৪ অক্টোবর ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১১:৫২

লোডশেডিং যন্ত্রণা

ভ্যাপসা গরমে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ মানুষ। শহরাঞ্চলে বিদ্যুতের অবস্থা কিছুটা ভাল হলেও গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিদ্যুত একবার গেলে আর আসতে চায়না। শহর-নগর থেকে গ্রাম-জনপদ সর্বত্রই বিদ্যুৎ সঙ্কট। সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, দেশে সর্বোচ্চ পরিমাণ বিদ্যুত উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু তারপরেও লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় মানুষ অতিষ্ঠ। ভুক্তভোগিদের অভিযোগ, স্থানীয় ও জাতীয়ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন কয়েক গুণ বাড়লেও বিতরণ ব্যবস্থায় ত্রু টির কারনে গ্রাহক পর্যায়ে সুষ্ঠু ও নিরবিচ্ছিন্ন সরবারহ নিশ্চিত করা যায়নি। এ কারণে দেশের কোনো কোনো জেলায় গড়ে দিনে ৮ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ থাকে না। আবার প্রত্যন্ত বা গ্রামাঞ্চলে দিনে বিদ্যুৎ একবার গেলে সারাদিন আর আসে না। কোথাও কোথাও দিনের বেলায় বিদ্যুতের দেখাই মেলে না। অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যুৎ বিভাগের কতিপয় অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারী ট্রান্সফরমার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি বিকল হওয়ার সুযোগে ‘বিদ্যুৎ বাণিজ্য’ করছে গ্রাহকদের জিম্মি করে রাখে। বাধ্য হয়ে তখন চাঁদা তুলে ট্রান্সফরমার ও বিদ্যুতের যন্ত্রপাতি মেরামত করা হয়। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের উপরি আয়ের অন্যতম উৎস্য এটি। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা নিয়ে আমাদের ব্যুরো অফিস ও জেলা সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদন-
টেকসই বিতরণ ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি বরিশালে
বরিশাল ব্যুরো জানায়, বরিশাল ও খুলনা বিভাগসহ ফরিদপুর অঞ্চলের ২১টি জেলা নিয়ে বিদ্যুতের পশ্চিম জোনের বিতরণ কোম্পানি গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বিতরণ ও বাণিজ্যিক কর্মকান্ড পরিচালনা করলেও একটি টেকসই বিতরণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি। অথচ এসময়ে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে প্রায় চারগুণ। স্থানীয় ও জাতীয়ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনও দ্বিগুণ অতিক্রম করলেও বিতরণ ব্যবস্থার ত্রু টির কারণে গ্রাহক পর্যায়ে সুষ্ঠু ও নিরবচ্ছিন্ন সরবারহ নিশ্চিত করা যায়নি। এমনকি এলক্ষ্যে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান থাকলেও তার কাজ নির্ধারিত সময়ের অনেক পরেও শেষ হবার সম্ভাবনা নেই। অভিযোগ রয়েছে, এসব প্রকল্পের কাজ এতটাই ধীর গতিতে এগুচ্ছে যে, তা শেষ করতে গিয়ে আবার পুনর্বাসনের কাজে হাত দিতে হতে পারে।
বিদ্যুৎ ঘাটতি না থাকলেও ভঙ্গুর বিতরণ ব্যবস্থায় নিয়মিত লোডশেডিং-এ বরিশাল মহানগরীসহ দক্ষিণাঞ্চলের অনেক এলাকার স্বাভাবিক জনজীবন অনেকটা বিপর্যস্ত। মহানগরীর কাশীপুর ৩৩/১১ কেভি সাব-স্টেশনের পাওয়ার ট্রান্সফর্মার ওভারলোড হয়ে পড়ায় নগরীর ৮টি ফিডারে সান্ধ্য পীক আওয়ারে প্রতিদিন লোডশেডিং করতে হচ্ছে। এছাড়াও ঝালকাঠীর নলছিটির ৩৩/১১ কেভি সাব-স্টেশনের পাওয়ার ট্রান্সফর্মারেরও একই অবস্থা। কোন কোন সাব-স্টেশনের অবস্থা এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ যে কখনো বড় মাপের ফ্যান চালিয়ে, আবার কখনো পানি ঢেলে ঐসব পাওয়ার ট্রান্সফর্মারের তাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে।

বরিশাল মহানগরীসহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের কয়েক হাজার ১১/০.৪কেভি ট্রান্সফর্মারের প্রায় সবগুলোই অরক্ষিত। এসব ট্রান্সফর্মারের ৮০ভাগই ওভারলোডেড। ড্রপ আউটগুলো ত্রুটিপূর্ণ। ট্রান্সফর্মারের বহির্গামী লাইনে কোন এমসিপি নেই। ফলে প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বহু মূল্যবান ট্রান্সফর্মার। উপরন্তু কোন এলাকায় একটি ট্রান্সফর্মার ক্ষতিগ্রস্থ হলে তা পরিবর্তনেও ২৪ ঘণ্টা থেকে ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত সময় লাগছে। ফলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ ক্রমশ সীমা ছাড়াচ্ছ। অনেক বড় এলাকা নিয়ে একেকটি ফিডারে যেকোন ধরনের ত্রুটি বিশাল জনগোষ্ঠীকেই দুর্ভোগে ফেলছে। এসব ১১ কেভি ফিডারে ব্রেকার বসানোর কথা থাকলেও তা হয়নি। বরিশাল মহানগরীর কয়েকটি ফিডারে কিছু ব্রেকার বসানো হলেও তার বেশিরভাগই অকার্যকর।

