৪ অক্টোবর ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:২৩

দুই হল ছাত্রলীগের গুলিতে রণক্ষেত্র জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল ও আল বেরুনী হলের ছাত্রলীগের মধ্যে গত মঙ্গলবার গভীর রাতে তুমুল সংঘর্ষ, গোলাগুলি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় রণক্ষেত্র হয়ে পড়ে গোটা এলাকা। এক ছাত্রীকে ইভটিজিংয়ের ঘটনা নিয়ে এ সংঘর্ষ হয়। এ সময় দুইপক্ষ আগ্নেয়াস্ত্র, রামদা, রড, রিভলভার, হকিস্টিক, ইট, ভাঙ্গা বোতল ব্যবহার করে এবং গুলি ছোড়ে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল চত্বর ও মুন্নি সরণিতে রাত ১২টা থেকে একটা পর্যন্ত সংঘর্ষে প্রায় ৫০ শিক্ষার্থী আহত হন। ফলে পুরো ক্যাম্পাস রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় চলমান ভর্তিপরীক্ষায় অংশ নিতে ক্যাম্পাসে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।

এ দিকে এ সংঘর্ষের ঘটনায় মীর মশাররফ হোসেন হলকে দায়ী করে আল বেরুনী হল। এর বিচারের দাবিতে গতকাল সকাল সাড়ে ৮টায় জীববিজ্ঞান অনুষদ ভবনে তালা দেয় তারা। আল বেরুনী হল ছাত্রলীগের দাবি, তাদের ওপর ‘সন্ত্রাসী’র মতো বর্বরোচিত হামলা হয়েছে কিন্তু প্রশাসন কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেনি। তাই এর সঠিক তদন্ত ও বিচারের দাবিতে ভর্তি পরীক্ষা প্রতিহত করছে তারা। গতকাল জীববিজ্ঞান অনুষদের ২০১৮-১৯ সেশনের চলমান ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু জীববিজ্ঞান অনুষদে আল বেরুনী হল ছাত্রলীগ সে বিভাগে তালা দেয়ায় ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন আটকে পড়ে। এ ছাড়াও দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ভর্তি পরীক্ষার্থীদের পুরনো কলা ও বিজনেস অনুষদ ভবনে ঢুকতে না দিয়ে পথ বন্ধ করে দেয় আল বেরুনী হল ছাত্রলীগ। ফলে পরীক্ষা নেয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। ফলে সারা দেশ থেকে আগত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা ভীতি ও ভোগান্তির শিকার হন।
এ পর্যায়ে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি জুয়েল রানা ও সম্পাদক আবু সুফিয়ান চঞ্চলকে সাথে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। আল বেরুনী হলের নেতাদের সাথে দফায় দফায় আলোচনা করে এবং আক্রমণকারীদের শনাক্ত করে দ্রুত বিচারের আশ্বাস দেন তিনি। দীর্ঘক্ষণ বাগি¦তণ্ডার পর ভিসির আশ্বাসে পরীক্ষার্থীদের পথ ছেড়ে দেয় আল বেরুনী হল ছাত্রলীগ। কিন্তু এরই মধ্যে পরীক্ষার নির্ধারিত সময় আধা ঘণ্টা পার হয়ে যায়। ফলে শিডিউল ভঙ্গ করে ৯টার পরীক্ষা সাড়ে ৯টায় অনুষ্ঠিত হয়। এ কারণে সারা দিনের পাঁচটি শিডিউলের পরীক্ষাই আধা ঘণ্টা করে পিছিয়ে যায়।

জানা যায়, মঙ্গলবার রাত ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌরঙ্গী মোড়ে অবস্থিত শাখা ছাত্রলীগের ভর্তি পরীক্ষা বিষয়ক ‘শেখ জামাল তথ্য সহায়তা কেন্দ্র’ থেকে মীর মশাররফ হোসেন হলের ৪৫ ব্যাচের দুই ছাত্রলীগকর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে উদ্দেশ্য করে ইভটিজিং করেন। ছাত্রীটি মুঠোফোনে আল বেরুনী হলে থাকা তার বন্ধুদের জানালে আল বেরুনী হলের ৪৬ ব্যাচের কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী ঘটনাস্থলে এসে ওই দুই ছাত্রলীগ কর্মীর কাছে ইভটিজিংয়ের কারণ জানতে চান। কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে আল বেরুনী হলের শিার্থীরা ওই দু’জনকে মারধর করেন। এতে মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্ররা আহত হন। তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও প্রক্টরিয়াল বডি সেখানে যায়। কিন্তু তারা কোনো সমাধান না দেয়ায় উত্তেজনা আরো বাড়তে থাকে। রাত ১২টায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ করতে যায়। এ বিষয়ে মীর মশাররফ হোসেন হল গেটের এক নিরাপত্তা প্রহারী বলেন, রাতে ৪০ জন ছাত্রলীগকর্মী উত্তেজিত কথাবার্তা বলতে বলতে ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প এবং লাঠি নিয়ে বের হন। পরে রাত ১২টায় আল বেরুনী হলের সামনে আল বেরুনী হল ছাত্রলীগ এবং মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। এ সময় গুলি, ইট ছোড়াছুড়িতে মুন্নি চত্বর, চৌরঙ্গী, মেডিক্যাল সেন্টার এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুই পক্ষের মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্র, রামদা, রড, রিভলবার, হকিস্টিক, ইট, বোতলভাঙা ব্যবহার ও দুই রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। ফলে দুই হলের প্রায় ৫০ জন ছাত্র আহত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন বলে জানান চিকিৎসক আবু জাফর মো: সালেহ। আহত ৫০ জনের মধ্যে ৪৫ জনই আল বেরুনী হলের। গুরুতর আহত ৯ জনকে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য এনাম মেডিক্যালে পাঠানো হয়। এ সময় মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগ কমীরা গুলি ছোড়ে বলে জানা যায়। মীর মশাররফ হোসেন হলের শিার্থী খালিদের বাইকে আগুন ধরিয়ে দেয় আল বেরুনী হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা। পরে রাত ১টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ও শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি-সেক্রেটারির হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি জুয়েল রানা বলেন, সাধারণ একটা বিষয়কে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের এমন অভ্যন্তরীণ কোন্দল কখনো প্রত্যাশিত নয়। যারা আমাদের অর্জন ও কর্মকে মলিন করছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তসাপেক্ষে সাংগঠনিক শাস্তি হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও বিচার করবে। এ বিষয়ে দুই হলের সাথে বসে বিষয়টি সুরাহা ও অভিযুক্তদের শাস্তির আওতায় আনার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/354253