৫ অক্টোবর ২০১৮, শুক্রবার, ১০:৫৪

মংলা বন্দরের ট্রানজিট সুবিধা নিয়ে প্রথম নেপালে পণ্য রফতানি শুরু

চীনের ২৫ হাজার টন সার নিয়ে এমভি ঠেয়ো টোকজের নোঙর

বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার সুবিধার আওতায় প্রথম মংলা বন্দর ব্যবহার করে নেপালে প্রথম পণ্য রফতানি শুরু হয়েছে। চীনের একটি বন্দর থেকে ২৫ হাজার ৩৫০ মেট্রিকটন সার নিয়ে গতকাল মংলা বন্দরে নোঙর ফেলে সেন্ট ভিনসেন পতাকাবাহী ‘এম ভি ঠেয়ো টোকজ’ নামে একটি বিদেশী জাহাজ। মংলা বন্দরের ট্রানজিট সুবিধা নিয়ে ওই জাহাজের পণ্য নেপালে যাবে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র নিশ্চিত করে। মংলা বন্দরের হারবাড়িয়ার ৭ নম্বর নোঙরে সারবাহী ওই বিদেশী জাহাজটি অবস্থান করছে।

ভারত, ভুটান ও নেপাল ট্রানজিট (বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার) সুবিধায় মংলা বন্দর ব্যবহার করবে, এমন নীতিগত সিদ্ধান্ত আগে থেকে আছে। বাকি ছিল এর আনুষ্ঠানিকতা। দেরিতে হলেও তা বাস্তবায়ন হয়েছে। চীনের একটি বন্দর থেকে ২৫ হাজার ৩৫০ টন সার নিয়ে গতকাল মংলা বন্দরে নোঙর ফেলেছে সেন্ট ভিনসেন পতাকাবাহী এ মভি ঠিয়ো টোকজ। মংলা বন্দরের ট্রানজিট সুবিধা নিয়ে ওই জাহাজেরই পণ্যগুলো নেপালে যাবে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিদেশ থেকে আসা এসার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের মেসার্স লিটমন শিপিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপক সৈয়দ মুর্তজা আলী বাপ্পী বলেন, ‘এম ভি ঠেয়ো টোকজ’ থেকে প্রাথমিকভাবে ছোট লাইটারেজে সার খালাস করে তা যশোরের নওয়াপাড়ায় আনা হবে। সেখান থেকে বেনাপোল রুটের মাধ্যমে ভারতের বীরগঞ্জ কাস্টমস কিয়ারেন্স হয়ে মালবাহী ট্রেনে করে নেপালে যাবে এ সার। নেপালের সাথে ট্রানজিট চুক্তির পর মংলা বন্দরের মাধ্যমে এই প্রথম পণ্য রফতানি হচ্ছে বলে জানান সৈয়দ মুর্তজা আলী বাপ্পী।

তিনি আরো বলেন, গতকাল বিকেলের পালা থেকে ওই জাহাজে শ্রমিক বুকিং করে সার খালাস কাজ শুরু হবে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জাহাজের পুরো পণ্য খালাস শেষ হবে বলেও জানান তিনি। গত দেড় মাস আগে চীন থেকে এ জাহাজটি মংলা বন্দরের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। জাহাজে করে আনা নেপাল সরকারের এ সারের আমদানি মূল্য এক কোটি ১১ লাখ ৫৪ হাজার এবং তার রফতানি মূল্য এক কোটি ৩২ লাখ ৩৭ হাজার ৭৭০ টাকা বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক আমদানিকারক আমিনুর রশিদ।
বাংলাদেশের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান দেশ ট্রেডিং করপোরেশনের এ মালিক আরো জানান, চীন থেকে নেপালের জন্য প্রতি হাজার টন ৪৪০ ডলার দিয়ে ঢালাই সার আমদানি করে তা স্থানীয়ভাবে মোড়কজাত করে ৫২২ দশমিক ২০ ডলারে প্রতি হাজার টন সার রফতানি করা হচ্ছে। মোট ২৫ হাজার ৩৫০ টন সার আমদানি হয়েছে।

