৫ অক্টোবর ২০১৮, শুক্রবার, ১০:৫৯

যানজটে চরম ভোগান্তি

কোটা পুনর্বহালের দাবিতে সড়ক অবরোধ

সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এবং কোটা পুনর্বহালের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন ও বিক্ষোভ শুরু করেছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড। গত বুধবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে বিক্ষোভ শুরু গতকালও দিনভর বিক্ষোভ চলছিল।
এদিকে নগরীর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট শাহবাগে সড়ক অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ করে আন্দোলন করায় চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তিতে পড়েছে গোটা নগরবাসী। আন্দোলনের কারণে পুরো রাজধানীতে যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে। সব থেকে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের অসহায় স্বজনরা।
গতকাল সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে শাহবাগ মোড়ের চারপাশে বেরিকেড দিয়ে সড়ক অবরুদ্ধ করে রেখেছে কোটা পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনকারীরা। চারদিকের যান চালাচল ছিল পুরোপুরি বন্ধ। এতে সকল থেকেই নগরীর প্রতিটি সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। সকালের দিকে আন্দোলনকারীরা বেশ কয়েকটি গাড়িতে ভাংচুর চালিয়েছে বলেও প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছে শোনা গেছে।
এমনিতে গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল শেষ কর্মদিবস। যার কারণে রাস্তায় মানুষের চাপ ছিল অনেক বেশি। অবরোধের কারণে নির্দিষ্ট রুটের গাড়ি চলতে না পারায় সেই দুর্ভোগ স্বাভাবিকের তুলনায় বহুগুন বৃদ্ধি পেয়েছিল। প্রচন্ড গরমে বেশিরভাগ মানুষকে পায়ে হেটে এক জায়গায় থেকে অন্যত্রে যেতে হয়েছে। সড়ক অবরোধে ভোগন্তি হওয়ায় অফিসগামী মানুষের পাশপাশি সাধারণ মানুষের ভেতরে চরম ক্ষোভ লক্ষ্য করা গেছে। অসহায় নগরবাসীর দুর্ভোগ দেখার যেন কেউ ছিল না। পুলিশ সদস্যা কিছুক্ষণ পর পর আন্দোলনকারীদের রাস্তা থেকে সরে যেতে বললেও তারা দাবি না হওয়া পর্যন্ত রাস্তা অবরোধ করে রাখবে ঘোষণা দেয়।

সরেজমিনকালে দেখা গেছে, ৪০ থেকে ৫০ জন যুবক রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে। যে কোন ধরণের ঝামেলা এড়াতে রাস্তার চারপাশে বিপুল পরিমান পুলিশ মোতায়েন ছিল। অবরোধের কারণে মৎস্য ভবনের দিক থেকে আসা কোন গাড়ি শাহবাগ অতিক্রম করে কারওয়ান বাজার বা এলিফেন্ট রোডের দিকে যেতে পারছে না। একইভাবে শাহবাগ মোড় হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়গামী সড়কে যেতে পারে নাই। সায়েন্স ল্যাব মোড় থেকে আসা কিছু গাড়ি শাহবাগ মোড়ে এসে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালের সামনে দিয়ে রূপসী বাংলা মোড় হয়ে কাকরাইল ঘুরে মতিঝিলের দিকে যাচ্ছে। এ ছাড়া বেশিরভাগ গাড়ি অনেক দূর ঘুরে পান্থপথ ও কারওয়ান বাজার হয়ে বাংলামোটর দিয়ে মতিঝিলের দিকে যায়।

ক্ষুব্ধ যাত্রী রফিকুল্লাহ জানান, দেশটা মগের মুল্লকু হয়ে গেছে। সাধারণ মানুষের কোন দাম নেই। যে যার ইচ্ছে মতো রাস্তা ঘাট বন্ধ করে মিটিং মিছিল করছে। এ দেশে বেঁচে থাকাটাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ফারহানা নামে এক চিকিৎসক বলেন, দেড় ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকেও গন্তব্যে যেতে পারছি না। এভাবে একটি দেশ চলতে পারে না।
কুমিল্লা থেকে বারডেমে আসা রোগীর স্বজন আতিকুল্লাহ বলেন, যানজটের কারণে তিন ঘন্টার পথ আসতে ৬ ঘন্টার বেশি সময় লেগেছে। অন্যদিকে রোগীকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স বিনা বাধায় যেতে দিলেও স্বজনদের পায়ে হেটে হাসপাতালে আসতে হয়েছে।
শরীয়তপুর থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা স্বজন সেলিম হোসেন বলেন, রাস্তায় গাড়ি চলে না বললেই হয়। সারাদিন বসে হাসপাতালে হাসপাতালে আসতে হয়েছে। এভাবে ঘোষণা ছাড়া রাস্তা দখল করে রাখলে রোগী হাসপাতালে আনার আগেই মারা যাবে।

শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান বলেন, আমরা আন্দোলনকারীদের রাস্তা ছেড়ে দিতে বলেছি। বিষয়টি নিয়ে তাদের সাথে কয়েকবার কথা হয়েছে। পুলিশ যানচলাচল স্বাভাবিক করতে সব ধরণের চেষ্টা করছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, বুধবার রাত থেকে তারা এখনও অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের সরে যাওয়ার জন্য বোঝানো হচ্ছে। তিনি বলেন, যান চলাচল বন্ধ থাকলেও এ পর্যন্ত কোনো গোলযোগ হয়নি।
উল্লেখ্য, চলতি বছর ফেব্রæয়ারিতে সব ধরণের চাকরিতে কোটা সংস্কার করে মেধাবীদের অগ্রাধিকার দিতে আন্দোলনে নামেন সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা। পরে মন্ত্রী সভায় দীর্ঘ আলোচনার পর কোটা বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এদিকে কোটা বাতিলের সরকারি ঘোষণা আসার পর থেকেই আন্দোলনে নামে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল ইসলাম প্রিন্স বলেন, কোটা পুনর্বাহলের দাবিতে আইনি পদক্ষেপ গ্রহনসহ আগামী শনিবার বিকেল ৩টায় মহাসমাবেশ ডাকা হয়েছে।

https://www.dailyinqilab.com/article/157554