৪ অক্টোবর ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:১৬

নির্বাচন সামনে রেখে সন্ত্রাসীরা তৎপর

রাজনৈতিক নেতাদেরকে হুমকি

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তৎপর হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসীরা। দেশের বাইরে অবস্থানকারী সন্ত্রাসীরাও এরই মধ্যে দেশের খোঁজখবর নেয়া শুরু করেছে। কেউ কেউ দেশে আসারও চিন্তা করছে। অনেক রাজনৈতিক নেতাকে তারা নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ মিলেছে। কোনো কোনো সন্ত্রাসী নেতাদের ব্ল্যাকমেইল করছে বলেও অভিযোগ আছে। নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করার ব্যাপারে কেউ কেউ দরকষাকষি করছে বলেও জানা গেছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র জানায়, রাজধানীর শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অনেকেই দেশের বাইরে অবস্থান করছে। যারা এখনো সক্রিয় এবং তাদের সহযোগীরা বিভিন্ন এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। বিদেশে থাকলেও তাদের কলকাঠিতেই বিভিন্ন সময় খুন-খারাবি ঘটছে। দেশের বাইরে বসেই তারা কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করছে। গত ১৪ আগস্ট এমনই এক সন্ত্রাসী মাজহারুল ইসলাম স্বপন ওরফে ঘাতক স্বপন ঢাকা মহানগর পুলিশের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় নিহত হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা জানান, হত্যাসহ বেশ কিছু মামলার আসামি ঘাতক স্বপন রাজধানীর খিলগাঁও, রামপুরা, বাড্ডা ও আশপাশের এলাকায় দীর্ঘ দিন অপরাধ কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল। ১০ বছরের বেশি সময় সে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছিল। ঢাকায় আসার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সে নিহত হয়। তার নির্দেশে ঘটত খুন, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ। স্থানীয় সূত্র জানায়, ঘাতক স্বপন নিহত হলেও তার সহযোগীরা এখনো সক্রিয়। দীর্ঘ দিন তার হয়ে যেসব সন্ত্রাসী কাজ করেছে তারা এলাকায় এখনো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

রাজধানীর শীর্ষ সন্ত্রাসীদের একজন নবী হোসেন বিদেশে বসেই ঢাকার খোঁজখবর নিচ্ছে। সম্প্রতি সে বেশ কয়েকজন নেতার সাথে নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছে। নির্বাচন সামনে রেখে নবী হোসেন দেশে আসতে চায় বলে জানা যায়। সে নিজেই কয়েকজনকে এমন বার্তা দিয়েছে।
অন্য এক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দেশের বাইরে অবস্থান করে রাজনৈতিক নেতাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছে। অনেকের সাথে কথাও বলছে। সে কোনো কোনো নেতাকে ব্লাকমেইল করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজধানীর রমনা, মগবাজার, রামপুরাসহ কয়েকটি এলাকায় জিসানের অনুসারী কিছু সন্ত্রাসী রয়েছে। বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সে নিয়মিত চাঁদা নিয়ে আসছে।
সম্প্রতি বাড্ডা এলাকায় এক চেয়ারম্যানের ভাই হত্যা মামলার কয়েকজন আসামি সক্রিয় হয়ে উঠেছে নির্বাচন ঘিরে। ওই হত্যা মামলা থেকে তারা জামিন নিয়ে এখন প্রকাশ্যে ঘুরছে। তারা ওই এলাকার আতঙ্ক হয়ে উঠেছে। সরকারদলীয় একজন চেয়ারম্যানের ভাইকে হত্যা করার পরও তাদের গ্রেফতার হতে হয়নি। যে কারণে এলাকার মানুষ এখন তাদের আতঙ্কে ভুগছে।
সম্প্রতি একজন সন্ত্রাসী কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বিদেশে পালিয়েছেন। ওই সন্ত্রাসী এখন বিদেশে অবস্থান করে দল গোছাচ্ছে। তার সহযোগীরা বেশ তৎপর হয়ে উঠেছে। ওই সন্ত্রাসী রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানা যায়।

এ দিকে রাজধানীর শ্যামপুর এলাকার এক সন্ত্রাসী গডফাদার নিজেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। এর আগে বেশ কয়েকবার সে গ্রেফতার হয়েছে। খুনের মামলায় সে কারাগারেও ছিল। এখন সে এলাকায় বেশ তৎপর। তার বাহিনীর লোকজনকেও সে চাঙ্গা করে তুলছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচন ঘনিয়ে এলে কিছু মানুষের অপতৎরতা বেড়ে যায়। তবে তাদের প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ মিডিয়া সেলের ডিসি মাসুদুর রহমান জানান, যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত তারা যেখানেই অবস্থান করুক তাদের প্রতি নজরদারি থাকে। তাদের অপতৎরতা বন্ধ করতে সব ধরনের কর্মকৌশলও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/354237