৫ অক্টোবর ২০১৮, শুক্রবার, ১০:৫২

ভোটের আগে ইসিতে পদোন্নতি-নিয়োগের তোড়জোড়

জাতীয় নির্বাচনের আগে তিন স্তরে ৭৫ জন কর্মকর্তার পদোন্নতি দেয়ার সুপারিশ করেছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিয়োগ, পদোন্নতি, প্রশাসনিক সংস্কারসংক্রান্তকমিটি। এতে দশটি আঞ্চলিক কর্মকর্তা পদে ৯ জন, উপসচিব বা সমমান পদে ২৯ জন ও সিনিয়র সহকারী সচিব বা সমমান পদে ৩৭ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। এ সুপারিশ কমিশনের অনুমোদনের পর শিগগিরই তা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হবে।

এ দিকে ইসির অর্গানোগ্রাম (জনবল কাঠামো) সংশোধন করে নতুন ২ হাজার পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। এর আওতায় আগামী নির্বাচনের আগেই ৫১৭ জন সহকারী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হবে। তাদের উপজেলা সহকারী নির্বাচন কর্মকর্তার দায়িত্ব দেয়া হবে। এর আগে ২০০৫ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের আমলে ৩২৩ কর্মকর্তার নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন ইসি ওই নিয়োগ বাতিল করে পুনরায় নিয়োগকৃতদের পরীক্ষা নেয়। এতে অনেকেই বাদ পড়ে। জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ঠিক এক মাস আগে এমন নিয়োগ নতুনভাবে বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এমন ঘটনা অস্বাভাবিক। এই নিয়োগে হয় টাকার খেলা, এই নিয়োগে হয় দলীয়করণ। এখন যে পরিস্থিতি যদি দলীয় এত লোক নিয়োগ দেয়া হয় তবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আশা তো আরো সুদূর পরাহত হয়ে যাবে। এসব কোনোভাবেই কাম্য নয়।

নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার গতকাল নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন সবারই পদোন্নতি হচ্ছে। আমি দেখতে পাই পত্রিকায়, জনপ্রশাসনে পদোন্নতি হচ্ছে, পুলিশে পদোন্নতি হচ্ছে, কিংবা তারা পদোন্নতি চাচ্ছেন। তো নির্বাচন কমিশনেও পদোন্নতির একটা ঢেউ লেগেছে। মাহবুব তালুকদার জানান, কমিশনে বেশ কিছু নতুন পদ সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রায় ২ হাজার জনবল বেড়ে যাচ্ছে। কমিশনের বর্তমান জনবল ৩ হাজার। তবে তারা সবাই অফিসার নয়। এর মধ্যে উপজেলা সহকারী নির্বাচন কর্মকর্তা পদে ৫১৭ জনকে নিয়োগ দেয়া হবে। এই কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়া হলে নির্বাচন কমিশনের সমতা আরো বেড়ে যাবে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে মন্তব্য করেছেন মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, ৭৫ জন কর্মকর্তার পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে। এই তালিকা কমিশনে যাবে। কমিশন সভা অনুমোদন দিলে তারা পদোন্নতি পাবে। পদোন্নতির তালিকায় থাকা দশজন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার মধ্যে নয়জকে পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে। তারা সবাই ৪র্থ গ্রেড অনুসারে বেতনভাতা ও সুবিধা পাবেন। উপসচিব পদে ৫ম গ্রেডে ২৯ জন এবং সিনিয়র সহকারী সচিব পদে ৬ষ্ঠ গ্রেডে ৩৭ জনকে পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে। এই নির্বাচন কমিশনার আরো জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই তাদের পাওয়া যাবে। এরা একটা শক্তিশালী জনবল হিসেবে ভূমিকা পালন করবে বলে আমি আশা করি। তাদের পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হবে কি না তা ঠিক জানি না। সেটা সময় এলে দেখা যাবে কতটুকু কী করা যায়।
তাদের পর্যাপ্ত ট্রেনিং দিতে হবে, তাদের কার্যপরিধি কী হবে? আগামী নির্বাচনে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের মধ্যে কতজন বা কী সংখ্যক রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হবে সে বিষয়ে কমিশন এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানান তিনি।

চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বিতর্কিত নিয়োগ পাওয়া অনেক কর্মকর্তাকে পরে বাদ দেয়া হয়েছে। নির্বাচনের আগে এমন নিয়োগ বিতর্ক সৃষ্টি করবে কি নাÑ জানতে চাইলে মাহবুব তালুকদার বলেন, যাদের পরীক্ষা নিয়ে বাদ দেয়া হয়েছে তাদের বাদ দেয়া হয়েছে। এটা অনেক আগের ব্যাপার। পুরনো ইতিহাসের কথা বলতে পারব না। আমরা আপাতত পদোন্নতি দিচ্ছি। নিয়োগের ব্যাপারটা পরে আসবে। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের সভাপতিত্বে গত বুধবার ‘নিয়োগ, পদন্নোতি, প্রশাসনিক সংস্কার ও পুনর্বিন্যাস এবং দতা উন্নয়ন কমিটি’র সভা হয়।

গতকাল সভার সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের জানান মাহবুব তালুকদার। উল্লেখ্য, এর আগে ২০০৫ সালে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে জাতীয় নির্বাচনের আগে ৩২৭ জন থানা/উপজেলা নির্বাচন অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়। বিতর্কিত ওই নিয়োগের পর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ৩০৩ জন কর্মকর্তার পরীক্ষা গ্রহণ করে এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন। এই পরীক্ষায় ৮৫ জন কর্মকর্তা অকৃতকার্য হওয়ায় তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়। পরে ২০০৯ সালে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায়ে তারা চাকরি ফিরে পায়। ২০১০ সালে পুনরায় চাকরিতে যোগদান করে ওই কর্মকর্তারা।

এ ছাড়াও নির্বাচন কমিশনের ১০টি আঞ্চলিক কর্মকর্তা পদে ৯ জনকে পদোন্নতির সুপারিশ করেছে কমিটি। এর মধ্যে ৭ জনই ইসির যুগ্ম সচিব পদে কর্মরত রয়েছেন। বাকি দু’জন আঞ্চলিক কর্মকর্তার পদে চলতি দায়িত্বে রয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী, ইসির যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেতে হলে অন্তত দুই বছর আঞ্চলিক কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করতে হয়। কিন্তু বর্তমান কমিশন ওই নিয়ম উপো করে আটজনকে যুগ্ম সচিব পদে চলতি দায়িত্ব দেয়। এর মধ্যে একজন অবসরে গেছেন। বর্তমানে যে ৯ জনকে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার পদে পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে তারা হলেনÑ (জ্যেষ্ঠতা তালিকা অনুযায়ী) খোন্দকার মিজানুর রহমান (সচিবালয়), মো: মুজিবুর রহমান খান (আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, বরিশাল), রকিব উদ্দিন মণ্ডল (আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, ঢাকা), নুরুজ্জামান তালুকদার (আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, ফরিদপুর), মো: আবুল কাশেম (সচিবালয়), মোস্তফা ফারুক (মহাপরিচালক, নির্বাচন প্রশিণ ইনস্টিটিউট), ফরহাদ আহম্মদ খান (সচিবালয়), মো: আব্দুল বাতেন (পরিচালক, এনআইডি), ও মো: এস এম আসাদুজ্জামান (পরিচালক, জনসংযোগ)। একজন আঞ্চলিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে মামলা চলমান থাকায় তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়নি।


http://www.dailynayadiganta.com/last-page/354543