়ে রয়েছে এস ৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। অত্যাধুনিক এ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা এর আগে মার্কিন মিত্রদের মধ্যে সৌদি আরব, কাতার ও তুরস্কও নেয়ার জন্য রাশিয়ার সাথে চুক্তি করেছে অথবা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এবার অত্যাধুনিক কিছু রুশ সমরাস্ত্রের পাশাপাশি এস ৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা সংগ্রহ করাটা পুতিনের দিল্লি সফরে মোদির প্রধান এজেন্ডা। আর এ ব্যাপারে আমেরিকার ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। ট্রাম্প প্রশাসন বলেছে, ‘এস ৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা রাশিয়ার কাছ থেকে সংগ্রহের চুক্তি করা হলে দেশটির আইন অনুসারে ভারত সরাসরি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে ।’

ইরানের কাছ থেকে তেল কেনা নিয়ে আগে থেকেই টানাপড়েন চলে আসছিল দিল্লির সাথে ওয়াশিংটনের। তেহরানের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য ওয়াশিংটন এই তেল নিষেধাজ্ঞা জোরালোভাবে কার্যকর করতে চাইছিল। কিন্তু ইরানের রেয়াতিমূল্যের তেল কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিল্লির জন্য অর্থনৈতিক ও আঞ্চলিক কৌশলগতÑ দুই বিবেচনাতেই ছিল বেশ মূল্যদায়ক। ফলে দিল্লি ইরানি তেল কেনার ব্যাপারে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মানতে অনীহা জানিয়ে আসছিল নানাভাবে। এরপর এস ৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা সংগ্রহের আলোচনা ভারতের পররাষ্ট্র কৌশলের তাৎপর্যপূর্ণ কোনো দিক পরিবর্তন কি না সে বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিয়েছে।

জুনিয়র জর্জ বুশ এবং এরপর বারাক ওবামার মার্কিন প্রশাসনের সময় যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে ‘এশিয়ার প্রধান কৌশলগত মিত্র’ হিসেবে গ্রহণ করার ঘোষণা দেয়। দুই প্রেসিডেন্টই দক্ষিণ এশিয়ার মোড়ল বা নেতা হিসেবে ভারতকে স্বীকৃতি দেন। এর ধারাবাহিকতায় দিল্লির সাথে ওয়াশিংটন ব্যাপকভিত্তিক সামরিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। উচ্চ প্রযুক্তির প্রতিরক্ষা সরঞ্জামাদি যৌথ উদ্যোগে উৎপাদন এবং প্রযুক্তি হস্তান্তরের একাধিক চুক্তি হয় দুই দেশের মধ্যে। আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কাসহ দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোতে পরিবর্তন বা নীতি কৌশলের ব্যাপারে দিল্লির আকাক্সক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে ওয়াশিংটন। এসব কৌশলের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে নিশানা করা হয় চীনকে।
চীনকে লক্ষ করে ভারতকে আঞ্চলিক মোড়ল ও ঢাল হিসেবে ব্যবহারের এই আমেরিকান কৌশলের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ভারতের মনস্তাত্ত্বিক শত্রু পাকিস্তানের সাথে মার্কিন বলয়ের দূরত্ব বৃদ্ধি পেয়ে চীনের সাথে তার নৈকট্য ও নির্ভরতার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। প্রতিরক্ষা ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরকে কেন্দ্র করে এমন এক পর্যায়ে উন্নীত হয় যে, এই অঞ্চলে ভারতের পক্ষে নৌ ও আকাশসীমায় প্রাধান্য বিস্তারে যে অনুকূল ভারসাম্য তৈরি হয়েছিল তা একের পর এক ভেঙে পড়তে থাকে। আফগানিস্তানে ভারতের উন্নয়ন ও কৌশলগত কার্যক্রম হুমকির মধ্যে পড়ে যায়। দক্ষিণ এশিয়ায় চীন এতটাই সক্রিয়তাবাদী নীতি গ্রহণ করে যে, শ্রীলঙ্কা মালদ্বীপ ও নেপাল একপর্যায়ে অনেকখানি ভারতের হাতছাড়া হয়ে যায়। ডোকলাম সঙ্কটকে কেন্দ্র করে ভুটান দুই প্রতিবেশীর সম্পর্কে ভারসাম্য আনার প্রয়োজন নিজের নিরাপত্তার জন্য তীব্রভাবে অনুভব করতে থাকে। রাশিয়ার সাথে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক সৃষ্টির পাশাপাশি আফগান সঙ্কট নিয়ে রাশিয়ার উদ্যোগে পাঁচটি প্রতিবেশী দেশের বিশেষ ভূমিকা সক্রিয় হয়ে ওঠে।

