৪ অক্টোবর ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১১:৫১

বাড়ছে গ্যাসের দাম

তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির কারণে পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধির যুক্তিতে দুটি ছাড়া পাঁচ খাতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল বিতরণ কোম্পানিগুলো। ওই প্রস্তাবের ওপর গত জুনে গণশুনানির আয়োজন করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। শুনানি-পরবর্তী মূল্যায়ন শেষে নতুন মূল্যহার ঘোষণার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে কমিশন। বাণিজ্যিক খাতে ব্যবহ্যত গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব না থাকার পরও নতুন মূল্যহারে এ গ্যাসের দামও বাড়ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।

প্রস্তুতকৃত নতুন মূল্যহারে সব ধরনের গ্যাসের দাম গড়ে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ছে বলে জানা গেছে। দাম বৃদ্ধির তালিকায় বাণিজ্যিক খাতের গ্যাসও রয়েছে। এ খাতে গ্যাসের দাম ২৬ থেকে ২৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। সেক্ষেত্রে বাণিজ্যিক খাতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম বিদ্যমান ১৭ থেকে বেড়ে ২০ টাকা ছাড়িয়ে যাবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, নতুন মূল্যহার এরই মধ্যে প্রস্তুত করেছে বিইআরসি। এলএনজি আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক (এসডি) ও ভ্যাট মওকুফ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এসআরও হাতে পেলেই নতুন মূল্যহার ঘোষণা করবে কমিশন। দু-তিন সপ্তাহ ধরে এনবি আরের ওই প্রজ্ঞাপনের অপেক্ষায় রয়েছে বিইআরসি।
জানতে চাইলে বিইআরসির সদস্য (গ্যাস) মো. আব্দুল আজিজ খান বলেন, এনবি আরের প্রজ্ঞাপন হাতে পেলেই আমরা নতুন মূল্যহার ঘোষণা করব। তবে কবে সেটা হবে তা নিশ্চিত নয়। বাণিজ্যিক খাতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনই কোনো মন্তব্য নয়। মূল্যহার ঘোষণা হলেই সব জানা যাবে।

সর্বশেষ ২০১৭ সালের মার্চ ও জুনে দুই দফায় গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। সেবার আগের মূল্যের চেয়ে গড়ে ২২ শতাংশ বাড়ানো হয় গ্যাসের দাম। আবাসিক ও বাণিজ্যিক খাতে ব্যবহ্যত গ্যাসের দাম সবচেয়ে বেশি বাড়ানো হয়। বর্তমানে আবাসিক মিটারযুক্ত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৯ টাকা ১০ পয়সা। মিটারহীন সিঙ্গেল বার্নারে গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয় ৭৫০ ও ডাবল বার্নারে ৮০০ টাকা। আর বাণিজ্যিক খাতে ব্যবহূত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১১ টাকা ৩৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে করা হয় ১৭ টাকা চার পয়সা। সিএনজির পর এটাই গ্যাসের সর্বোচ্চ দাম।
গ্যাস সংকট দূর করতে কাতার থেকে ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস আমদানি করছে সরকার। যদিও বর্তমানে এ খাত থেকে গ্রাহক প্রান্তে দেয়া হচ্ছে মাত্র ৩০ কোটি ঘনফুট। দেশীয় গ্যাসের চেয়ে এ গ্যাস ব্যয়বহুল হওয়ায় চলতি বছরের মার্চে (নতুন মূল্যহার ঘোষণার নয় মাসের মাথায়) আবারো গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয় বিতরণ কোম্পানিগুলো। ওই প্রস্তাবে সব ধরনের গ্যাসের দাম গড়ে আরো ৭৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করে তারা। তবে আবাসিক ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে কোনো প্রস্তাবই করেনি বিতরণ কোম্পানিগুলো।

এদিকে নতুন মূল্যহার ঘোষণার আগেই শিল্প খাতে বিদ্যমান মূল্যহারের চেয়ে ৮০ শতাংশ বেশি মূল্য ধরে নতুন সংযোগের জন্য চাহিদাপত্র (ডিমান্ড নোট) বিতরণ করছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিসহ বেশ কয়েকটি বিতরণ কোম্পানি। যদিও এ খাতে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবই ছিল ৯৩ শতাংশ। বর্তমানে শিল্প খাতের প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৭ টাকা ৭৬ পয়সা। কিন্তু চাহিদাপত্র ইস্যু করা হচ্ছে প্রতি ইউনিটের জন্য ১৪ টাকা হারে।
উল্লেখ্য, প্রতি ঘনমিটার এলএনজির ক্রয়মূল্য দেশী গ্যাসের চেয়ে তিন থেকে চার গুণ বেশি। প্রতি ইউনিট এলএনজির আমদানি ব্যয় ৩২-৪০ টাকা। যেখানে দেশীয় প্রতি ইউনিট গ্যাসের উৎপাদন ব্যয় ৪ টাকা ৬৩ পয়সা।

https://www.dailyinqilab.com/article/157330