বগুড়ায় চরম ভোগান্তি
বগুড়া অফিস জানায়, অব্যাহত লোডশেডিং কারনে চরম ভোগান্তিতে বগুড়ার গ্রাহকরা। পুরো জেলায় ৩শ মেগাওয়াট চাহিদার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ যোগান থাকায় এই ভোগান্তির কারন বলে জানা গেছে।
বগুড়া বিদ্য‚ত বিতরণ ও সঞ্চালন কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুল আলম চৌধুরীর মতে চাহিদা মাফিক সরবরাহ নিশ্চিত না হওয়া পযর্ন্ত ভোগান্তির আপাতত নিরসন সম্ভব নয়। এদিকে সরকারিভাবে বিদ্যুতের উন্নতির কথা প্রচার করা হলেও কেন এই ভোগান্তি তা বুঝতে পারছেনা গ্রাহকরা। বগুড়া শহরের নবাববাড়ী সড়কের হোমিও চেম্বারের ডা, আর এ এম তারেকের অভিমত আমরা বিদ্যুত গ্রাহকরা মাস শেষে যেহেতু বিল দেই, তাই আমরা নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ চাই, অন্য কিছু বুঝতে চাইনা।
যশোরে মাঝে মধ্যে লোডশেডিং

যশোর ব্যুরো জানায় ঃ যশোর অঞ্চলে মাঝেমধ্যে বিদ্যুতের লোডশেডিং হচ্ছে। চৌগাছা, ঝিকরগাছা, নওয়াপাড়া ও শার্শাসহ যশোর অঞ্চলের বিভিন্নস্থানে দিনে ও রাতে কমব্শেী লোডশেডিং হয় বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। পল্লী বিদ্যুতের অবস্থাও প্রায় একই। তবে যশোর অঞ্চলের ওজোপাডিকোর তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ শহিদুল আলম দাবি করেছেন, জাতীয় গ্রীড থেকে চাহিদানুযায়ী বিদ্যুতের সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। আপাতত যশোর অঞ্চলে কোথাও কোন লোডশেডিং নেই। তাহলে মাঝেমধ্যেই বিদ্যুৎ থাকছে না কেন-এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডিস্ট্রিবিউশনে ত্রু টি ও মেইনটেনেন্স এর জন্য সাময়িব অসুবিধা কোথাও হতে পারে। তার হিসাবানুযায়ী যশোর গ্রীডে পিক আওয়ারে ১৫৬ মেগাওয়াট এবং অফ পিক আওয়ারে ১১২ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। যশোর পল্লী বিদ্যুতের চাহিদা ৯০ মেগাওয়াট। সবটাই পাওয়া যাচ্ছে বলে কর্মকর্তারা দাবি করেছেন। যশোরের শার্শা উপজেলার শালকোনা গ্রামের কৃষক বাবুল আকতার জানান, গ্রামে মাঝেমধ্যে কিছু সময় বিদ্যুৎ থাকে না।
নোয়াখালীতে পৌনে ৫লাখ পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহকের সীমাহীন দুর্ভোগ

নোয়াখালী ব্যুরো ঃ নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন পৌনে পাঁচ লক্ষাধিক গ্রাহক সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাচ্ছে। দফায় দফায় লোডশেডিং নিত্যকার বিষয়। এতে করে দৈনিক গড়ে ৭/৮ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকেনা। মেঘনা বেষ্টিত হাতিয়া ব্যতীত নোয়াখালীর ৮টি উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের কার্যক্রম রয়েছে। কিন্তু বিদ্যুতের লাগাতার লোডশেডিং এর কারনে জনজীবন অতিষ্ট। কয়েকটি উপজেলায় কয়েকজন বিদ্যুৎ গ্রাহক অভিযোগ করেন যে, সকাল থেকে গভীর রাত পর্য্যন্ত দফায় দফায় লোডশেডিং হচ্ছে। স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে অভিযোগ জানালেও কাজ হচ্ছেনা । পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন নোয়াখালীর ৬টি পৌরসভা এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কিছুটা সন্তোষজনক হলেও পল্লী অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ নাজুক পর্যায়ে পৌছেছে ।

একদিকে ভাদ্র মাসের তীব্র তাপদাহ অন্যদিকে লাগাতার লোডশেডিং এর কারনে নাগরিক জীবন অচল হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে সন্ধার পর স্কুল কলেজ পড়–য়াদের অধ্যয়নে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে । এবিষয়ে নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইনকিলাবকে জানান, জাতীয় গ্রীডে মাঝেমধ্যে সমস্যা দেখা দিলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্ন ঘটে । এছাড়া কেন্দ্র থেকে পল্লী বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা হয় । এতে করে আমাদের করার কিছু থাকেনা।

https://www.dailyinqilab.com/article/157314