এ ধরনের একটি পরিস্থিতি ভারতকে কৌশলগতভাবে চাপে ফেলে দেয়। মোদি ও তার দল বিজেপি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বিশেষ সম্পর্ক তৈরি করে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য পদপ্রাপ্তি এবং পরমাণু প্রযুক্তি রফতানিকারক দেশগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্তির যে স্বপ্ন দেখেছিল তা বিফলে গেছে। রাশিয়ার নিরপেক্ষ ধরনের অবস্থান আর চীনের সক্রিয় বিরোধিতায় আবেগ উচ্ছ্বাস সৃষ্টির বাইরে কোনো ক্ষেত্রেই সেভাবে এগোতে পারেনি দিল্লি। এ অবস্থায় ভারতের নিরাপত্তা বিশ্লেষক থিংক ট্যাংকগুলো থেকে ‘পররাষ্ট্র কৌশলে ভারসাম্য’ আনার ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়া হতে থাকে।
এরপর ভারত রাশিয়ার প্রতিরক্ষাসামগ্রীর ওপর নির্ভরতা কমানোর কৌশলে রাস টেনে ধরে। উচ্চ প্রযুক্তির প্রতিরক্ষা সামগ্রী মস্কো থেকে সংগ্রহ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি হস্তান্তরের ব্যাপারেও মস্কো-দিল্লি চুক্তি স্বাক্ষর করা শুরু হয়। এখন পুতিনের দিল্লি সফর এবং এস ৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা সে সম্পর্কের একটি তাৎপর্যপূর্ণ উন্নয়ন বলেই মনে হচ্ছে।
রাশিয়ার সাথে ভারতের এই সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি দিল্লি-বেইজিং সম্পর্কেও কিছু তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় লক্ষ করা যায়। ডোকলাম সঙ্কট চলাকালে এবং সঙ্কট অবসানের পর নরেন্দ্র মোদি এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের মাঝে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এসব বৈঠকের ফলে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধংদেহী উত্তেজনা হ্রাস পায়। সাংহাই সহযোগিতা চুক্তি এবং এশীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংকসহ একাধিক অভিন্ন উদ্যোগের অংশীদার হিসেবে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা ও সহযোগিতার বিষয়টি নতুন করে দৃশ্যপটে চলে আসে। এর মধ্যে আমেরিকার ট্রাম্প প্রশাসনের রক্ষণশীল অভিভাষণ নীতি এবং বিশ্বায়নবিরোধী বাণিজ্য রক্ষণশীলতার কারণে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র দুই পক্ষের অবস্থান বিপরীতে চলে যায়।