বন্দর সূত্র জানায়, ভারত, নেপাল ও ভুটান ট্রানজিট সুবিধায় এ বন্দর ব্যবহারে অনেক আগ থেকেই প্রস্তাব দিয়েছে সরকারকে। এরপর প্রতিবেশী এসব রাষ্ট্রকে মংলা বন্দর ব্যবহারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর পর থেকে মংলা বন্দর দিয়ে ট্রানজিট সুবিধার মাধ্যমে পণ্য পরিবহনের কাজ বৃহস্পতিবার থেকে দৃশ্যমান হয়।
সূত্র জানায়, ট্রানজিটের বিপরীতে কোনো শুল্ক আদায় করার সুযোগ নেই। তবে এই পণ্য পরিবহনের অবকাঠামো ব্যবহার, তা রণাবেণ, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ইত্যাদির সেবার জন্য মাশুল আদায় করা যাবে। বার্সেলনা কনভেনশনের ধারা ৩ এ ট্রানজিটের অধিকার দিতে কোনো ধরনের অর্থ গ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে তবে ট্রানজিট পরিচালনা ব্যয় নির্ধারণ করে তা আদায় করার সুযোগ রেখেছে। গ্যাটের পঞ্চম ধারার ৩ থেকে ৬ উপধারার শর্তানুসারে দুই ভাগে মাশুল আদায় করা যায়।
পণ্য প্রবেশ ও বহির্গমন পয়েন্টে বিভিন্ন সেবার বিনিময়ে মাশুল ও সার্ভিস চার্জ আদায় এবং ট্রানজিট পণ্যবাহী যানবাহনের ওপর নিবন্ধন ফি, শুল্ক ও কর, টোল ইত্যাদি অথবা মাশুল আদায় করা যায়। স্থানীয় পরিবহন ও ট্রানজিট পরিবহনের জন্য এসব ফি একই হারে প্রযোজ্য হবে।
তবে বাংলাদেশের শুল্ক আইনে ট্রানজিট বাবদ ফি ও সার্ভিস চার্জ আরোপ-সংক্রান্ত ধারা ১২৯ অর্থবিল ২০১১-১২ দ্বারা বাতিল করা হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশে ট্রানজিট মাশুল আরোপের আপাতত কোনো সুযোগ নেই।

এ দিকে মংলা বন্দরের পণ্য আমদানিকারক ব্যবসায়ী এইচ এম দুলাল ও সৈয়দ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ভারত, নেপাল ও ভুটান মংলা বন্দরের ট্রানজিটের (বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার) ব্যবহারের মাধ্যমে এ বন্দরে পণ্য খালাস- বোঝাইয়ের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে। একই সাথে জাহাজের সংখ্যাও বাড়বে। এ জন্য এ অঞ্চলে কর্মসংস্থান যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি অর্থনৈতিক অবস্থার অনেক উন্নতি হবে।’
তারা আরো বলেন, ‘ট্রানজিটের ফলে মংলা বন্দরের ওপর চাপ বাড়বে। এ জন্য বন্দরের সক্ষমতা আরো বৃদ্ধি করতে হবে। বন্দরের ফেয়ারওয়েতে ড্রেজিংয়ের প্রয়োজন, জেটিতেও আমাদের আট মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারে তার জন্য ড্রেজিং করতে হবে। ড্রেজিং না করার কারণে বেশির ভাগ জাহাজের অর্ধেক পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস করতে হয়। জাহাজের পুরো পণ্য মংলা বন্দরে খালাস করতে পারে- সে ক্ষেত্রে অবিলম্বে ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।’
এ দিকে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর ফারুক হাসান, মংলা বন্দরের হারবার মাস্টার কমান্ডার দ্রুবুল হুদা মংলা বন্দরের হারবাড়িয়ার ৭ নম্বর নোঙরে সেন্ট ভিনসেন পতাকাবাহী ‘এম ভি ঠেয়ো টোকজ’ নামে একটি বিদেশী জাহাজ নোঙর করেছে এমন তথ্য তারা জানেন না বলে জানান। তবে হারবার কন্ট্রোলে এদিন দুপুরে দায়িত্বরত কর্মকর্তা জানান, সকাল সোয়া ৯টায় সারবোঝাই সেন্ট ভিনসেন পতাকাবাহী ‘এম ভি ঠেয়ো টোকজ’ নামের জাহাজটি নোঙর করেছে।


http://www.dailynayadiganta.com/last-page/354538