এদিকে ভারতের সাথে মস্কো-বেইজিং নতুন মেরুকরণের প্রভাব লক্ষ করা যায় পাক-মার্কিন সম্পর্কে। পাকিস্তানে দৃশ্যত চীনের পছন্দের রাজনীতিবিদ নওয়াজ শরিফের সাথে সামরিক বাহিনীর বিরোধ ও দ্বন্দ্ব বেড়ে যায়। বিচারিক রায়কে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রিত্ব ও নিজ দলের প্রধানের পদ ছেড়ে দিতে হয় নওয়াজকে। ইমরান খান প্রবলভাবে চলে আসেন দৃশ্যপটে। ইমরানকে সেনাবাহিনীর পছন্দের রাজনীতিবিদ মনে করা হলেও বেইজিংয়ের এক ধরনের রিজার্ভেশন তার প্রতি রয়েছে বলে মনে হয়। এর ফলে ইসলামাবাদ-বেইজিং সম্পর্কে কিছুটা শীতলতা তৈরি হয়। চীন-পাক অর্থনৈতিক করিডোরে অর্থছাড় শ্লথ হয়ে পড়ে। এতে পাকিস্তানের অর্থনীতি চাপের মধ্যে পড়ে যায়। অন্য দিকে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্থান করার নীতির সাথে পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার প্রয়োজন অনুভব করেন ওয়াশিংটনের নীতিনির্ধারকেরা। একজন পাঠান রাজনীতিবিদ ইমরান খান এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হন। মনে করা হয়, আফগান পরিস্থিতিকে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে তিনি গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে পারেন। সঙ্ঘাত ও যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটিয়ে আফগান সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে ওয়াশিংটনের মতোই সমান স্বার্থ রয়েছে ইসলামাবাদের। এ হিসাব-নিকাশ যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের জটিলতা অবসানে এখনো দৃশ্যমান হয়ে ওঠেনি, তবে ভেতরের কাজ অগ্রসর হচ্ছে। এটাকে এগিয়ে নিতে হলে চীন-রাশিয়ার সাথে পাকিস্তানের বোঝাপড়ার বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। সম্ভবত এ জন্য পাকিস্তানের সেনাপ্রধান বেইজিং সফরে গেছেন। আর প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও রাষ্ট্রীয় সফরে চীন যাচ্ছেন।

দক্ষিণ এশিয়ায় মালদ্বীপ ও ভুটানের পর এবার নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বাংলাদেশে। ভুটানের নির্বাচনের প্রথম দফায় ভারতপন্থী, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বিদায় নিয়েছে। চূড়ান্ত পর্বের নির্বাচনে যে দুটি দল অংশ নিচ্ছে তাদের একটি সরকার গঠন করবে; অপরটি থাকবে বিরোধী দলে। এ দুটি দলের যেটিই ক্ষমতায় যাক না কেন চীনের সাথে সম্পর্ক তৈরি করার পথে এগোতে পারে ভুটান। অন্য দিকে মালদ্বীপে হয়েছে এর উল্টো। সেখানে চীনপন্থী আবদুল্লাহ ইয়ামিনের ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে। আগামী মাসে সে দেশে ক্ষমতা হস্তান্তরিত হওয়ার কথা। মালদ্বীপ ছোট দেশ হলেও সেটি একটি জটিল রাজনীতি ও হিসাব-নিকাশের দেশ। আর নতুন সরকার গঠনের পর সেখানকার পরিস্থিতি কোনো দিকে এগোবে, তা দেখা যাবে।

দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ২০১৮ সালে সর্বশেষ নির্বাচনের সূচি রয়েছে বাংলাদেশে। ডিসেম্বরের শেষার্ধে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০০৭ সালে বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক অচলাবস্থার পথ ধরে জরুরি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসে, তার পেছনে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ শক্তির সমঝোতা ও মেরুকরণের একটি সম্পর্ক রয়েছে। পাশ্চাত্য এবং ভারতের মিলিত সিদ্ধান্তের পরিণতিতে ক্ষমতার রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়ে বিএনপি এবং তার মিত্ররা। ২০১৪ সালে যখন দ্বিতীয় দফা ক্ষমতার পরিবর্তনের সময় আসে, তখন বাংলাদেশের ওপর ভারতের কর্তৃত্ব অনেক প্রবলভাবে দেখা যায়। দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র-ভারত কৌশলগত সমীকরণ তখনো তুঙ্গে। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন প্রত্যাশা করলেও দিল্লি আওয়ামী লীগকে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় রাখার ব্যাপারে ছিল অনমনীয়। দিল্লি তখন অবশ্য দুই বছরের মধ্যে আরেকটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ওয়াশিংটনকে। কিন্তু নির্বাচনের পর সরকার ক্ষমতাকে সুসংহত করলে হিসাব পাল্টে যায়। চীন বর্তমান সরকারের পাশে দাঁড়ায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমর্থন নিয়ে। দিল্লির নীতিনির্ধারকেরাও পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার ব্যাপারে সমর্থন দেন আওয়ামী লীগ সরকারকে। ঢাকায় সরকার চীনের অর্থনৈতিক স্বার্থ আর ভারতের অর্থনৈতিক-কৌশলগত উভয় স্বার্থ সংরক্ষণ করে চলে। যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত ইস্যুগুলোকে সরকার গুরুত্ব দিলেও অর্থনৈতিক স্বার্থ আদায়ে তেমন অগ্রগতি হয়নি। রাশিয়া এক্ষেত্রে বেশ সুবিধা ভোগ করে। সরকারের প্রথম মেয়াদে ডা: দীপুমনি পররাষ্ট্র মন্ত্রী থাকাকালেই পুতিনের সাথে বাণিজ্যিক ও অন্যবিধ সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। এ সময় রাশিয়া রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের বিরাট অঙ্কের কাজ পায়। রাশিয়ান কোম্পানি গ্যাজপ্রমকে জ্বালানি খাতের বিভিন্ন কন্ট্রাক্ট দেয়া হয়। পুতিনের সাথে এই ইতিবাচক সম্পর্ক বর্তমান সরকারের পুরো মেয়াদে অব্যাহত রয়েছে।

সরকারের তৃতীয় মেয়াদের বর্তমান পরিবর্তনক্রান্তিকালে দক্ষিণ এশিয়ায় বিশ্বশক্তিগুলোর প্রভাব ও মেরুকরণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্চাত্যকে দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুসারে, বাংলাদেশে বর্তমান ক্ষমতার পরিবর্তনে মুখ্য ভূমিকা থাকার কথা যুক্তরাষ্ট্রের। তারা ভারতের সাথে আলোচনা করে, নতুন নীতি ঠিক করার কথা। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো দুটি। এর একটি হলোÑ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে কি কার্যকরমুক্ত অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে এবং এক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করার জন্য কী কাজ করবে? আর এ ভূমিকায় কতটা প্রভাব থাকবে দিল্লির? দ্বিতীয় প্রশ্নটি হলোÑ বাংলাদেশের পরিবর্তনের সময়ে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্যে জোরালোভাবে প্রভাবশালী হয়ে ওঠা চীন-রাশিয়ার ভূমিকা কী হবে? এর সাথে রোহিঙ্গা ইস্যুর কোনো সম্পৃক্ততা থাকবে কি না।

যতদূর জানা যায়, সম্প্রতি শান্তি মিশনে বাংলাদেশের ভূমিকা নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের এক প্রস্তাবে স্পষ্ট দ্বিধাবিভক্তি সৃষ্টি হয়। এক পক্ষে থাকে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্স; অন্য পক্ষে থাকে রাশিয়া-চীন। ভারত নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য নয়। বর্তমান শাসনের ধারাবাহিকতার পক্ষে বিপক্ষে এ ধরনের কোনো অবস্থান তৈরি হলে ভারত কোন পক্ষ নেবে সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। শেষোক্ত পক্ষের নেতা রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের চলমান দিল্লি সফর এ ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলে কি না সেটিই দেখার বিষয়। দক্ষিণ এশিয়ার পুরনো মেরুকরণ থাকলে দিল্লির ভূমিকা এক রকম হবে; আর নতুন মেরুকরণ নির্ণায়ক হলে পরিস্থিতি হতে পারে ভিন্ন। এসব মেরুকরণের খেলায় বাংলাদেশ ও এর জনগণের ভাগ্য যেন পেন্ডুলামের মতোই দুলছে।হ
mrkmmb@gmail.com

http://www.dailynayadiganta.com/post-editorial/354669